‘করোনার ভয়াবহতা বোঝাতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ’

অনলাইন ডেস্ক •

দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। আগে থেকেই ছিল সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট, ইউকে ভ্যারিয়েন্ট ও ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্ট। গতবছরের শীতের সময় থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণের সংখ্যা কমে এলেও মার্চে শনাক্ত বাড়তে থাকে হু হু করে। সেসময় একদিনে সর্বোচ্চ ১১২ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

এ অবস্থায় সরকার কঠোর বিধিনিষেধ দেয়। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া আটকাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সেসবও উপেক্ষা করেছে মানুষ। কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। অথচ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে গণপরিবহন ও বাজার থেকে মানুষের সংক্রমণ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

শহরে মাস্ক পরার প্রবণতা কম। গ্রামের মানুষ তো ভাবে গ্রামে করোনাই নেই। দরিদ্রদের ধারণা, এটা ‘বড়লোকের অসুখ’।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা নিয়ে মানুষকে সঠিক বার্তা দিতে এবং করোনার ভয়াবহতা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে। সাধারণ মানুষকে বোঝানো না গেলে লকডাউনের ফল দীর্ঘস্থায়ী হবে না। যেভাবে মানুষকে মোবিলাইজ করার কথা ছিল, সেটা করতে পারিনি আমরা। মানুষের কাছে সঠিক তথ্য যাচ্ছে না।

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩৪তম সভায় সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। কমিটি মনে করে, ঈদের আগে যাতায়াত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায় যায়নি। ঈদের পর একইভাবে মানুষ ফিরে এলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়বে।
কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সহিদুল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকার ঘোষিত বিধি নিষেধের কঠোর বাস্তবায়নের সুপারিশ জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চত করা প্রয়োজন।

স্বাস্থ্যসেবা শুরু হয় বাড়ি থেকে। স্বাস্থ্য সেবা কর্মী, পরিবারকল্যাণ কর্মীরা বাড়িতে প্রতিমাসে গিয়ে মা ও শিশুস্বাস্থ্যের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার যেসব বার্তা রয়েছে সেগুলো দিয়ে থাকেন, উঠান বৈঠকসহ নানা কাজ করেন। যার কারণে এখন বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি এতো সাফল্য পেয়েছে। এমনটা জানিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখন প্রতিটি মা জানেন সন্তানের জন্মের পর টিকা দিতে হবে।

কিন্তু করোনার শুরু থেকেই জনগণকে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাঠপর্যায় থেকে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের এখানে কাজে লাগানো হলে রোগী শনাক্ত ও তাদের সংস্পের্শে আসাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যেতো। ভিয়েতনাম, ভুটান এভাবেই করোনা প্রতিরোধ করেছে।
করোনার প্রায় দেড় বছরে স্বাস্থ্যবিভাগ সামগ্রিকভাবে কিছু চিন্তা করেনি। এমন মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল। তার মতে, এ নিয়ে কোনও তদারকি হয়নি। কারও কোনও জবাবদিহিতাও ছিল না।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্বাস্থ্যবিভাগ করোনার সময় নিজেদের দুর্নীতি, দুর্বলতা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। করোনা নিয়ে ভাবার মতো সক্ষমতা তাদের ছিল না।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ঘণ্টায় (২০ মে-২১ মে) পর্যন্ত করোনাতে নতুন শনাক্ত ১৫০৪ জন। ঈদের ছুটির আগ থেকে ঈদের তিনদিন পর পর্যন্ত করোনাতে নতুন শনাক্তের সংখ্যা কমে। সেসময় কমে যায় পরীক্ষার সংখ্যাও। তবে ছুটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পরীক্ষা ও শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
আজ শুক্রবার (২১ মে) রোগী শনাক্তের হার ছিল আট দশমিক ২২ শতাংশ, যা কিনা গত এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ।

১৫ অক্টোবর ২৬১ জন, ১৬ মে ৩৬৩ জন, ১৭ মে ৬৯৮ জন, ১৮ মে এক হাজার ২৭২ জন, ১৯ মে এক হাজার ৬০৮ জন, ২০ মে এক হাজার ৪৫৭ জন রোগী শনাক্ত হবার কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

আরও খবর