উ‌খিয়া-টেকনাফ সড়‌কে ঝুঁকিপূর্ণ মরণ ফাঁদ : বাড়ছে প্রাণহা‌নির ঝুঁকি

মোসলেহ উদ্দিন •

দেশের সর্বদক্ষিণে পর্যটন খ্যাত কক্সবাজার- টেকনাফ সড়কে বাঁক আর বাঁক যেন মরণফাঁদ। এসব বাঁকে বাঁকে প্রতি‌নিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হ‌চ্ছে মানুষ। এ বাঁ‌ক সমূ‌হে একপ্রান্ত অন‌্য প্রান্ত ‌দেখা যায়না। চাল‌কের সা‌থে যাত্রীরাও শংকিত কখন দুর্ঘটনায় পড়‌তে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার উখিয়া উপজেলার কোর্টবাজারে ছোলা(চনা) বোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিলের মধ্যে পড়ে যায়। এতে
চালক হেল্পার গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়।

জানা যায়,কক্সবাজার হ‌য়ে লিংকরােড থেকে দীর্ঘ ৭৯ কিলােমিটার সড়কে প্রায় ৩১টি বাঁক বা মৃত্যুফাঁদ র‌য়ে‌ছে। রো‌হিঙ্গা‌রা আসার পর মাননীয় সেতুমন্ত্রী‌ ওবায়দুল কা‌দের রো‌হিঙ্গা ক‌্যাম্প পরিদর্শণের পর উ‌খিয়া ডি‌গ্রি ক‌লে‌জের সাম‌নে সং‌ক্ষিপ্ত সমা‌বে‌শে ব‌লে‌ছি‌লেন, উ‌খিয়া-টেকনাফ স‌ড়‌কে যাজ‌ট নিরস‌নের পাশাপ‌শি সড়‌কে বাঁকগু‌লো প্রশস্থ করা হ‌বে।

এসব বাঁকের প্রয়োজনীয়‌ অংশে সড়ক ও জনপদ বিভাগ কতৃপক্ষ দিক নির্দেশনামূলক সাইনবাের্ড স্থাপন করার কথা থাক‌লেও এখ‌নো ওইসব বাঁ‌কে বাঁ‌কে কোন চিহ্ন স্থাপন করা হয়‌নি। এমন কি হাসপাতাল, স্কুল ও বাজার এলাকা সমূ‌হেও কোন সাং‌কে‌তিক চিহ্ন নেই। যেকার‌ণে চাল‌করা বাঁকগু‌লো অ‌তিক্রম করার সময় আত‌ঙ্কিত থা‌কে।

রো‌হিঙ্গা এলাকায় সড়কে ইদানিং যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সময়ােপযােগী সড়কের আশাতীত উন্নয়ন ও ডিভাইডার না থাকায় দূর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বৃহত্তর যাত্রী সাধারণ ।

বাঁ‌কের ব‌্যাপা‌রে উখিয়া সদ‌র শী‌লের এলাকার বা‌সিন্দা র‌ফিক উ‌দ্দিন সোনা জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চাল‌কেরা এ বাঁকটি অ‌তিক্রম ক‌রে। একইভা‌বে জা‌দিমুরা এলাকার মেম্বার সালাহ উ‌দ্দিন জানান, এখা‌নে ম‌হিলা ও পুরুষ দু‌টি পৃথক মাদ্রাসা র‌য়ে‌ছে। এ বাঁক‌টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে রাস্তা পারাপার বা দিক‌নি‌র্দেশনা মুলক কোন সাংকেতিক চিহ্ন সম্বলিত সাইনবাের্ড নেই। বেপরােয়া গতি নিয়ে চলাচলরত অধিকাংশ যানবাহনের মুখােমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে বি‌ভিন্ন ডাম্পার ও অন‌্যান‌্য গা‌ড়ি।

তি‌নি ব‌লেন, ফেব্রুয়ারীতে এ বাঁকে মাইক্রো ও মিনিট্রাকের মুখােমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ৩ জন নিহতসহ ১২ জন যাত্রী আহত হয়েছে।

দুরপাল্লার যাত্রীবাহি বাস সার্ভিসের অ‌নেক চালকের অ‌ভি‌যোগ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ ইতিমধ্যে কিছু কিছু বাঁকে দিক নির্দেশনামূলক ডিজিটাল সাইনবাের্ড স্থাপন করেছে। যা রাতের বেলায় গাড়ীর লাইট পড়লে সামনের বাঁকের কথা মনে করিয়ে দেয়। এসব সাইন অধিকাংশ বাঁকেনেই। অসাবধানতা বশত: এসব বাঁকে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দূর্ঘটনায় পতিত হয়। হতাহত হয় যাত্রীসাধারণ ও পথচারী।

এ‌দি‌কে গত ২৭‌ফেব্রুয়ারী‌ রা‌তে সড়ক দূর্ঘটনায় উখিয়ার ৩জন নিহত ও ৪জন অাহত হ‌য়ে‌ছে।

জানা যায়,গত ২৭‌ফেব্রুয়ারী রাত সাড়ে তিনটা সময় চট্টগ্রাম থেকে উখিয়ায় ফেরার পথে পদুয়া এলাকায় মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। এতে উখিয়া সদরের হাজীরপাড়া এলাকার মোঃ আয়াজ (২৮), শাহ আলম জেকব (৩৭) ও জাহাঙ্গীর আলম (৩০) ঘটনাস্থ‌লেই মৃত্যুবরণ করেছেন। একই সা‌থে হেলাল উদ্দিন (২৭), মনজুর আলম(৩৫), মোঃ নুরুল আমিন(২৪) ও হুমায়ুন কবির (৩৩) গুরুতর আহত হয়েছে।

নিরাপদ সড়ক চাই এর উপর কর্মরত এনজিও সংস্থা উখিয়াস্থ ব্র্যাক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার- টেকনাফ ৭৯ কিলােমিটার সড়কের ৩১টি বাঁকের অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ বি‌ভিন্ন স্থানে দিক নির্দেশনা মূলক সাইনবাের্ড নেই। উখিয়ার ট্রাক মালিক শ্রমিক সমিতির সভাপতি মােঃ শাহজাহান জানান, রো‌হিঙ্গা এলাকা ও পর্যটন সড়ক হিসাবে কক্সবাজার- টেকনাফ সড়ককে যতটুকু উন্নয়ন করা উচিত সড়ক ও জনপদ বিভাগ তা করেনি।

সড়‌কে বাঁক মরণফাঁদ, এ ব্যাপারে জান‌তে চাই‌লে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা আব্দুল জলিল জানান, কক্সবাজার টেকনাফ সড়কে লিংক রােড থেকে উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও টেকনাফের উনচিপ্রাং থেকে উখিয়া ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন পর্যন্ত দুটি প্যাকেজে প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হওয়ার প‌থে। চলতি অর্থ বছরে বরাদ্ধ আস‌লে বাঁকা সড়ক গুলাে প্রশস্থকরণ করা হ‌বে।

আরও খবর