বিশেষ প্রতিবেদক •
কক্সবাজারে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ১০৯ জনের শরীরে। এছাড়া একই সময়ে হাসপাতালে ও বাড়িতে চিকিৎসাধীন আরও ৫০ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আর এই ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনা আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
এনিয়ে গত একমাস থেকে ভীতিকর হারে বেড়েছে করোনার সংক্রমন ও মৃত্যু।
মৃত্যুর তালিকায় যেমন আছেন জেলার নারী-পুরুষ, তেমন আছে উখিয়া-টেকনাফের শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারাও। প্রাণঘাতি এ ভাইরাসের মারা যাচ্ছেন বৃদ্ধ,মধ্যম বয়সি থেকে তরুণ-যুবকরাও।
বিশেষ করে ঘনবসতির রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত মাস দেড়েক ধরে এই সংক্রমণ ব্যাপক আকার নিয়েছে। গোষ্ঠী সংক্রমণ চলছে ব্যাপক ভাবে। এক দেহ থেকে অন্য দেহে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারনেই আক্রান্তের সংখ্যা এত বেশি হচ্ছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ঠরা।
এদিকে ৪জুলাই কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত চব্বিশ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন সদর উপজেলা ও পৌরসভার ৪৯জন এবং ১৬ রোহিঙ্গাসহ ১০৯ জন৷ আর মৃত্যূবরণ করেছে ১ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১২ হাজার ৬৯৬ জনে এবং মৃত্যূবরণ করেছেন ১৩০ জন।
সর্বশেষ ৪ জুলাই কক্সবাজার সদর হাসপাতালে করোনায় মারা যাওয়া রোগী হলেন সদর উপজেলার ঈদগাঁওয়ের মোজাম্মেল হক(৪৭)। গত ২৪ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আর ৪ জুলাই মৃত্যূর কোলে ঢলে পড়েন।
৪ জুলাই রবিবার রাতে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান,জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১১৭জন।
তন্মধ্যে সদর উপজেলা ও পৌরসভার ৪৯ জন,উখিয়া উপজেলায় ১৭ জন,টেকনাফ উপজেলায় ১০ জন, চকরিয়া উপজেলায় ৫ জন,রামু উপজেলায় ৫ জন, পেকুয়া উপজেলায় ৪ জন,মহেশখালি উপজেলায় ৩ জন এবং ১৬ জন রোহিঙ্গা। নেগেটিভ ছিলেন ৪৮৫ জন ।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৫৩২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩১৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনাভাইরাসে ১০৯জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এছাড়া ৮৮ র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে সদরে ৩০ জন,উখিয়ায় ১ জন,টেকনাফে ১ জন এবং মহেশখালীতে ২ জন পজিটিভ হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১২ হাজার ৬৯৬ জনে। সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ১৯৬ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ৪১০ জন। নতুন করে ১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। জেলায় করোনায় এখন পর্যন্ত মোট ২০ রোহিঙ্গাসহ ১২৯ জন মারা গেছেন। তার মধ্যে সর্বাধিক কক্সবাজার পৌরসভা ও সদর উপজেলাতেই ৬৪ জনের মৃত্যূ হয়েছে। আক্রান্তের দিক দিয়েও এগিয়ে রয়েছে এই এলাকা।
এছাড়া জেলায় করোনাক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১ হাজার ৮৪৮ জন।এর মধ্যে উখিয়ায় ১৫৭৬ জন এবং টেকনাফে ৩০২ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৫৫৪ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ২৬৪ জন।
এদিকে কক্সবাজার শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ তৎপরতা শুরু করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। ১লা জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের পাশাপাশি করোনা রোগীরা যাতে সাধারণ মানুষের স্পর্শে আসতে না পারে ও মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
অপরদিকে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অবস্থায় চলমান লকডাউনে জেলার সর্বত্র সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। জনগণ যদি সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পারে তাহলে করোনা সংক্রমণের হার কমে যাবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-