কক্সবাজারে করোনায় মৃত্যুর মিছিল : একদিনে রেকর্ড ৬ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৩২!

বিশেষ প্রতিবেদক •

কক্সবাজার জেলায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এখন ভয়ানক। মৃত্যুর ঘোড়া ছুটছে লাগামহীন।বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও।

মহামারি করোনা ভাইরাসে প্রতিদিনই প্রাণহানি ঘটছে। মাত্র চব্বিশ ঘন্টার ব্যবধানে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৩২ জন এবং মৃত্যূ হয়েছে রেকর্ড ৬ জনের। এর আগের দিন সোমবার করোনাক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৩৩ জন এবং মৃত্যূ হয়েছিল ২ জনের।

শনাক্তের দিক দিয়ে জেলায় আবারও ডাবল সেঞ্চুরী ছুঁল করোনা। আর চব্বিশ ঘন্টায় ৬ জন সহ টানা সাত দিনে ২৬ করোনা রোগীর মৃত্যূ দেখল জেলাবাসী।

এর আগের দিন সোমবার মৃত্যূ হয় ২ জনের,রবিবার মৃত্যূ হয় ৪ জন,শনিবার ৩ জন,শুক্রবার ৩ জন, বৃহস্পতিবার হয় ৪ জন এবং বুধবার ৪ জনের। আর পুরো জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা ২৮ রোহিঙ্গাসহ ২০২ জন। এদের মধ্যে ৯৩ জনই কক্সবাজার সদর ও পৌরসভার বাসিন্দা। ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ২১৩ জন। জেলায় আক্রান্তের হার ২২.১%।

মঙ্গলবার ৩ আগস্ট দুপুর আড়াইটায় কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রেরিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

তারা জানায়, সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ে ৮২৩ টি টেস্টে কক্সবাজারের আট উপজেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২৩২ জন। এর মধ্যে কক্সবাজার সদর ও পৌরসভাতেই শনাক্ত হয়েছেন ৭৮ জন । উখিয়া উপজেলায় ৪২ জন,টেকনাফ উপজেলায় ৪৯ জন,রামু উপজেলায় ৬ জন,পেকুয়া উপজেলায় ৯ জন,মহেশখালি উপজেলায় ১০ জন,চকরিয়া উপজেলায় ১৮ জন,কুতুবদিয়া উপজেলায় ১০ জন।

সোমবার এ সংখ্যা ২৩৩ জন,রবিবার ছিল ২৩৪ জন,শনিবার ছিল ১৮৫ জন,শুক্রবার ছিল ২০১ জন, বৃহস্পতিবার ছিল ২০২ জন,বুধবার ছিল ৩২৪ জন এবং মঙ্গলবার ছিল রেকর্ড ৩২৬ জন।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস আরও জানায়,২৪ ঘন্টায় জেলায় করোনা রেকর্ড ৬ জনের মৃত্যূ হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জনই কক্সবাজার সদর ও পৌরসভার বাসিন্দা। একজন রামু উপজেলার,অন্যজন পেকুয়া উপজেলার।

তারা হলেন-কক্সবাজার সদর চৌফলদন্ডির আনোয়ারা বেগম(৬৭)। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি ২৮ জুলাই মৃত্যূ ২ আগস্ট।

কক্সবাজার সদর ঈদগাঁওয়ের সাকেরা বানু(৬৫)।কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি ২ আগস্ট মৃত্যূ ২ আগস্ট।

কক্সবাজার পৌরসভার সিটি কলেজ এলাকার হামিদুল ইসলাম(৫২)। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি ২৬ জুলাই মৃত্যূ ২ আগস্ট।

কক্সবাজার পৌরসভার টেকপাড়ার লায়লা বেগম(৬৫)। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি ৩১ জুলাই মৃত্যূ ২ আগস্ট।

পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়ার ননী শীল(৬২)।কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি ১ আগস্ট মৃত্যূ ২ আগস্ট। এবং

রামু উপজেলার গর্জনিয়ার নুর আয়েশা(৭৪)।কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি ৩০ জুলাই মৃত্যূ ২ আগস্ট।

সিভিল সার্জন অফিস আরও জানায়, জেলায় ২৪ ঘন্টায় ২৪৯টি র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে ৫০ জন পজিটিভ হয়েছেন। এর মধ্যে সদরে ১৪ জন,উখিয়ায় ৮ জন,রামুতে ৬ জন,চকরিয়ায় ৩ জন,,কুতুবদিয়ায় ৬ জন,মহেশখালিতে ১ জন,পেকুয়ায় ৫ জন এবং টেকনাফে ৬ জন এবং উখিয়া শরনার্থী শিবিরে ১ জন। এ পর্যন্ত জেলায় ৭ হাজার ১৬৯ টি র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে করোনা পজিটিভ হয়েছেন ১ হাজার ৮৯৯ জন। এর মধ্যে স্থানীয় ১ হাজার ৮১৮ জন এবং রোহিঙ্গা ৮১ জন।

৩ আগস্ট পর্যন্ত জেলায় করোনার পরীক্ষা করা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫২৫ জনের।এর মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৫৩৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৪ হাজার ৮৮৩ জন। প্রতিষ্ঠানিক আইশোলেসনে রয়েছেন ৫৩৮ জন। মৃত্যূবরণ করেছেন ২৮ রোহিঙ্গাসহ ২০২ জন। তার মধ্যে সদর ও পৌরসভার ৯৩ জন,উখিয়ায় ৪২ জন,টেকনাফে ১৯ জন,চকরিয়ায় ২১ জন,রামুতে ১৩ জন,পেকুয়ায় ৬ জন,মহেশখালিতে ৫ জন এবং কুতুবদিয়ায় ৩ জন ।

২৪ ঘন্টায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের শরনার্থী শিবিরের ১৪২টি টেস্টে পজিটিভ হয়েছে ১২ জন। শরনার্থী শিবিরে এ পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৬১৬ রোহিঙ্গার নমুনা পরীক্ষায় করোনাক্রান্ত‘র সংখ্যা ২ হাজার ৫২০ জন।এর মধ্যে উখিয়া শরনার্থী শিবিরে ২ হাজার ৭ জন এবং টেকনাফ শরনার্থী শিবিরে ৪৬৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ২২৩ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ২০৬ জন।মৃত্যূবরণ করেছেন ২৮ জন। আক্রান্তের হার ৪.৭%।

এদিকে জেলা প্রশাসন কক্সবাজার শহরসহ বি‌ভিন্ন উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ তৎপরতা চলালেও সংক্রমন কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কোরবাণী ঈদের পর ২৪ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের পাশাপাশি করোনা রোগীরা যাতে সাধারণ মানুষের স্পর্শে আসতে না পারে ও মানুষ যা‌তে স্বাস্থ্য‌বি‌ধি মে‌নে চ‌লে সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তা সত্তেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। তবে করোনার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে রোগীর সংখ্যা কমানো তথা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দিয়ে আরো বেশি করে গণসচেতনতা তৈরির উপর গুরুত্ব এবং লকডাউন অর্থবহ করতে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশসানকে আরো কঠোর ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছে সচেতন মহল।

আরও খবর