সাইফুল ইসলাম •
কক্সবাজারে হঠাৎ করেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত ৩ দিনে চার খুন এবং দুটি ধর্ষণের ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসনকে। সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।
জেলায় খুন, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাই ও জমি দখল এখন নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু ৩ দিনে ঘটেছে ৪ খুন ও দুই ধর্ষণের ঘটনা। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে জেলাবাসী। তবে অপরাধ ও অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ দিন-রাত কাজ করছে বলে জানান পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান।
জানা যায়, শনিবার বিকাল ৪টার দিকে কক্সবাজার সদরের ঝিংলজার ইউনিয়নের খরুলিয়ায় ঘাটপাড়া বেড়িবাঁধ এলাকায় সামান্য কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে ছুরিঘাতে মোর্শেদ আলম (২২) নামের এক যুবক খুন হয়েছেন। নিহত মোর্শেদ আলম ঘাটপাড়া এলাকার সৈয়দ আলমের পুত্র। স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ জানিয়েছন, নিহত মোর্শেদ ও কোনার পাড়ার ফরিদুল আলমের পুত্র কফিল উদ্দীনের মধ্যে ঠাট্টার ছলে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে একজন অন্যজনকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে তিরস্কার করেন। এই সামান্য বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে মোর্শেদ আলমকে ছুরিকাঘাত করেন কফিল উদ্দীন। এতে গুরুতর জখম হয় মোর্শেদ আলমের। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে লিংকরোডের মেরিন সিটি হাসপাতালে নেয় হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে নেয়ার পথে ডুলাহাজারা পর্যন্ত গেলে গাড়িতে মারা যান মোর্শেদ আলম। মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে।
গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর কক্সবাজার সদর উপজেলাধীন খুরুশকুলে জমির বিরোধের জের ধরে নুরুল হক নামে একজনকে গলায় ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। একইদিন সকালে পেকুয়ায় এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে স্বামী। নিহত ওই নারীর নাম মর্জিনা আক্তার। স্থানীয়রা বলছেন যৌতুকের জন্য এই খুন।
গত বৃহস্পতিবার পিএমখালীতে জমি বিরোধের জের ধরে সেকান্দার আলী (৫০) নামে এক বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
এছাড়া চকরিয়ার বদরখালীতে দুই কিশোরীকে অচেতন করে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে শুক্রবার।
জেলা জুড়ে খুন ধর্ষণ ছিনতাই ঘটনা নিয়ে সামাজিক সচেতন অনেক নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিক অস্থিরতাকে দায়ে করে বলেন, প্রশাসনের একার পক্ষে এসব অপরাধ দমন সম্ভব নয়। সমাজের সচেতন মানুষকে সোচ্চার হয়ে সকল অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রতিপক্ষকে সন্ত্রাসী ট্যাগ এবং যেকোনো ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্টের মূল কারণের দিকে নজর দিতে আহবান জানান তারা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত এধরণের সামাজিক অবনতির দায় নিজেদের ঘাড়ে না নিয়ে প্রকৃত বিষয়টি জনগণের সামনে তুলে ধরা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক সাংবাদিক এইচ,এম নজরুল ইসলাম বলেন, ছোট অপরাধ থেকে বড় অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে। চিহ্নিত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় না আনলে পরিস্থিতি আরও ভয়বহতায় রূপ নিতে পারে। তাছাড়া আটক হওয়া অপরাধীরা যেন সহজে জামিনে বের হতে না পারে বিষয়টিও গুরুত্ব দেয়া দরকার।
কক্সবাজার বাঁচাও অান্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট অায়াছুর রহমান বলেন, সমাজে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে। অনেক ঘটনা ঘটছে অনাকাঙ্খিতভাবে। হুট করে সাধারণ মানুষই বড় ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে পুলিশের পাশাপাশি নাগরিকদেরও স্ব স্ব অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করা জরুরী।
জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে জেলার অনেক জায়গায় লকডাউন চলছে। এতে ব্যবসা বাণিজ্য কাজকর্ম বন্ধ থাকায় মানুষ প্রায় ঘরবন্দী। এতে করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিরোধের জেরে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটছে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা। তবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সোচ্চার আছে। ঘটে যাওয়া ঘটনার সুষ্ঠু কারণ উদঘাটন করে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-