টিকটকের ভয়ংকার ফাঁদে তরুণ প্রজন্ম

আবুল কাসেম আশরাফ •


নতুন প্রজন্মই আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এক‌টি দেশের তরুণ প্রজন্মকে যদি সঠিক পথে পরিচালিত করা যায়,তাহলে দেশ ও জাতিকে উন্নয়নের সর্বাগ্রে আরোহণ করা সম্ভব।

অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, জাতির কর্ণধাররা আজ সস্তা খ্যাতি লাভের নেশায় বুঁদ হয়ে টিকটিকের দিকে ঝুঁকেছে অবিরাম গতিতে।সামাজিক যোগাযোগ মাধমে এখন নতুন আতঙ্কের নাম টিকটিকি ও লাইকী। বিনোদনের পরিবর্তে যেটি সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।তরুণ প্রজন্ম অন্ধকার জগতে ডুবে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। নিজের ব্যঙ্গাত্মক মুখভঙ্গি, নাটক, সিনেমা, রাজনৈতিক বক্তব্য, গানের সাথে ঠোঁট মিলানো নিয়ে এসব ভিডিও নির্মাণ করা হয়। এটি নিছক বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এখন। এতে প্রধান্য পায় যৌনতা ও অশ্লীলতা। এছাড়া ট্রল, সহিংসতা সহ নানা রকমের কুরুচিপূর্ণ কন্টেন্ট থাকে।

বিনোদনের কেন্দ্র গুলো যেন টিকটকারদের আস্তানা। অনেক সময় রাস্তা ও ফুটপাতেও চলে এর শুটিং। টিকটকের ফিতনা খুব দ্রুততর সময়ে গ্রাস করছে যুব সমাজকে। টিকটিক অ্যাপস দ্বারা নির্মিত ভিডিও দেখে তরুণ সমাজ কলুষিত করছে তাদের চরিত্রকে। চুল ও জামা -কাপড়ের নোংরা স্টাইল, উদ্ভট কথাবার্তা, আচার -ব্যবহারে উগ্রতা, দেহের অশ্লীল অঙ্গিভঙ্গি যুব সমাজ এইসব ভিডিও থেকে শিখছে।
বিভিন্ন আলোচিত ও সমালোচিত ব্যক্তিদের বক্তব্যকে কাট করে বিদ্রুপাত্মক ভিডিও ভাইরাল করে চরমভাবে মজা নিচ্ছে।সুস্থ – সংস্কৃতি ও রুচি বিবর্জিত ফান ভি‌ডিওর মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা ক্রমশ রসাতলে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ।এতে বহু তরুণ সমাজ কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে অপরাধ মূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে, হয়ে উঠছে সহিংস, বেড়েই চলছে যত্রতত্র ইভটিজিং ও ধর্ষণের মত গর্হিত কর্মকান্ড। নিজেকে জনপ্রিয় করতে গ্রহণ করছে অনেক রকম ছল চাতুরী।

টিকটক অ্যাপস ব্যবহারকারীদের উপর দীর্ঘ মেয়াদী গবেষণায় দেখা গেছে, এর ধারাবাহিক ব্যবহারের ফলে মানুষের মাঝে মানসিক ভারসাম্যহীনতা, স্বভাব ও আচরণে কৃত্রিমতা সৃষ্টি, বাস্তবতার প্রতি বিমুখতা, ব্যক্তিত্বহীতা, অশালীনতা, মনস্তাত্বিক অস্থিরতা, চারিত্রিক অবনতির মতো সব জটিল সমস্যা বৃদ্ধি করে।
সামগ্রিকভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয় সামাজিক প্রেক্ষাপটে।অ্যাপসটির আবিষ্কারক চিন হলেও এর সংক্রমণ কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশে বেশি।

এমতাবস্থায় দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে রঙিন তামাশায় হারিয়ে যাবে আগামীর প্রজন্ম। এর করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পেতে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও আইনের কঠোর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। ধর্মীয় ও নেতিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটাতে।
মোদ্দা কথা, টিকটিকি ও লাইকী রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবী।

সহকারী শিক্ষক,
খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়,খরুলিয়া,সদর, কক্সবাজার।

আরও খবর