আরফাতুল মজিদ,কক্সবাজার •
শক্তিশালী সিন্ডিকেটের হাত দিয়েই ইয়াবা ট্যাবলেট ছড়িয়ে পড়ছে উখিয়া-টেকনাফ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশে। মাঝেমধ্যে দুই-একটি চালান ধরা পড়লেও বেশিরভাগ নিরাপদ গন্তব্যে চলে যাচ্ছে।
সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া এসব চালান ধরা অসম্ভব। সংশ্লিষ্টদের মতে, যে পরিমাণ ইয়াবার চালান উদ্ধার হচ্ছে, তার অন্তত দশগুণ নিরাপদে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এলিট বাহিনী র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন অভিযানের পরেও বন্ধ হচ্ছে না ইয়াবা পাচার।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সোমেন ম-ল বলেন, গেল মে মাসে কক্সবাজার মাদকদ্রব্য কার্যালয়ে ৩১টি মামলা হয়েছে ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে। এক লাখের উপরে ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। প্রতিদিন অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসনিকভাবে ইয়াবা বন্ধ সম্ভব নয়। সামাজিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
গত ১ জুন মধ্যরাতে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবির থেকে ৫ লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব-১৫ এর সদস্যরা। এ সময় (৪৫) নামে শিবিরের এক সাবেক মাঝিকে আটক করা হয়। আটক গুরা মিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের ৯ নং ক্যাম্পের জি-ব্লকের মৃত নুর আহমদের ছেলে। গুরা মিয়া ওই ক্যাম্পের সাবেক হেড মাঝি।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান বলেন, একটি সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ী চক্র দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান নিয়ে আসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। প্রতিদিন কোন না কোন অভিযানে ইয়াবার ছোট বড় চালান ধরা খাচ্ছে।
গত ৩০ মে র্যাব-১৫ এর চৌকস একটি আভিযানিক দল মাদক বহনের সংবাদ পেয়ে হোয়াইক্যং নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন তল্লাশি চালায়। এ সময় টেকনাফ থেকে কক্সবাজারগামী একটি পিকআপ চেকপোস্টে পৌঁছলে র্যাব সদস্যরা তল্লাশি করতে চাইলে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধাওয়া করে পিকআপ চালক হ্নীলা ইউনিয়নের দক্ষিণ আলীখালীর মৃত ফরিদ আলমের ছেলে মো. সেলিম (২৪) কে আটক করে। সহকারী চালক পশ্চিম সিকদার পাড়ার নুর মোহাম্মদের পুত্র মো. মোরশেদ (২৮) পালিয়ে যায়। পরে আটক চালকের স্বীকারোক্তিমতে সিটের নিচে ৭ হাজার ৯শ ৫০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। পিকআপটি জব্দ করা হয়। র্যাবের অভিযানে আগেও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার-টেকনাফ এলাকায় গভীর সাগরে বেশ কয়েকটি ইয়াবার চালান ধরা পড়ে।
১ জুন কক্সবাজার জেলা পুলিশের সদর মডেল ও টেকনাফ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। এর মধ্যে কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া থেকে ৪ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা ও মাদক বিক্রয়ের নগদ ৪১ হাজার টাকাসহ একজন নারী মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। আটককৃত নারী, কক্সবাজারের দক্ষিণ টেকপাড়া (পল্লবী লেইন), ৪ নং ওয়ার্ডের জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস (৩২)।
প্রতিদিন কক্সবাজারে ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। হয়তো র্যাব, না হয় পুলিশ অথবা বিজিবি কিংবা কোস্টগার্ড বা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর প্রতিদিন ইয়াবা জব্দ করছে। আটকও হচ্ছে পাচারকারী কিংবা ব্যবসায়ীরা। তবুও ইয়াবার জোয়ার বন্ধ হচ্ছে না।
পুলিশের পক্ষ থেকে এ বছর সর্ববৃহৎ ইয়াবার চালান জব্দ করা হয় কক্সবাজার শহরে। সেই অভিযানে নেতৃত্ব দেন কক্সবাজারের ওসি ডিবি শেখ মো. আলী। ৯ ফেব্রুয়ারি চৌফলদণ্ডী ব্রিজ থেকে ৭ বস্তা ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় শহরের নুনিয়ারছড়ার ফারুকসহ দুজনকে। ওই সাত বস্তায় ১৪ লাখ ইয়াবা ছিল। পরে ফারুকের বাসা থেকে আরো সাড়ে তিন লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছিল। ওই দিন সর্বমোট সাড়ে ১৭ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, মাদক কারবারিদের তালিকা করা হচ্ছে। এখন নতুন নামও তালিকায় সংযুক্ত করা হচ্ছে। তালিকাভুক্ত অনেকেই কারাগারে আছে। আবার অনেকেই জামিনে বেরিয়ে পুনরায় ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়েছে। তাদেরও কাউকে কাউকে ফের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা বড় কারবারি তারা এলাকায় থাকে না। প্রতিদিনই নতুন নতুন মাদক কারবারি তৈরি হচ্ছে, ধরাও পড়ছে। শুধু বিক্রেতা নয়, মাদক কারবারে অর্থ লগ্নিকারী, পৃষ্ঠপোষক, সংরক্ষক, বহনকারী, খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-