বাংলা ট্রিবিউন •
সম্প্রতি দেশের কয়েকটি জায়গায় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। কোন্দল নিরসন করে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনতে তারা এসব বৈঠক করেন। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এ সফর আপাতত স্থগিত রয়েছে।
কেন্দ্রীয় সফরের অংশ হিসেবে গত জুন থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতারা চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ, মহানগর, কুমিল্লা উত্তর, দক্ষিণ, চাঁদপুর, নোয়াখালী, কক্সবাজার, ফেনীসহ আশপাশের কয়েকটি জেলা-উপজেলার নেতা ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এ সফরে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
এসব বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে তৃণমূল নেতারা সংগঠনের প্রকৃত চিত্র তুলে না ধরে নিজেদের জনপ্রিয়তার তথ্যই তুলে ধরেন। কয়েকটি বৈঠকের বক্তব্য পর্যালোচনা করে ও নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০ জুন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠক হয়। তাতে এলাকায় নিজেকে ব্যাপক জনপ্রিয় দাবি করেন সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার সংসদ সদস্য আবু রেজা মো. নেজামউদ্দিন নদভী।
কেন্দ্রীয় নেতাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি বলেন, ‘জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে প্রয়োজনে ডামি নির্বাচন করুন। তখন দেখবেন আমি কত জনপ্রিয়! প্রয়োজনে ওই নির্বাচনের সব খরচ আমি দেবো।’
সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব হোসেন তার জনপ্রিয়তা বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচন করেছি। উপজেলা চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছি। ১২০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৯টিতে পাস করেছি। আমাকে সাধারণ নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন দিলে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবো।’
বাঁশখালী থেকে নির্বাচিত দলীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান নিজেকে এলাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘এই আসনে আমার সঙ্গে দাঁড়িয়ে নির্বাচনে জিতবে এমন কেউ নেই।’
১৫ জুন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ‘সত্যবচনের’ নামে একপ্রকার বিষোদগারই করেন। তার এসব কথাবার্তা থেকে ‘রেহাই’ চান নোয়াখালীর সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী। এ বিষোদগারের সমাপ্তি না হলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে দাবি তাদের। কোম্পানীগঞ্জের পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিকভাবে বিব্রত বলেও জানান তারা।
চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এখানে দলীয় কোনও দ্বন্দ্ব নেই। উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এই দায়িত্বে দীর্ঘদিন রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের হাতে নেতৃত্ব থাকলে এ উপজেলায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব মোটেও থাকবে না।’
এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন প্রশ্ন তোলেন- তারা উপজেলার সবগুলো ওয়ার্ড, ইউনিয়নের সম্মেলন করতে পেরেছেন কি-না। কোনও সম্মেলন হয়নি শুনে স্বপন প্রশ্ন রাখেন- তবে এদের দায়িত্ব থেকে সংগঠন কীভাবে উপকৃত হলো?
জবাবে নজরুল ইসলাম জানান, তারা সম্মেলন করতে চাইলেও ওয়ার্ড-ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অনুরোধে করতে পারেননি।
‘নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন নেতারা’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তৃণমূল নেতাদের এ ধরনের বক্তব্যকে দম্ভোক্তি মনে করছি না। নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবার প্রবণতা থেকেই বলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছি। তাতে বোঝা গেছে সংগঠনে বড় কোনও সমস্যা নেই। কিছু সংকট রয়েছে। এর মধ্যে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করা গেছে- তৃণমূল নেতারা আগের চেয়ে অলস হয়ে পড়েছেন।’
স্বপন বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবগুলো জেলা-উপজেলায় সম্মেলন করে নবীন- প্রবীণদের সমন্বয়ে কমিটি করা হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘অবস্থা এমন হয়েছে যে, ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য- সবাই নিজেকে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভেবে বসে আছেন। কিন্তু সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তাদের দেখা যায় না। তারা দলের মধ্যে দল তৈরি করে বিভাজন বানিয়ে রাখেন।’
তিনি বলেন, ‘এর অন্যতম কারণ- সর্বস্তরের মনোনয়নে দীর্ঘদিন পরিবর্তন নেই। একজন বার বার মনোনয়ন পেয়েই চলেছেন। ফলে তারা ভাবতে শুরু করছেন দলের জন্য তারাই অনিবার্য।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-