শিপন পাল •
দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় টিকাদান কর্মসূচি। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। কাঁচামাল সংকটের অজুহাতে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ সরবরাহ করেই ভারত সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় দেশে দেখা দেয় টিকা সংকট। এই সংকটের আওতায় রয়েছে কক্সবাজারও।
ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলায় যারা টিকার ১ম ডোজ নিয়েছেন তাদের সংখ্যায় আছেন ৭৯৯৭১ জন।
সেই হিসেবে জেলায় ১ম ডোজের নিবন্ধনকারীদের জন্য প্রয়োজন ৭৯৯৭১ দ্বিতীয় ডোজের টিকা। কিন্তু জেলায় ১ম ডোজ টিকার পর দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে সক্ষম হয়েছেন মাত্র ৫৬৯০০ জন নিবন্ধনকারী। কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান মতে জেলায় নিবন্ধনকারীর জন্য দ্বিতীয় ডোজের সংকট রয়েছে ২৩০৭১টি টিকা। যেগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১ম ডোজের পরবর্তী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২য় ডোজ দিতে পারেনি।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ম ডোজ নিয়েছেন মোট ৭৯৯৭১ জন নিবন্ধনকারী। এরমধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ১ম ডোজের টিকা নিয়েছেন ২০১৭৩ জন, মহেশখালী উপজেলায় ৭৯৯৫ জন, চকরিয়া উপজেলায় ১৩১৭৯ জন, পেকুয়া উপজেলায় ৪৫৩৫ জন, উখিয়া উপজেলায় ৮৩১৩ জন, টেকনাফ উপজেলায় ৬৩৩১ জন, কুতুবদিয়া উপজেলায় ৩৬৯১ জন ও রামু উপজেলায় ১৫৭৫৪ জন নিবন্ধনকারী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে জেলার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে পাঁচ ধাপে প্রায় তিন বছরে দেশের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও গর্ভবতী নারী ব্যতিত মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার।
প্রতিজনকে দেয়া হবে ২ ডোজ করে টিকা। করোনা ভাইরাসের অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা আবিস্কার হওয়ার পর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশ বেক্সিমকোর ফার্মাসিউটিক্যালের মাধ্যমে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করে। কিন্তু প্রথম চালানের পর ৫০ লাখ টিকা আসে গত জানুয়ারি মাসে। ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ২০ লাখ। এরপর সেরাম আরা কোনো টিকা পাঠায়নি। তাই দেশের অন্যান্য স্থানের মতো কক্সবাজার জেলায় দ্বিতীয় ডোজের টিকার সংকট রয়েছে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলা। তাই জেলার স্থানীয় ও রোহিঙ্গাসহ কক্সবাজারে দৈনিক বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। জেলার অনেক মানুষ খুবই অসচেতন। টিকার ১ম ডোজ নিলেও প্রয়োজন ২য় ডোজের। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে তারপরও শঙ্কামুক্ত নয় টিকাপ্রাপ্তরা। তার উপর জেলায় রয়েছে ২য় ডোজের টিকার সংকট। তাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা।
সূত্রে আরও জানা যায়, জেলায় এই পর্যন্ত করোনায় প্রাণ হারিয়েছে ১১৬ জনের মতো। এরমধ্যে রয়েছে ১৮ জন রোহিঙ্গা। তাই এই মুহুর্তে সচেতনতা ছাড়া দ্বিতীয় কোন বিকল্প নেই।
কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন অফিসে পরিসংখ্যানবিদ পঙ্কজ পাল দৈনিক কক্সবাজারকে জানান, কক্সবাজার জেলার প্রতিটি উপজেলায় করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় টিকার ১ম ডোজ পরবর্তী ২য় ডোজের সংকট রয়েছে। তারমধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ১৬২৯৯ জন নিবন্ধনকারী, মহেশখালী উপজেলায় ৫৩৭৭ জন নিবন্ধনকারী, চকরিয়া উপজেলায় ৮৮৩৬ জন নিবন্ধনকারী, পেকুয়া উপজেলায় ২৪৬৫ জন নিবন্ধনকারী, উখিয়া উপজেলায় ৫৭৫৯ জন নিবন্ধনকারী, টেকনাফ উপজেলায় ৪৫৯৯ জন নিবন্ধনকারী, কুতুবদিয়া উপজেলায় ২১১৬ জন নিবন্ধনকারী ও রামু উপজেলায় ১১৪৪৯ জন নিবন্ধনকারী দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন।
তিনি আরও জানান, আজকের দিন পর্যন্ত ১ম ডোজ পরবর্তী জেলায় দ্বিতীয় ডোজের সংকট রয়েছে ২৩০৭১টি টিকার। সেই হিসেবে কক্সবাজার সদর উপজেলায় সংকট রয়েছে ৩৮৭৪টি, মহেশখালী উপজেলায় ২৬১৮টি, চকরিয়া উপজেলায় ৪৩৪৩টি, পেকুয়া উপজেলায় ২০৭০টি, উখিয়া উপজেলায় ২৫৫৪টি, টেকনাফ উপজেলায় ১৭৩২টি, কুতুবদিয়া উপজেলায় ১৬৭৫টি ও রামু উপজেলায় ৪৩০৫ জন নিবন্ধনকারী দ্বিতীয় ডোডের অপেক্ষায় রয়েছে। যেগুলা সরকার যখন টিকা সরবরাহ করবে তখনই নির্দেশনা মোতাবেক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়া হবে বলে সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-