মাহদী হাসান রিয়াদ •
‘যৌনক্ষুধা’ মারাত্মক এক ক্ষুধা। যে ক্ষুধা প্রতিজন যুবক-যুবতীর লেগে থাকে। এ ক্ষুধার তীব্র যন্ত্রণা তারা সইতে পারে না। পারে না কাউরে কইতেও। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রয়োজন হয় আহারের। অসুস্থ থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় ঔষধের। তদ্রূপ মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন হয় সঙ্গী কিংবা সঙ্গিনীর। নিবারণ করতে হয় যৌনক্ষুধা। তবেই মানুষ ভালো থাকতে পারে। ভালো ভাবে চলতে পারে-বলতে পারে। অন্যথায় মানুষের জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়, নিগূঢ় আবছা আলোয় ছেয়ে যায়।
হতাশা নেমে আসে, উড়নচণ্ডী মন অস্থির হয়ে ওঠে, স্থীর হয়ে কোনো কাজ সম্পাদন করতে পারে না। সর্বোপরি, চূড়ান্ত বিপর্যয়ের দিকে ক্রমশ ধাবিত হতে থাকে৷ আস্তে আস্তে ওই ক্ষুধার্ত যুবক-যুবতীর ধ্বংস অবধারিত হয়ে যায়।
যৌনক্ষিধা মেটানোর জন্য বর্তমানে অনেকগুলো অভিনব মাধ্যম আবিস্কৃত হয়েছে। হালাল মাধ্যম অর্থাৎ বিবাহকে মাইনাস করার জন্যই পশ্চিমাদের এই চক্রান্ত। আমরাও কলুর বলদের ন্যায় তাদের পাতানো ফাঁদে পা- দিচ্ছি স্বাচ্ছন্দ্যে। কঠিন করে রেখেছি বিবাহকে। খুব সহজ করে দিয়েছি তাদের অভিনব মাধ্যমগুলোকে।
বর্তমানে হালাল মাধ্যমে যৌনক্ষুধা মেটানো চাট্টিখানি কথা নয়! বিবাহের কথা ভাবলেই একপ্রকার ভীতি কাজ করে মনে৷ উচ্চতর ডিগ্রি, ব্যাংক ভর্তি অর্থকড়ি আর সরকারি চাকরিজীবী না হলে যেন বিয়ের কথা মুখে নেয়া পাপ, মহাপাপ!
আমাদের বিয়ে টেকানোর পেছনে আবার অন্যতম ভূমিকা পালন করছেন আমাদের পরিবার। তারা কোনোভাবেই চায়না, তাঁর অপ্রতিষ্ঠ ছেলেকে বিয়ে করাতে কিংবা অপ্রতিষ্ঠিত কোনো ছেলের হাতে তাঁর মেয়েকে সোপর্দ করতে! এটা বোকামি, কুরআনের আয়াতের সাথেও সাংঘর্ষিক!
সুরা নূরের ৩২নং আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত (নরনারী) তাদের বিয়ে দিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্ম-পরায়ন তাদেরও (বিয়ে দাও)। (দারিদ্রতাকে ভয় পেও না) তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহর নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।”
তারপরও শয়তানী মোটিভেশন এমন যে, বিয়ে করা মানে হাতির খামার করা। খাওয়াবে কী? পরাবে কী? বউ পালা মানে হাতি পালা হ্যানত্যান আরও কত কী!
অথচ আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা সূরা বাক্বারার ২৬৮ আয়াতে শয়তানী মোটিভেশন নিয়ে কতই না চমৎকার বলেছেন।
“শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রতার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। ”
সূরা আল বাক্বরাহ : ২৬৮
ওদিকে আমাদের সুশীল সমাজ আর অতি সমঝদার
পিতা-মাতারা বলছেন ভিন্ন কথা, ভাবছেন ভিন্ন কিছু।
তাঁদের এহেন অযৌক্তিক উদ্ভট ভাবনার জন্যই আজ অধিকাংশ যুবক-যুবতী ধ্বংসের পথ বেছে নিচ্ছে। বাধ্য হচ্ছে কুপথে যেতে, কুকর্ম করতে। ব্যভিচারে লিপ্ত হতে। তাই নিয়মিত করছে পাপ, দিয়েছে পাপ সাগরে ঝাপ। একটু ভাবলেই দেখা যায়, এসব নষ্টামিকে পূর্ণ সাপোর্ট দিচ্ছে আমাদের সমাজ, পরিবার।
এক.
আমাদের পিতারা মেয়েকে এভাবে ঢিল দেয় যে, যেন ‘হালাল’ ব্যতীত আর কোনো রাস্তা ওনার মেয়ে চেনে না। তাই খুব সুন্দর সাজে সজ্জিত হয়ে সে-ও বের হয় লোকালয়ে। তার রংঢং আর অপার সৌন্দর্য দেখে পাগল হয় দশগ্রামের পুরুষ। ওদিকে চৌরাস্তার মোড়ে ওতপেতে বসে থাকে সুযোগসন্ধানী কোনো এক যুবক। প্রথমদিন চোখের ইশায়, দ্বিতীয় দিন মুখের ভাষায়, তৃতীয়দিন নম্বর আদানপ্রদানের মধ্যমে তাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। সে সম্পর্ক শেষমেশ ব্যভিচার অবধি গড়ায়। সব সুবিধা ভোগ করার পর ছেলেটা এবার পিছু হটে। টার্গেট করে অন্য কোনো রূপসীকে। এদিকে সমাজের চোখে মেয়েটি হয়ে যায় নষ্টা, ছেলেটি থাকে ফেরেস্তা! বন্ধুমহলে কুড়ায় বাহবা।
দু’টি পবিত্র জীবন অপবিত্র হওয়ার পেছনে কার ভূমিকা রয়েছে? একটু ভাবুন তো, বিবেকের চোখ দিয়ে ভাবুন। নিশ্চয়ই সদুত্তর পেয়ে যাবেন।
দুই.
কোনো দীনদার ছেলে যখন বিয়ের পয়গাম নিয়ে মেয়ের বাবার কাছে আসে, তখন তাকে জুড়ে দেয়া হয় হাজারটা অযাচিত শর্ত। মোটা অংকের মোহর, মাত্রাতিরিক্ত খরচ, বারবার অনুষ্ঠান, হরেকরকম উপহার ইত্যাদি-ইত্যাদির তোপের মুখে পড়ে ধূলিসাৎ হয় বিয়ের প্লানিং। মিটে যায় বিয়ের স্বাদ। ভেঙে যায় স্বপ্ন। বেচারা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে শূন্য হাতে। অথচ, মেয়ের বাবা যদি একটু সহনশীল হত, সহজে মেনে নিত, ছেলেটি অসৎ পথে যাওয়ার সুযোগ পেত না, চৌরাস্তার মোড়ে কেউ আর ওনার মেয়ের জন্য অপেক্ষা করার দুঃসাহসও দেখাতো না। নিষ্পাপ থাকতো দু’টি জীবন৷
তিন.
শৈশব থেকে ছেলে-মেয়ের অবাধ মেলামেশার ক্ষেত্রে আমাদের পিতা-মাতারা খুব উদাসীন। যার কারণে সেই উদাসীনতার রেশ আর কাটে না। কৈশোর জীবনেও এর প্রভাব প্রকট ভাবে বিস্তার করে। একটা মেয়ের ছেলেবন্ধু থাকতেই পারে, জাস্ট ফ্রেন্ড থাকাটা কোনো এঙ্গেল থেকে অপরাধ বলে মনে হয় না তাঁদের। অথচ আজ অধিকাংশ নারী কুপথে পা- বাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করছে জাস্ট ফ্রেন্ড নামক অমানুষটা। খবরের পাতা উল্টালে দেখা যায়, অহরহ নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে জাস্ট ফ্রেন্ডের হাতে। হওয়াটাই স্বাভাবিক, খুব স্বাভাবিক।
(হাদিসেও বর্ণিত আছে, “কোনো পুরুষ যখন কোনো নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হয়, তখন তাদের মধ্যে তৃতীয়জন হিসেবে উপস্থিত থাকে শয়তান।” শয়তানের উপস্থিতিতে এমন কাজ হওয়া তো স্বাভাবিকই বটে।)
রাতবিরেত অর্ধ-উলঙ্গ রূপসী যুবতী কোনো যুবকের পাশে থাকা সত্বেও যদি তার শরীরে কম্পন সৃষ্টি না হয়, যৌনক্ষুধা না লাগে, আমি বলবো— তার পুরুষত্বে সমস্যা রয়েছে। দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিত।
প্রিয় পাঠক, আবারও ভাবুন, মেয়ের এই অধঃপতনের পেছনে মূল ভূমিকা তার পিতা-মাতার নয় কী? তারা কী পারতো না, দীনদার কোনো ছেলের হাতে তাঁদের মেয়েকে সোপর্দ করতে, মেয়েটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, ইজ্জত বাঁচাতে, জাস্ট ফ্রেন্ড নামক অসভ্যের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করতে?
এভাবে আমি আরও হাজারটা কারণ দেখাতে পারি। আমাদের পিতা-মাতারা অসংখ্য-অগ্রগতি ভুল করছে, ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তা- দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। প্রতিটি ভুলের একটাই সমাধান, হালাল পথের পাথেয় হওয়া। পশ্চিমাদের অপসংস্কৃতিকে লাত্থি মেরে, আমাদের পূর্বপুরুষদের দেখানো রীতিকে ফের সাদরে গ্রহণ করা।
প্রতিজন যুবক-যুবতীর স্লোগান হোক, প্রতিটি বাড়ির দেওয়ালের- দেয়ালিকায় লিখা থাকুক, “ক্যারিয়ার নয়, বিয়ে হোক আগে”
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-