শাহজাহান চৌধুরী শাহীন :
কক্সবাজারের ঈদগাঁও থানাধীন আউলিয়াবাদ ঢালারদোয়ার এলাকার গৃহবধু রুনা আক্তারকে এলোপাতাড়ী কুপিয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় জড়িতদের সাবেক স্বামী মুর্শেদ মিয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গৃহবধুর বাবা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ২৪ মে ঈদগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
গত ২৩ মে রাতে গৃহবধূ রুনাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও মারধর করে সাবেক স্বামীসহ দুর্বৃত্তরা। আহত রুনা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
এদিকে, হামলাকারী দুর্বৃত্তদের রক্ষার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্টো অপপ্রচার, ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টাসহ মহল বিশেষের অপতৎরতায় এলাকাবাসী ও আক্রান্ত পরিবারের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অপরাধীদের রক্ষার কৌশল হিসেবে মহল বিশেষ বিভিন্ন মাধ্যমে অপতৎপরতায় মুমূর্ষু অবস্থায় থাকা একজন নারীর সংসার ভাগার উপক্রম হয়েছে, ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
আহত রুনার পরিবার ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে,২৩ মে রাত আনুমানিক ১০টার সময় ঈদগাঁও ইউনিয়নের আউলিয়াবাদ ঢালারদোয়ার এলাকার গৃহবধূ রুণা আকতারের বসতবাড়ীর রান্না ঘরের ভিতর ডুকে তার সাবেক স্বামী মোর্শেদ মিয়াসহ আরো অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা রুনাকে নাকে ও মুখে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এবং মারধর করে গুরুতর আহত করে। এসময় সাবেক স্বামী মোর্শেদ গৃহবধূ রুনাকে শ্লীলতাহানি করে গলায় থাকা ৩০ হাজার টাকা দামের স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়।
রুনার চিৎকারে তার বাবা শফিকুল ইসলাম ও ভাই রিদুয়ানসহ আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ঘটনার মাস্টার মাউন্ড মোর্শেদসহ অন্যান্যরা খুন ও হামলার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। আহত রুনাকে উদ্ধার করে দ্রুত কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থা আশংজাজনজ হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। আহত রুনা আক্তার বর্তমানে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবদুল হালিম বলেন, ঘটনার পরপরই আহত রুনাকে থানায় আনা হয়েছিল। সেখানে আহত রুনা পুলিশকে জানিয়েছেন, তার সাবেক স্বামী মোর্শেদ ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার পর সিআইডির ফরেসনসিক বিভাগ ঘটনার আলামত, আঙুলের চাপ ও পায়ের চাপসহ বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন।
আহত গৃহবধু রুনা আক্তারের বাবা ঈদগাঁও আউলিয়াবাদ ঢালারদোয়ার এলাকার মৃত হাজী মোজাহের আহম্মদের ছেলে শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ঈদগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন। ঈদগাঁও থানার মামলা নং-৮, জিআর-২২৮।তাং-২৪/৫/২০২১।
মামলায় আসামী করা হয়েছে,কক্সবাজার ঈদগাঁও থানাধীন নাপিতখালী হাজীপাড়া গ্রামের মৃত মনছুর আলম প্রকাশ বলি মনছুরের ছেলে মোর্শেদ মিয়া (৩৫) ( তার মেয়ের সাবেক স্বামী ) সহ অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জনকে।
মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনার প্রধান আসামী মোর্শেদ মিয়ার সাথে আমার মেয়ে রুনা আক্তারের বিয়ে হয়েছিল গত তিন বছর আগে। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মোর্শেদ মিয়ার সাথে বনিবনা না হওয়ায় উভয়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে গত ২ বছর পূর্বে আমার মেয়ে রুনাকে ফিরোজ (৪৫) এর সাথে বিয়ে দেয়া হয়। সেই থেকে মেয়ে রুনা আমার বসতঘরের পাশে ঘর করে সুখের সংসার চালিয়ে আসছে। আমার মেয়েকে ফিরোজের সাথে বিয়ে দেয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় মুর্শেদ আমার মেয়ে রুনা ও তার স্বামী ফিরোজকে মেরে ফেলার হুমকিও দিত।
রুনার বাবা শফিকুল আরও বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমার অসুস্থ মেয়ে রুনা আকতার ঈদগাঁও বাজারে ডাক্তার দেখিয়ে তার স্বামীর সহকারী ঈসমাইল সাথে নিয়ে রাত পৌনে ১০টার সময় বাড়ীতে আসেন।
রাত ১০ টা ৫ মিনিটের সময় মুর্শেদসহ তার ঘটনার সময় আমার মেয়ে ও তার সহযোগীরা আমার মেয়েকে নাক ও মুখে কুপিয়ে আহত করে। মেয়ে রুনা ও প্রত্যক্ষদর্শী ঈসমাইলের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে মামলা করেছি। আমার মেয়ের বর্তমান স্বামী ফিরোজ ঘটনায় জড়িত বলে মহল বিশেষের অপপ্রচার খুবই দুঃখজনক।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঈদগাঁও থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. কামাল হোসেন বলেন, মামলার প্রধান আসামী মোর্শেদ মিয়াকে গ্রেফতারের চেস্টা চালানো হলে তিনি স্বেচ্ছায় গত ২৫ মে কক্সবাজার (সদর) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পন করেন এবং আদালতে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু আসামী মুর্শেদ জামিন পেলে ন্যায় বিচার বিঘ্ন হবে বলে আদালত মনে করেন। সার্বিক বিবেচনায় আসামী মোর্শেদ মিয়ার জামিন আবেদন না মনজুর করে তাকে সিডাব্লিউ মুলে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আহত গৃহবধূ রুনা আক্তারের স্বামী ব্যবসায়ী ফিরোজ বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। সোনালী এন্টারপ্রাইজ নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমাকে ও স্ত্রী রুনাকে ইতোপূর্বে অনেক বার হত্যার হুমকি দিয়েছে মোর্শেদ।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ মে মধ্যযুগীয় কায়দায় ঘটনাটি করা হলো।কিন্ত মহল বিশেষ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে আমি ও আমার পরিবারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের চেষ্টায় মেতে উঠেছে।এমনকি আমার স্ত্রীকে আমি হামলা করেছি বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইংগিত করছে, যা ঘটনাটি ভিন্ন হাতে প্রবাহিত করে অপরাধীদের রক্ষার সামিল। আমি এই ঘটনার ন্যায় বিচারের দাবী করছি।
স্থানীয় সাংবাদিক নাছির উদ্দিনসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, গৃহবধূ রুনাকে নির্মম ভাবে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় সবাই ব্যতিত।
তারা বলেন, আহত রুনাকে মুমূর্ষু অবস্থায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে পুলিশের কাছে আহত রুনা নিজেই স্বীকারোক্তি দেন, তার সাবেক স্বামী মোর্শেদ ঘটনাটি করেছে। যা ভিডিও ক্লিপ এএসপি, ওসিসহ পুলিশের কাছে আছে। জেনেছি, সেখানে লিখিত স্বীকারোক্তি দেন আহত রুনা।
ব্যবসায়ী ফিরোজের স্ত্রীকে নারকীয়ভাবে আহত করার ঘটনাটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ মহলের উল্টা, পাল্টা স্ট্যাটাস আমরা মেনে নিতে পারছি না। অপরাধ ডাকার জন্য নাকি অপরাধীকে রক্ষার জন্য ওই মহলের এধরনের স্ট্যাটাস?
দায়িত্বশীল কিছু মানুষের দায়িত্বজ্ঞানহীন সাজানো স্ট্যাটাসে মুমূর্ষু অবস্থায় থাকা একজন নারী রুনার সংসার ভাগার উপক্রম হয়েছে, বঞ্চিত হতে বসেছে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে। একজন নারীকে এভাবে আহত করার ঘটনার ন্যায় বিচার আমরা চাই।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-