রোহিঙ্গাদের এনআইডি ইস্যু: ফেঁসে যাচ্ছেন সাবেক দুই কাউন্সিলর

অনলাইন ডেস্ক •

অবৈধ উপায়ে রোহিঙ্গা নাগরকিদের ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্তকরণের ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও এবার ফেঁসে যাচ্ছেন চসিকের সাবেক দুই কাউন্সিলরও।

শুধু তারাই নয়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড মেম্বারসহ ইসির কর্মকর্তাদেরও ভুয়া নাম পরিচয় জানা স্বত্ত্বেও তাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান এবং প্রত্যয়ন দেয়ার ঘটনার দালিলিক প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দীর্ঘ অনুসন্ধানে এমন তথ্য ওঠে আসে। ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছে সংস্থাটি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশ্বস্ত সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, আজ বৃহস্পতিবার অথবা আগামী সপ্তাহে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্তকরণসহ বিভিন্ন অপরাধের দায়ে পৃথকভাবে অন্তত পাঁচটি মামলা দায়ের করবে দুদক। যাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক দুই কাউন্সিলর, হাটহাজারী উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড মেম্বার, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও রোহিঙ্গা নগরিকসহ বিভিন্নজনকে আসামি করা হবে। ইতোমধ্যে মামলা দায়েরের বিষয়ে কমিশনের অনুমতিও পেয়েছে সংস্থাটির অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।

যাদের বিরুদ্ধে দালিলিক প্রমাণ পেয়েছে দুদক : ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আলহাজ মোহাম্মদ ইসমাইল, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেল, পাঁচলাইশ থানার সাবেক নির্বাচন অফিসার আব্দুল লতিফ শেখ (বর্তমানে পাবনায়), হাটহাজারীর ৩ নং মির্জাপুর ইউনিনের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আবছার, ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য নুরুল ইসলাম, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সনদ সহকারী মো. ফরহাদ হোসাইন, ডবলমুরিং নির্বাচন অফিসের সাবেক ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মোহাম্মদ শাহজামাল, সাবেক প্রুফ রিডার রন্ত বড়ুয়া, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সনদ সহকারী সুবর্ণ দত্ত, দালাল মো. সিরাজুল ইসলাম, রোহিঙ্গা নাগরিক মোহাম্মদ ইসমাইল, মেহের জান, জেলা নির্বাচন অফিসারের অফিস সহায়ক মো. নুর আহম্মদ, ইসির টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সৈকত বড়ুয়া, সত্য সুন্দর দে, মোস্তফা ফারুক, ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের সাবেক ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মহিউদ্দিন তারেক, হাটহাজারীর ৩ নং মির্জাপুর ইউনিনের জন্ম সনদ প্রস্তুতকারী মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, মোহাম্মদ আজিজুর রহমান ও তার পিতা মো. আ. ছালাম।

দুদক সূত্রে জানা যায়, অসৎ উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গা নাগরিক লাকী আক্তারকে (তার প্রকৃত নাম রমজান বিবি) ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করতে সরাসরি জড়িত ছিলেন নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন। জয়নাল নিজ বাসায় বসে নির্বাচন কমিশনের ল্যাপটপ ব্যবহার ডাটা এন্ট্রি করেন। যাতে হাটহাজারী উপজেলার নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. সাইফু উদ্দিন চৌধুরী ডাটা এন্ট্রিতে সহায়তা করেন। পরবর্তীতে রোহিঙ্গা লাকী ও তার দুই মেয়েকে পাসপোর্ট করতে অসৎ উদ্দেশ্যে জাতীয়তা সনদপত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করে হাটহাজারীর ৩ নং মির্জাপুর ইউনিনের ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য নুরুল ইসলাম, জন্মসনদ প্রস্তুতকারী মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, ৩ নং মির্জাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আবছার, দালাল মোহাম্মদ আজিজুর রহমান ও তার পিতা মো. আ. ছালাম। একটি মামলায় এদের আসামি করা হবে।

এছাড়া বাকি চার মামলাতেও রোহিঙ্গা নাগরিকদের ভুয়া পরিচয় দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), পাসর্পোট করার কাগজপত্র দেয়ার ঘটনায় অন্যদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। যারা মূলত একে অপরের যোগসাজসে অসৎ উদ্দেশ্যে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার আশ্রয়ে ভুয়া পরিচয়, নাম ঠিকানা ব্যবহার করে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান ও অবৈধ উপায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে একে অপরের যোগসাজশে স্মার্ট কার্ড প্রদান করে দ-বিধি’র ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণসহ বিভিন্ন অপরাধের দায়ের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা দালিলিক প্রমাণসহ কমিশনের প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপ্রেক্ষিতে গত ৮ জুন দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলা দায়েরের অনুমতি দেন। যা আজ বৃহস্পতিবার অথবা আগামী সপ্তাহের যে কোন মুহূর্তে মামলা দায়ের হবে।

আরও খবর