বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার
গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল •
আজ আন্তর্জাতিক মাদক মুক্ত দিবস। মাদকাসক্তি হচ্ছে একটি নীরব ঘাতক। এই মাদকাসক্ত মানুষ গুলো ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় তাদের পরিবার, সমাজ ও দেশ। মাদকাসক্ত ব্যাক্তিরা তাদের নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে দিনের পর দিন ধাবিত হতে থাকে ধ্বংসের দিকে।
মাদকের এই ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক সভায় ২৬ জুনকে মাদকবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এরপর থেকে ধারাবাহিক ভাবে প্রতি বছর ২৬ জুন আসলেই বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাদক মুক্ত দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।
এদিকে বাংলাদেশে মাদকের আগ্রাসী ছোবল ভয়াবহ রূপ ধারন করছে। প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদক কারবারী ও মাদকাসক্ত ব্যাক্তিদের সংখ্যা। বিগত কয়েক বছর ধরে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা মরন নেশা ইয়াবার আগ্রাসী ছোবলে দেশের যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
সেই সূত্র ধরে বাংলাদেশে মাদকের ভয়াবহ পাচার প্রতিরোধ ও মাদক কারবারে জড়িতদের নির্মুল করার জন্য সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৪ মে দেশজুড়ে বিশেষ অভিযান শুরু করে র্যাব। এরপর পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থাও মাদকবিরোধী কঠোর অভিযান শুরু করে।
চলমান এ অভিযানে মাদক কারবারে জড়িত থাকার অপরাধে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অকালে প্রান হারায় কয়েক শত ব্যাক্তি।
এরমধ্যে বিগত আড়াই বছরের ব্যবধানে টেকনাফ উপজেলায় কর্মরত পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে প্রায় ২ শতাধিক ব্যাক্তি।
নিজের প্রাণ বাঁচাতে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করেছিল মাদক কারবারে জড়িত প্রায় ১৩০ জন জন মাদক ব্যবসায়ী। পাশাপাশি উক্ত অভিযান চলাকালিন সময়ে মাদকসহ আটক করা হয়েছিল প্রায় কয়েক হাজার মাদক কারবারীকে। তবুও মাদক নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছেনা। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মাদক কারবার এগিয়ে চলছেই।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে দেশে প্রবেশ করেছে ইয়াবার চেয়ে বেশী শক্তিশালী ‘ক্রিস্টাল মেথ’ আইস নামে আরেকটি নতুন মাদক।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহাম্মদ জানান ২০২১ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত অত্র জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৬০ পিস ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ আইস নতুন মাদক ৫ কেজি, ফেন্সিডিল ৬১৫ পিস, ৮৭ কেজি গাঁজা, ১৩০৫ ক্যান বিদেশী বিয়ার, বিদেশী মদের বোতল ১১৪ পিস,
১৯,৮৫ লিটার দেশী মদ, দেশী-বিদেশী ৩২টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এই সমস্ত অভিযানে ২৪৩ জন মাদক কারবারীকে আটক করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় আরো তিন মাদক কারবারী।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে মাদক পাচারে জড়িত ৮০% অপরাধী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা।
টেকনাফ থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অত্র থানায় দায়িত্বে থাকা সাবেক সকল পুলিশ সদস্যদের এক যোগে বদলি করার পর থানায় নতুন দায়িত্বে আসা (ওসি) হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা চলমান মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে গত ৯ মাসে ২ লাখ, ৫০ হাজার পিস ইয়াবা, নতুন মাদক ক্রিস্টাল মেথ আইস ২০০ গ্রাম, ২০০ বোতল বিদেশী মদ, ১০০ বোতল ফেনসিডিল, ১৫০ ক্যান বিদেশী বিয়ার, ৫ কেজি গাঁজা,২০০ লিটার বাংলা মদ উদ্ধার করে।
উক্ত অভিযান চলাকালিন সময়ে মাদক মামলায় জড়িত পলাতক ও সাজাপ্রাপ্ত মাদক ব্যবসায়ীসহ সর্বমোট ৪২৫ জন অপরাধীকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
সীমান্ত প্রহরী টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লে: কর্নেল ফয়সল হাসান খাঁন (পিএসসি) জানান, ২০২১ সালের চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১০০ কোটি,৩১ লাখ,৫৬ হাজার টাকা মুল্যমানের ৩৩ লাখ ৬৪ হাজার, ৮৫৩ পিস ইয়াবা। ৯ লাখ টাকা মুল্যমানের ৫১৬ বোতল বিদেশী মদ ও ৭১ লিটার বাংলা মদ, ৮ লাখ টাকা মুল্যের ২ হাজার, ৫৯৬ ক্যান বিদেশী বিয়ার, ২৪ বোতল ফেনসিডিল। ২৫ লাখ টাকা মুল্যের ক্রিস্টাল মেথ নতুন মাদক ২৫৫ গ্রাম,৮.১৪৫ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে বিজিবি।
তিনি আরো বলেন, মাদক বিরোধী উক্ত এ অভিযানে সীমান্ত প্রহরী বিজিবি সৈনিকরা ২১৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করতে সক্ষম হয় বিজিবি। এর মধ্যে মরননেশা ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ নতুন মাদকসহ ১৪৪ জন ও অন্যান্য মাদকের সাথে ৬৯ জন মাদক কারবারীকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
টেকনাফ মাদকদ্রব্য অফিসের দায়িত্বরত সহকারি পরিচালক মো. সিরাজুল মোস্তফা(মুকুল) জানান ২০২১ সালের চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত উক্ত দপ্তরের কর্মরত সদস্যরা অত্র উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ১লাখ,৮১ হাজার, ৩৩৬পিস ইয়াবা, ২ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস নতুন মাদক, ৭৮ লিটার বাংলা মদ, ৪ কেজি গাঁজা, ৬০ ক্যান বিদেশী বিয়ার,দেশী-বিদেশী তৈরী ৪টি অস্ত্র উদ্ধার করে এবং উক্ত অভিযান চলাকালিন সময়ে মাদক কারবারে জড়িত ১১৯ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি হাফিজুর রহমান দুঃখ প্রকাশ করে বলেন,অত্র এলাকার সচেতন জনগণ যতদিন মাদক কারবারে জড়িত অপরাধীদের সামাজিক ভাবে বয়কট করবেনা ততদিন মাদকের পাচার আগ্রাসন বন্ধ হবেনা। পাশাপাশি মাদক বিরোধী অভিযানে পুলিশকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করার আহবান জানান তিনি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-