কক্সবাজারে ঘোড়ার মৃত্যু: ২ সচিবসহ ১৩ জনকে আইনি নোটিশ

এম. জাহেদ চৌধুরী •


কক্সবাজারে পর্যটকদের বিনোদন দিয়ে ঘোড়ার মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা আয় করে স্বাবলম্বী হওয়া ঘোড়ার মালিকরাও সেই আয়ের অবলম্বন ঘোড়াকে হেফাজতে না রেখে বেওয়ারিশে ঠেলে দিয়েছে।

অথচ সেই ঘোড়া নিয়েই মালিকরা আয়েসি জীবনযাপন ও গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন। কিন্তু সেই ঘোড়াগুলো মালিকদের আয়-রোজগার করে দিতে পারছে না করোনা সংক্রমণরোধে বিধিনিষেধের কারণে।

কক্সবাজার সৈকতে পর্যটক নিষিদ্ধ থাকায়। এ কারণে ঘোড়ার খাবার বন্ধ করে দিয়ে বেশিরভাগ ঘোড়া রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছে মালিকরা। ফলে অযত্ন অবেহলায় পুষ্টিহীনতা ও বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকটি ঘোড়ার মৃত্যু হয়েছে।

মালিক সমিতির দাবি, চলমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউ’র লকডাউনে ৬টি ও গত বছরের করোনাকালীন লকডাউনে ২৪টিসহ ১৩ মাসে মোট ৩০টি ঘোড়া মারা গেছে। তবে ৩০টি ঘোড়া মারা গেলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না প্রশাসন। গণমাধ্যমে ঘোড়ার মৃত্যু সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। ঘোড়ার মালিকদের দাবি, আয় বন্ধ হওয়ায় ঘোড়ার খাবার দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে ঘোড়া রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, সৈকতের পর্যটকদের বিনোদন দিয়ে প্রতি বছরের পর্যটন মৌসুমের টানা ৪ মাসে (ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফ্রেরুয়ারি ও মার্চ) প্রতিদিন গড়ে একটি ঘোড়া দিয়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত মালিকরা আয় করে থাকেন। গড়ে ৩ হাজার টাকা হিসেব করা হলেও চার মাসে একটি ঘোড়া দিয়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করেন মালিকরা। বাকি মাসগুলোতে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়ে থাকে।

ঘোড়ার মালিক সমিতির সভাপতি আসান উদ্দীন নিশান স্বীকার করেছেন, ঘোড়ার আয় দিয়ে অনেকেই জায়াগা কিনে বাড়ি ঘর করেছেন, অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। পর্যটন মৌসুমে টানা ৪ মাস একটি ঘোড়া দিয়ে আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা আয়ের কথা অকপটে মেনে নিলেও সত্যিকার অর্থে আয় বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ মালিকের ঘোড়াকে খাবার যোগান দেওয়ার সামর্থ্য নেই বলে দাবি করেন কক্সবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা ডা. অসিম বরণ সেন বলেন, ঘোড়ার মৃত্যু নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। খাদ্যের অভাবে ঘোড়া মারা যাওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। আমরা ঘোড়া মালিকদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। আগামীতেও এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, মিডিয়ায় খবরটি আসার পর ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের (পর্যটন ও প্রটোকল) সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন, বিনোদনের জন্য ২২ জন ঘোড়া মালিককে অনুমতি দেয়া রয়েছে। করোনা সংক্রমণ রোধে সৈকত ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হলে ঘোড়া মালিকদের আয় বন্ধ এবং ঘোড়াগুলো খাদ্য সংকটে পড়ে। এজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য বিতরণ করা হয়। তাই খাদ্য সংকট থাকার কথা নয়।

এদিকে, কক্সবাজার সৈকতের ঘোড়াগুলোর খাদ্য সংকটের খবরে ৫৫টি ঘোড়ার জন্য মালিকদের এক মাসের খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন এসিআই মোটরস। এছাড়া আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কয়েকদিনের খাবার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে, কক্সবাজারের রাস্তায় অবহেলিত অবস্থায় ঘোড়া পড়ে আছে, বেশ কয়েকটি ঘোড়া মারাও গেছে- এমন তথ্য পেয়ে তিনটি সংগঠন আইনি নোটিশ দিয়েছেন ২ সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরের ১৩ জন কর্মকর্তাকে। সংগঠন তিনটি হলো- বেলা, ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি ও পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন।

আরও খবর