কক্সবাজার জার্নাল রিপোর্ট •
ভয়াবহ করেনাভাইরাস আতঙ্কের ভয়াল থাবার মধ্যেও উৎপাদনের ধারা সচল রাখার বহুমুখি কার্যক্রম হাতে নিয়েছে কৃষি বিভাগ। তারই ধারাবাহিকতায় কৃষিপ্রধান দেশে মাঠে মাঠে চলছে কর্মবীর কৃষকদের উৎপাদনের যুদ্ধ।
তাই করোনাকালীন কঠিন সময়ে সময়ে সাবধানতা অবলম্বন করে শত সমস্যার মধ্যেও ব্যতিক্রম হিসাবে সীমিত জনবল নিয়ে কৃষি উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয়, কার্যক্রম থমকে না যায়, খাদ্যের যোগান অব্যাহত থাকে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এর লক্ষ্যে কৃষকের দ্বারে দ্বারে সেবা পৌঁছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে দিনরাত সমানতালে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন উখিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ প্রসেনজিৎ তালুকদার।
উপজেলায় করোনা কালীন সময়ে রাজস্ব আমন ধান প্রদর্শনীর বীজ বিতরণ, সাইট্রাসের চারা ও সার বিতরণ, স্বাস্হ্যবিধি মেনে প্রযুক্তি হস্তান্তর, কৃষক ট্রেনিং এবং কৃষকদের নানান সমস্যা নিয়ে সাহায্য ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন এবং মাঠপর্যায়ের সকল কর্মকর্তাদের কৃষকদের পাশে থেকে সাহস যোগানো, উপকরণ নির্বিঘ্নে হাতে পাবার ব্যবস্থা করছেন তিনি।
লকডাউনে দেশে সবকিছু থেমে গেলেও থেমে থাকেনি কৃষি কার্যক্রম। আর এই সময়ে কৃষকের দরকার ছিল ঝুঁকি মোকাবেলায় পরামর্শ ও সেবা। সেই সেবা কৃষকের দ্বোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তারই নির্দেশনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন। যার ফলে কৃষকরা নির্বিঘ্নে কাজ করে যাচ্ছেন। পাচ্ছেন প্রয়োজনীয় সেবা। কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলায় আমন ধান চাষের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কৃষকরা ইতোমধ্যেই আমন চাষের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমে পরেছে। প্রাথমিক ভাবে কৃষকরা আমনের জমিতে আইল বাঁধা আইলের সাইড কেটে জমিকে আমন চাষের উপযোগী করে চলছে। যে সব জমিতে পাট আছে সে গুলোও পাট কেটে প্রস্তুত করছেন।
সেই লক্ষ্যে কৃষক আমনের চারা রোপন করা নিয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে। কারণ আর কয়দিন পরেই আমন চারা জমিতে রোপন শুরু হবে। তাই প্রতিমুহূর্তে প্রয়োজনীয় সেবা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৯ হাজার ৬শ ১০ হেঃ জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে উপজেলায় প্রায় ৪শ ২০হেক্টর জমিতে আমন বীজতলা তৈরী করা হয়েছে।
অন্যদিকে, গত সপ্তাহ যাবত উপজেলায় পতিত জমির জন্য সবজি বিতরণ অব্যাহত রেখে সামনের আমন বীজ বিতরণ, আমনে মৌসুমে আধুনিক বীজতলা স্থাপন, সঠিক বয়সের চারা রোপন, সুষম সারের ব্যবহার, লোগো পদ্ধতি অনুসরণ, পার্চিং করতে জেলার কৃষকদের অনুরোধ জানান তিনি।
করোনার এই দূর্যোগেও একজন কৃষি কর্মকর্তার নিরলস পরিশ্রম ও মানুষের পাশে থেকে কাজ তদারকি করায় সাধুবাদ জানিয়েছেন সবাই।
রত্নাপালং পালং এলাকার সেনুয়ারা বেগম ও জমিলা আক্তার মাচা করে সবজির চাষ করেছেন। স্বল্প পরিসরে বসতবাড়ির আঙিনায় এসব সবজি চাষ করে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে তেমন পরিবেশও সুন্দর হচ্ছে।
তিনি জানান, বাড়ির আঙিনায় পুষ্টি বাগান আর বাড়ির আশেপাশের এসব জমি এবং ঘরের চালায় সবজি চাষ সম্পর্কে তাদের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি অফিস।
সেই সঙ্গে বিনামূল্যে প্রতিটি ঘরে ঘরে এসব সবজি বীজ দিয়ে সহায়তা করেছে কৃষি অফিস। এতে এসব সবজি চাষের মাধ্যমে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে অন্যদিকে বাজারে সব সময় সবজি কিনতে যেতে হচ্ছে না। বাড়িতে খুব সহজেই এসব সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা।
উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। কেননা এই সময়ে কৃষকের পাশে থাকাটা আমারদের ঈমানী দায়িত্ব। এমনিতে মানুষ করোনার কারণে ঘরবন্দী হয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। তাদের পাশে থেকে কাজ না করলে ধান তোলাটা অসম্ভব হয়ে যেত। তাই ধান কাটার জন্য শ্রমিকের যাতায়াত নির্বিঘ্নে করা, কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং শ্রমিকদের ধান কাটায় উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে ধান ঘরে তোলাটা সহজ হয়েছে।
কেননা এ ফসল ফলাতে কৃষকরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন এবং সার, সেচ, বালাইনাশকসহ প্রভৃতিতে তার সর্বস্ব বিনিয়োগ করে। এ ফসল যদি নষ্ট হয়, সময়মতো ঘরে না তোলা যেত- তা হলে কৃষক অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হত এবং দেশে খাদ্যের সংকট সৃষ্টি হত।
তিনি আরো বলেন, কৃষকের ক্ষেতও যখন করোনার ঝুঁকিতে ঝুঁকিপূর্ণ, এমতাবস্থায় আমরা কৃষকদের দোরগোড়ায় গিয়ে কৃষিসেবা দিয়ে যাচ্ছি। কাজ করতে গিয়ে করোনার ঝুঁকি থাকলেও কৃষকদের কথা ভেবে সাধারণ ছুটির মধ্যেও মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি আমরা।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ‘কোথাও এক ইঞ্চি জমিও যেন ফাকা পড়ে না থাকে।’ এটি বাস্তবায়ন করতে কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছে। সে লক্ষে বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ফলে কৃষকরা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। পতিত জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
তাছাড়া ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যেমে চাষিদের সচেতন করতে পারলে উখিয়ার প্রতিটি পতিত জমির ব্যবহার হবে, অপরদিকে সাধারণ মানুষ বিষমুক্ত সবজি পাবে।
তাই কৃষকদের সঠিক সময়ে আগামী আমন মৌসুমে সঠিক বয়সের চারা রোপন, জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি, লোগো পদ্ধতি অনুসরন ও পার্চিং লাগানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
তাই আমরা কৃষকের সাথে আছি এবং কৃষকের দৌড়গোড়ায় সেবা দিতে কৃষি বিভাগের লোকজন সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করে যাব।
তিনি আরো বলেন, দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে ব্যতিক্রম কৃষি উৎপাদনের সাথে জড়িত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ কোন বিশেষ প্রণোদনা বা প্রশংসা কুড়ানোর জন্য নয় বরং এ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে কৃষি ও কৃষককে ভালবেসে ক্ষুধার অন্য যোগাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মাঠে প্রান্তরে কাজের ব্যাপক বিস্তৃতি, স্মার্ট কৃষি বাস্তবায়নে সীমিত সম্পদ, যানবাহনের সঙ্কট এমনকি যানবাহনজনিত দূর্ঘটনায় কবলিত হওয়া সত্ত্বেও অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতি কতদিন দীর্ঘায়িত হবে কিংবা টাকা থাকলেও করোনা পরবর্তী খাবার কিনতে পাওয়া যাবে কিনা এ নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে আমাদের খাদ্য দিয়ে সাহায্য করতে হতে পারে। বিশ্ব মহামারীর এ মুহুর্তে তাঁর এ দূরদর্শী পরিকল্পনা ও সদয় দিকনির্দেশনা বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিশ্চিতভাবে বিশেষ অনুপ্রেরণা যোগাবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-