আবদুল মতিন খসরু চিরকাল যে কারণে স্মরণীয় থাকবেন

কক্সবাজার জার্নাল ডটকম •

অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু আজ মারা গেছেন। কিন্তু একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতার জন্য আব্দুল মতিন খসরুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না। আব্দুল মতিন খসরু কখনোই আওয়ামী লীগের বড় নেতা ছিলেন না। কুমিল্লা অঞ্চলের রাজনীতি করতেন।

সুপ্রিম কোর্টের একজন মেধাবী আইনজীবী ছিলেন। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের ঐতিহাসিক কিছু মুহূর্ত এবং সময় আসে যে সময়ে তিনি হয়ে ওঠেন অনন্য অসাধারণ।

১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ যেই নির্বাচনে ক্ষমতায় আসেন সেই নির্বাচনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আইনমন্ত্রী হবেন এটা ছিল প্রায় অবধারিত। কিন্তু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নাটকীয় ভাবে ওই নির্বাচনে তাঁর আসন থেকে পরাজিত হন।

এ সময় আওয়ামী লীগের আইন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সামনে চলে আসেন অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন একজন প্রতিমন্ত্রীকে, অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরুকে।

১৯৯৬ সালের জুন মাসে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার জন্য গ্রহণ করার পর আওয়ামী লীগের জন্য প্রথম দায়িত্ব ছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করা এবং জাতির কলঙ্কমোচন। আর সেজন্যই সবচেয়ে বড় বাধা হয়েছিল ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হবে নাকি সাধারণ আইনে হবে এই বিষয়গুলো মীমাংসিত হওয়ার প্রশ্ন ছিল। আর এখানেই আব্দুল মতিন খসরু তার বিজ্ঞতার পরিচয় দেন।

আব্দুল মতিন খসরু তার বিভিন্ন আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করে বুঝতে পারেন যে ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করতে গেলে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন নাই। এটি একটি প্রচলিত সাধারণ আইন। জাতীয় সংসদে থেকে এই কুখ্যাত কালো আইনটিকে বাতিল করা হয়। সেই সময় আব্দুল মতিন খসরুর সংসদের দেওয়া বক্তৃতাটি ছিল আবেগপূর্ণ এবং অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ সুগম হয় এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে না গিয়ে প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের সিদ্ধান্ত নেন। যে বিচার বিভিন্ন ধাপ প্রতিকূলতা বাধা অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত শেষ হয়েছিল। ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের জন্য আব্দুল মতিনের নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

দ্বিতীয় মেয়াদে যখন আওয়ামী লীগে ক্ষমতায় আসে ২০০৮ সালে সে সময়ে আব্দুল মতিন খসরুকে নিয়ে বিভিন্ন সভায় আলোচনা হলেও তিনি আর মন্ত্রী হননি। কেন আব্দুল মতিন খসরু আর মন্ত্রী হলেন না সে নিয়েও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন গুঞ্জন ছিল। তবে ওয়ান-ইলেভেনের সময় যারা আইনি লড়াই করেছিল প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মুক্তির জন্য তাদের মধ্যে আব্দুল মতিন খসরুও ছিলেন অন্যতম ছিলেন।

তিনি মন্ত্রী হতে পারেন না পারেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সভাপতি হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে তিনি একটি স্বতন্ত্র অবস্থান গ্রহণ করে রেখেছিলেন। তার মৃত্যু শুধুমাত্র আইনজীবীর পদ শূন্য করেনি বরং একজন আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতার শূন্যতাও অনুভূত করালো।

আরও খবর