ওয়াহিদ রুবেল •
কক্সবাজারে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে ধর্ষণের ঘটনা। শুধু জুন মাসের প্রথম পক্ষকালে ১৪ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
অভিযোগের পক্ষপাতমূলক তদন্ত, বিচারহীনতা, আর বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ধর্ষণ প্রবণতা কৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং দ্রুত বিচার কার্যকর করা গেল ধর্ষণের ঘটনা কমে আসবে বলে জানান তারা।
জেলা প্রশাসনের এক গোপন প্রতিবেদন বলা হয়েছে, জুন মাসের শুরুতে মাত্র ১৫ দিনে ১৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে মে’ মাসের শেষ পক্ষকালে ধর্ষণের ঘটনা ছিল ১৬টি। কাজগে কলমে ১৪টি ঘটনা হলেও বস্তবে ধর্ষণের সংখ্যা দেড়গুণের বেশি বলে মনে করেছেন অনেকে। বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি মাসের ১ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত চকরিয়া উপজেলায় ৬ টি, উখিয়া এবং কক্সবাজার সদর উপজেলায় ঘটেছে ৩ টি করে। আর একটি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কুতুবদিয়া, রামু এবং পেকুয়ায়।
এদিকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মে’ এক মাসে ধর্ষণের আলামত নিয়ে ৩৩ জন রোগী হাসপাতালের ‘ওযান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। সেখান থেকে ২১ জন রোগী সেবা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র থেকে জানা যায়, কক্সবাজার আদালতে বর্তমানে প্রায় ৪১৮৩ টি নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
যেখানে কক্সবাজার সদর এবং চকরিয়া আদালতে বিচারাধীন ৭’শ অধিক, টেকনাফ উখিয়া পেকুয়া আদালতে ১৭৩৫ টি বিচারাধীন, মহেশখালী রামু, কুতুবদিয়া আদালতে রয়েছে ১৭৪৮ টি বিচারাধীন মামলা। ইতিমধ্যে ৮৮৮ টি মামলা নিষ্পত্তি হলেও সাজা হয়েছে মাত্র ২৫ টি মামলার। আর ২০২০ সালে নতুন করে মামলা হয়েছে ৬৪৮ টি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজার জেলা কারাগারের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে কারাগারে ১৫৩ জন ধর্ষণ মামলার আসামি রয়েছে।
সামাজিক সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সংক্ষুদ্ধ পরিবারের মামলা দায়েরে অনাগ্রহ, থানা কর্তৃক মামলা গ্রহণে অনীহা, তদন্ত ও বিচার কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা, ক্ষমতার আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে থাকা ব্যক্তি ধর্ষণের সাথে জড়িত হলে প্রভাবশালী ব্যক্তি কর্তৃক তদন্ত ও বিচার কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার ফলে আইনের সঠিক বাস্তবায়ন বাধা গ্রস্ত হয়ে থাকে। এতে ক্ষতিগ্রস্তরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হন। ফলে সামাজিক অবক্ষয়ের পাশাপাশি নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক হচ্ছে।
সামাজিক অবক্ষয়কে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণকে দায়ি করেছেন কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (৩) এর পাবলিক প্রসিকউটর (পিপি) এ্যাডভোকেট একরামুল হুদা।
তিনি বলেন, পিতামাতার উদাসিনতা আর পশ্চিমা সাংস্কৃতির অনুসরণের কারণে সমাজের মারাত্মক নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া এখন থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তিনি।
নারী নেত্রী ও সমাজকর্মী নাজনীন সরওয়ার কাবেরী রাজনৈতিক সদিচ্ছা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে ধর্ষণ বেড়েই চলছে বলে দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, দেশের প্রচলিত আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। যদি দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা যায় তবে ধর্ষণের মতো অপরাধ কমে আসবে।
লিগ্যাল এইড কক্সবাজারের প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা বলেন, ধর্ষনের মত জঘন্য ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারন আইনের মারপ্যাঁচে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘ সূত্রিতা ও নানান প্রতিবন্ধকতা।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ও ৯(২) ধারায় ধর্ষনের দায়ে শাস্তির বিধান যাবজ্জীবন। আর মৃত্যু ঘটলে মৃত্যু দন্ডের ও ২০(৩) ধারায় বিচারের জন্য মামলা প্রাপ্তির ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার কার্য সমাপ্ত করার কথা। কিন্তু বাস্তবে সঠিক সময়ে তদন্ত কার্য শেষ হয়না। এতে অপরাধীরা আইনকে যেমন অগ্রাহ্য করছেন তেমনি অপরাধ করতে দ্বিধা করছেন না। ধর্ষন প্রতিরোধে সামাজিক জনসচেতনতা ও আইনের যথাযত প্রয়োগের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-