লকডাউন: কক্সবাজারে স্টেশন গুলোতে কড়াকড়ি, গ্রামে ঢিলেঢালা ভাব

প্রথম আলো •

কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার হাঙর ভাস্কর্য মোড়। সোমবার বেলা ১১টা। হেঁটে শহরের ঝাউতলার দিকে যাচ্ছিলেন সালাহ উদ্দিন। তিনি পড়েন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে। সালাহ উদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামার কারণ। হাসিমুখে তাঁর জবাব—লকডাউন দেখতে মাঠে নেমেছেন তিনি। এরপর বিধিনিষেধ অমান্য করার অভিযোগে আদায় হয় জরিমানা, ফেরত পাঠানো হয় উল্টোপথে।

সালাহ উদ্দিন বলেন, লকডাউন দেখতে এসে ২০০ টাকা জরিমানা গুনতে হলো। এ টাকায় ঘরে বসে আম খাওয়া যেত।

সাত দিনের কঠোর লকডাউনের পঞ্চম দিন সোমবারও সকাল থেকে শহরের কলাতলী, সুগন্ধা পয়েন্ট, সৈকত সড়ক, প্রধান সড়কের ঝাউতলা, লালদিঘির পাড়, বাজারঘাটা, বাসটার্নিমাল, বাইপাসসহ বিভিন্ন সড়কে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশের টহল ছিল। এ ছাড়া সড়কের মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের একাধিক তল্লাশিচৌকি। এর মধ্যেও কিছু মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত লোকজনকে আটকিয়ে আদায় করছেন জরিমানা।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সাদিয়া সুলতানা বলেন, লকডাউন দেখতে এসে গত চার দিনে জেলার বিভিন্ন স্থানের ২১৪ জন ব্যক্তিকে জরিমানা গুনতে হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬০০ টাকা। লোকসমাগম ঠেকাতে মাঠে তৎপর ভ্রাম্যমাণ আদালত।

লকডাউন পরিস্থিতি দেখতে প্রতিদিন মাঠে নামেন জেলা প্রশাসক মো. মানুনুর রশীদ, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় শহর এলাকার কয়েক হাজার দোকানপাট, বিপণিকেন্দ্র, হোটেল–মোটেল রেস্তোরাঁ পাঁচ দিন ধরে বন্ধ। শহরে প্রধান সড়ক, সৈকত সড়ক, বাইপাস সড়ক বলতে গেলে লোকশূন্য ফাঁকা পড়ে আছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতও ফাঁকা পড়ে আছে।

শহরের ভেতরের উপসড়ক, অলিগলির চিত্র ভিন্ন। লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায়, দোকানপাটে আড্ডা দিচ্ছেন।

কক্সবাজার শহর থেকে কিছুটা দূরের ইউনিয়নগুলোতে লকডাউন চলছে একেবারে ঢিলেঢালাভাবে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও সেদিকে কম।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, লকডাউন কার্যকর করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। অকারণে যাঁরা রাস্তায় নামছেন, তাঁদের আটক করে জরিমানা করা হচ্ছে। জেলা শহরের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও লকডাউন কার্যকর করতে ইউএনওদের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৪৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৮৭৫ জনকে ৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

গ্রামে ঢিলেঢালা লকডাউন

সকাল সাড়ে ৯টা। শহর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে খুরুশকুল ইউনিয়নের টাইমবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কিছু দোকানপাট খোলা। কয়েকটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা জমিয়েছেন তরুণদের একাধিক দল। প্রতিটি দলে ৫ থেকে ১১ জন। কারও মুখে মাস্ক নেই, সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখা হচ্ছে না।

একটি চায়ের দোকানের মালিক আবদুল আমিন বলেন, দোকানে বসে কোনো খাবার খাওয়া নিষেধ হলেও এখন সবাই খাচ্ছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। মানা করলে শোনেন না।
আরেকটি দোকানে দেখা গেল, ১২-১৫ জন লোক দোকানে বসে চা, নাশতা, পান–সিগারেট খাচ্ছেন আর টেলিভিশনে সিনেমা দেখছেন।

তরুণদের কয়েকটি দলকে দেখা গেছে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক ঘাঁটাঘাঁটি করছেন। কারও মুখে মাস্ক নেই।

ইউনিয়নের কৃষ্ণ বাজার, পালপাড়া বাজার, কাউয়ারপাড়া বঙ্গবন্ধু বাজারেরও একই অবস্থা। শত শত দোকানপাট খোলা। মাছ ও তরিতরকারির বাজারে মানুষের ভিড়। চায়ের দোকান, সেলুন, ওষুধ বিক্রির ফার্মেসিতে লোকজনের আড্ডা।

কক্সবাজার-খুরুশকুল-ঈদগাহ সড়কে চলছে শত শত রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক টমটম, জিপ, মাইক্রোসহ বিভিন্ন যানবাহন। অধিকাংশ যানবাহন যাত্রীতে ঠাসা। যাত্রীদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। অসংখ্য অটোরিকশা ও টমটম যাত্রীবোঝাই করে খুরুশকুল সেতু হয়ে টেকপাড়া-মাঝিরঘাট সড়ক দিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটা এলাকায়। আবার সেখান থেকে যাত্রীবোঝাই করে যানগুলো আসছে খুরুশকুলে। বাজারঘাটা থেকে যাত্রী নিয়ে বেশি কিছু অটোরিকশা, টমটম খুরুশকুল হয়ে যাচ্ছে ২০-৩০ কিলোমিটার দূরের ইউনিয়ন চৌফলদণ্ডি, ভারুয়াখালী, ইসলামপুর, ঈদগাহ এলাকায়।

খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, এখানে লকডাউন বলতে ‘চোর-পুলিশ’ খেলার অবস্থা।

সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবির টহলে এলে সড়ক থেকে মুহূর্তে যানবাহন উধাও হয়। বন্ধ হয় দোকানপাট। টহল চলে গেলে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি দোকানপাট ও যান চলাচল বন্ধ করে লোকজনকে ঘরে রাখতে। কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না, মানুষ করোনা নিয়ে তেমন সচেতন নয়।’

আরও খবর