আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
প্রতিবেশী দেশ ভারতের এক সময়ের আঞ্চলিক শাসিত প্রদেশ জম্মু-কাশ্মী। ৫ আগস্ট পূর্ণ হলো অঞ্চলটি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে নেওয়ার দু বছর ।
২০১৯ সালের এ দিন নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) সরকার ৩৭০ এবং ৩৫ (এ) ধারা প্রত্যাহার করে। এ নিয়ে প্রাদেশিক সরকার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখালেও কেন্দ্রীয় সরকার অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেয় জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চল। এর আগে আঞ্চলিক সরকার, উগ্র সন্ত্রাস বাদী গোষ্ঠী ও কেন্দ্র সরকার নিয়ে চলতো নানান বিরোধ। তবে কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে সেখানে সাংবিধানিক আইন বাস্তবায়ন, রাজনৈতিক উদ্যোগ, সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা নিশ্চিত করণ এবং অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়ন শুর করেন।
জম্মু ও কাশ্মীরের কেন্দ্রশাসিতের দু’ বছর উপলক্ষে সরকারি ওই প্রতিবেদনের চম্বুক অংশ তুলে ধরা হলো।
প্রশাসনিক উদ্যোগ:
জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধান গ্রহণ এবং প্রয়োগ ৮৯০ টি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় আইন বাস্তবায়ন করছে কেন্দ্র সরকার। যার মধ্যে রয়েছে প্রগতিশীল আইন যেমন তফসিলি জাতি এবং তপশিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইন-১৯৫৪, হুইসেল ব্লোয়ার্স সুরক্ষা আইন -২০১৪ , ন্যাশনাল কমিশন ফর সাফাই করমচারিস অ্যাক্ট-১৯৯৩ , তফসিলি উপজাতি এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী বনবাসী (বন অধিকারের স্বীকৃতি) আইন-২০০৭, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন আইন, এবং শিশুদের বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার আইন-২০০৯।
এসব তথ্য এবং পরিসংখ্যান গুলি যথেষ্ট স্পষ্ট যে এ উপত্যকায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তার সব দিকের পরিস্থিতি তার ইতিহাসে আগের চেয়ে ভালো। কম সহিংসতা এবং আরও অগ্রগতি যা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ভবিষ্যতের জন্য একটি আশাবাদী চিহ্ন হিসাবে অব্যাহত রয়েছে।
অর্থনৈতিক উদ্যোগ :
ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ২০২১ সালের ১৭ মার্চে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য ১,০ ৮৬ ২১ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করেন। যার মধ্যে ৩৯,৮১৭ কোটি টাকা মূলধন ব্যয়ের জন্য এবং ৬৮৮০৪ কোটি টাকা রাজস্ব ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ করা হয় । বরাদ্দের ৩৭% অর্থ নির্ধারিত বাজেটের উন্নয়ন ও অবকাঠামো প্রকল্পে ব্যয় করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক উদ্যোগ :
২০১৯ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত প্রথমবারের মতো ব্লক ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (বিডিসি) নির্বাচন। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো বিডিসি এবং ২০ টি ডিস্ট্রিক্ট ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (ডিডিসি) নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। যার ফলে ওই অঞ্চলের তৃণমূল উন্নয়নের বীজ বপন করা হয় বলে মনে করা হয়।
শুধু তাই নয় (২০২১ সাল) গত ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রী মোদীর ডাকা সমস্ত দলীয় বৈঠক (এপিএম) এবং জম্মু ও কাশ্মীরের সকল প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপস্থিতিতে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে গণতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পুন: প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছে। এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ ছাড়া এ অঞ্চলের ডিলিমিটেশন কমিশন জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে গেলো ৬ জুলাই একটি বৈঠক করে। কমিশন এর আগে থেকে সকল জেলা প্রশাসকের কাছে ইউটি (ইউনিয়ন ট্যারিটরি) সংক্রান্ত রিপোর্ট চেয়েছিল।
নিরাপত্তা উদ্যোগ :
ধারা ৩৭০ বাতিলের আগে আঞ্চলিক শাসিত ২০১৮ সালের ২৯ জুন থেকে ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৪০২ দিন জম্মু ও কাশ্মীরে ৪৫৫ টি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছিল। আর ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট থেকে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৪০২ দিনে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ২১১ টি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে।
বর্তমানে উগ্র সন্ত্রাসী সংগঠনে স্থানীয় যুবকদের সম্পৃক্ততা ৪০ % হ্রাস পেয়েছে। ৫ আগস্টের পর কাশ্মীর উপত্যকায় সহিংসতার ঘটনা উল্লেখ যোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
২০১৯ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ১৫ জুলাই, পর্যন্ত ১৩৬ জন সন্ত্রাসীকে নির্মূল করা হয়েছিল। এ সময়ে কাশ্মীরে ৫১ টি গ্রেনেড হামলা হয়েছে। আর ২০২০ সালে এ সংখ্যাটি মাত্র ২১ এ নেমে এসেছে।
ট্রান্সজেন্ডার পার্সনস ও নারী অধিকার :
জম্মু -কাশ্মীরের বাইরে বিবাহ করা মহিলাদের সম্পত্তি, অন্যান্য সমস্ত অধিকার সম্পূর্ণ সুরক্ষিত করা হয়। এ ধরনের সকল নারী এখন জমিতে পূর্ণ এবং আইনগত অধিকার বজায় রেখেছে সরকার। জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন
জেএন্ডকে গ্রান্ট অফ ডোমিসাইল সার্টিফিকেট (প্রক্রিয়া) বিধি-২০২০ -এর একটি ধারা যুক্ত করেছে। যার ফলে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বাইরে বিবাহিত কোনো নেটিভ মহিলার পত্নীকে একটি আবাসন সনদপত্রের জন্য আবেদন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ধারা ৩৭০ বাতিল করার সাথে সাথে ট্রান্সজেন্ডার পার্সনস (অধিকার সুরক্ষা) অ্যাক্ট- ২০১৯ (ট্রান্সজেন্ডার পার্সনস অ্যাক্ট ‘) যা হিজড়া ব্যক্তিদের পরিচয় স্বীকৃতি দেয়। এসব বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে ১০৮ ,৬২১ কোটি টাকার বাজেট প্রবর্তন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ বাজেটের ৩৭% উন্নয়ন এবং অবকাঠামো প্রকল্পে ব্যয় করা হচ্ছে । ইতিমধ্যে শ্রীনগরের খনমোহে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRD0) কর্তৃক ৫০০ শয্যার কোভিড -১৯ সুবিধা স্থাপন করা হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরে বিদ্যুৎ পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য ডেলিনা বারামুল্লায় ১১৮৯১ কোটি টাকার ১৭ টি বিদ্যুৎ প্রকল্পের ই-উদ্বোধন করেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা।
স্কুল শিক্ষার সংস্কার এবং বৃত্তিমূলক কোর্সের উন্নয়নের জন্য এ অঞ্চল জুড়ে স্কুলগুলিতে ৬০৭ টি ভোকেশনাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-