কক্সবাজারে ভীতিকর হারে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ: আরও দুই রোহিঙ্গার মৃত্যু

বিশেষ প্রতিবেদক •

কক্সবাজারে গত একমাস থেকে ভীতিকর হারে বেড়েছে করোনার সংক্রমন ও মৃত্যু। মৃত্যুর তালিকায় যেমন আছেন জেলার নারী-পুরুষ, তেমন আছেন উখিয়া-টেকনাফের শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারাও। প্রাণঘাতি এ ভাইরাসের মারা যাচ্ছেন বৃদ্ধ,মধ্যম বয়সি থেকে তরুণ-যুবকরাও।

বিশেষ করে ঘনবসতির রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ১৫দিনে এই সংক্রমণ ব্যাপক আকার নিয়েছে। গোষ্ঠী সংক্রমণ চলছে ব্যাপক ভাবে। এক দেহ থেকে অন্য দেহে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারনেই আক্রান্তের সংখ্যা এত বেশি হচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

রোহিঙ্গাদের মধ্যেও হঠাৎ করে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে ৩০মে পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। যা গত ২১মে থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। গত ৯ দিনে ক্যাম্পে আক্রান্ত হয়েছে ৩২১ জন এবং মারা গেছে ২ জন।

এদিকে ২৫মে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত চব্বিশ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ জন রোহিঙ্গাসহ ১১০ জন৷ আর মৃত্যূবরণ করেছে ২ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯ হাজার ৯২৩ জনে এবং মৃত্যূবরণ করেছেন ১১১ জন।

সর্বশেষ ২১মে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে করোনায় মারা যাওয়া রোহিঙ্গা রোগী হলেন-উখিয়া শরনার্থী শিবিরের ক্যাম্প-১২ বি-ই-৭ এর বহনত খাতুন(৭৫) এবং ক্যাম্প-১৫ বি-ই-৭ এর খাতুন ইসলাম(৬০)। তারা দজনই গত ১৯ ও ২০ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আর ২১ ও ২০ মে মৃত্যূর কোলে ঢলে পড়েন।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৪৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৬জন। তন্মধ্যে সদর উপজেলা ও পৌরসভার ২৪ জন,উখিয়া উপজেলায় ১৮ জন,টেকনাফ উপজেলায় ৬ জন,চকরিয়া উপজেলায় ১ জন, মহেশখালী উপজেলায় ৩ জন,রামু উপজেলায় ৬ জন,পেকুয়া উপজেলায় ১ জন এবং ৩৪ জন রোহিঙ্গা। নেগেটিভ ছিলেন ৬৩৯ জন আর ফলোআপ ছিলেন ১৪ জন। এছাড়া এদিন রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরের ২৫৫টি নমুনার মধ্যে ৩৪ জন পজিটিভ ছিলেন।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭১৩জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৯৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনাভাইরাসে ৯১জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯ হাজার ৯২৩ জনে। সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ৬০৮ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ৩৮৭ জন। নতুন করে ২ জন রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটেছে। জেলায় করোনায় এখন পর্যন্ত মোট ১৫ রোহিঙ্গাসহ ১১১ জন মারা গেছেন। তার মধ্যে সর্বাধিক কক্সবাজার পৌরসভা ও সদর উপজেলাতেই ৫৬ জনের মৃত্যূ হয়েছে। আক্রান্তের দিক দিয়েও এগিয়ে রয়েছে এই এলাকা।

এছাড়া জেলায় করোনাক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১ হাজার ৯২ জন।এর মধ্যে উখিয়ায় ৯০২ জন এবং টেকনাফে ১৯০ জন।

উল্লেখ্য দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে প্রথম পর্যায়ের থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ৷ এখনও পর্যন্ত দেশের কিছু জেলায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কিন্তু আবার বেশ কিছু জেলায় বেলাগাম হয়ে গিয়েছে করোনা পরিস্থিতি ৷

এর জেরে স্বাভাবিক ভাবেই গোটা দেশে ফের একবার আতঙ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ৷ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে কক্সবাজার জেলাতেও।

আরও খবর