বিশেষ প্রতিবেদক •
করোনা মহামারি রোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ শেষ হচ্ছে বুধবার মধ্যরাত থেকে।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত শিথিল থাকবে বিধিনিষেধ। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে গণপরিবহন। খোলা থাকবে শপিংমল ও দোকানপাট। কোরবানির পশু কেনাকাটা ও ঈদে মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু এরই মধ্যে কক্সবাজার জেলার করোনা সংক্রমণ দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে করোনায় সংক্রমণ ডাবল সেঞ্চুরী করেই যাচ্ছে। এর ভয়াবহ লাগাম কিছুতেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই দুই শতাধিকের উপরে বাড়ছে সংক্রম। চলমান কঠোর লকডাউন দিয়েও সংক্রমন কমানো যাচ্ছে না।
১৩ জুলাই মঙ্গলবার একদিনে নতুন করে আরও ২২৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন।আর মৃত্যূবরণ করেছেন আরও একজন।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাব এবংস্বাস্থ্য বিভাগের র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে তাদের করোনা শনাক্ত হয়।
সোমবার এ সংখ্যা ছিল ২২৪ জন এবং রবিবার ছিল ২২৩ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ হাজার ৪২৬ জনে এবং মৃত্যূবরণ করেছেন ২১ রোহিঙ্গাসহ ১৩৯ জন।
সর্বশেষ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে করোনায় মারা যাওয়া রোগী হলেন কক্সবাজার সদর ঝিলংঝার হাজিপাড়ার মাহমুদা বেগম(৭৫) এবং মহেশখালরি কালামাছড়ার শাহিনা বেগম(৫৭) ।
তারা গত ৯ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আর ১২ জুলাই মৃত্যূ হয়।
এদিকে সোমবার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান,জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৫৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৫ জন।
তন্মধ্যে সদর উপজেলা ও পৌরসভার ৪৮ জন,উখিয়া উপজেলায় ২১ জন,টেকনাফ উপজেলায় ৩৮ জন,রামু উপজেলায় ৩ জন,পেকুয়া উপজেলায় ১ জন,মহেশখালি উপজেলায় ৫ জন,কুতুবদিয়া উপজেলায় ২ জন এবং ৪২ জন রোহিঙ্গা। নেগেটিভ ছিলেন ৫৯২ জন ।ফলোআপ ছিলেন ৪ জন।
অপরদিকে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭৫১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এনিয়ে জেলায় ১ লাখ ৬০ হাজার ১৫৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলো।
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনাভাইরাসে ২২৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এছাড়া ২৪ ঘন্টায় ২৪২টি র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে সদরে ২৩ জন,উখিয়ায় ২ জন,টেকনাফে ৯ জন,চকরিয়ায় ৬ জন,রামুতে ৬ জন,পেকুয়ায় ২ জন,মহেশখালিতে ৭ জন,কুতুবদিয়ায় ৫জন এবং উখিয়া শরনার্থী শিবিরে ৩ জন ও টেকনাফ শরনার্থী শিবিরে ০ জন রোহিঙ্গা পজিটিভ হয়েছেন।
এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ হাজার ৪২৬ জনে। সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ৯৫৯ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ৬৫২ জন। জেলায় করোনায় এখন পর্যন্ত মোট ২১ রোহিঙ্গাসহ ১৩৯ জন মারা গেছেন। তার মধ্যে সর্বাধিক কক্সবাজার পৌরসভা ও সদর উপজেলাতেই ৬৮ জনের মৃত্যূ হয়েছে।
আক্রান্তের দিক দিয়েও এগিয়ে রয়েছে এই এলাকা।এছাড়া জেলায় ৩৩৪৫টি র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে করোনা পজিটভ হয়েছেন ৭৫৩ জন।এর মধ্যে স্থানীয় ৬৯৯ জন এবং রোহিঙ্গা ৫৪ জন।
অপরদিকে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজার ২৮ রোহিঙ্গার নমুনা পরীক্ষায় করোনাক্রান্ত‘র সংখ্যা ২ হাজার ১১৯ জন।এর মধ্যে উখিয়ায় ১৮৫১ জন এবং টেকনাফে ৩৬৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৭১৩ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ৩৭০ জন।
এদিকে কক্সবাজার শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ তৎপরতা চলছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের। কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের পাশাপাশি করোনা রোগীরা যাতে সাধারণ মানুষের স্পর্শে আসতে না পারে ও মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে করোনার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে রোগীর সংখ্যা কমানো তথা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দিয়ে আরো বেশি করে গণসচেতনতা তৈরির উপর গুরুত্ব এবং লকডাউন অর্থবহ করতে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশসানকে আরো কঠোর ভূমিকা রাখার আহবান জানান সচেতন মহল। শুধু প্রধান সড়ক বা শহরের মধ্যে অভিযান সীমাবদ্ধ না রেখে শহরের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অভিযান পরিচালনার পরামর্শ দেন তারা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-