ট্যুরিজম স্পট বন্ধসহ জোনভিত্তিক লকডাউনের প্রস্তাব

অনলাইন ডেস্ক •

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। গত বছরের জুন-জুলাই মাসের মতো সংক্রমণ পরিস্থিতি মারাত্মক হচ্ছে। টানা ছয় দিন ধরে করোনার সংক্রমণ সাড়ে তিন হাজারের ওপরে রয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। এ অবস্থায় করোনা নিয়ন্ত্রণে ফের জোরালো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। পুরোপুরি লকডাউন অথবা আংশিক লকডাউনসহ একগুচ্ছ প্রস্তাবনা তৈরি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

রোববার সে প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে দ্রুততম সময়ে তা কার্যকর হবে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র সমকালকে নিশ্চিত করেছে।

এদিকে সংক্রমণ ঠেকাতে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত, আগের মতো ভয়ানক রূপে ফিরছে করোনা। যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়লে বিপদ আরও বাড়বে। সুতরাং দ্রুত নতুন ধরনের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা প্রয়োজন।

কভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটির পক্ষ থেকে করোনা নিয়ন্ত্রণে জোনভিত্তিক লকডাউনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুল্লা সমকালকে বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে সারাদেশে লকডাউন কিংবা ছুটি কার্যকর করা সম্ভব নয়। তবে অধিক সংক্রমিত এলাকাগুলো বিশেষ করে যেসব এলাকায় শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি, সেগুলো চিহ্নিত করে জোনভিত্তিক লকডাউন করা প্রয়োজন। ২১ দিন করে ওই সব এলাকায় লকডাউন দিয়ে রাখা গেলে সংক্রমণ দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। সরকারকে এ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, করোনার বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে দ্রুততম সময়ে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা প্রয়োজন। কারণ, বর্তমানে যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল- এই তিন দেশে করোনার নতুন তিনটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। যেগুলো আগের ধরনের তুলনায় শক্তিশালী এবং সংক্রমিত করার ক্ষমতাও অনেক বেশি। বাংলাদেশে এই তিনটি ধরনের কোনটি এসেছে, তা চিহ্নিত করা প্রয়োজন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

কভিড-১৯ জাতীয় কমিটির পরামর্শ আমলে নিয়ে তা কার্যকর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কমিটির পক্ষ থেকে যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যৌক্তিক। কারণ, সারাদেশের পরিবর্তে অধিক সংক্রমিত জোনগুলোতে লকডাউন কার্যকর করা প্রয়োজন। তাহলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও স্বাভাবিক রাখা যাবে। আবার জিনোম সিকোয়েন্সিংও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সংশ্নিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। এতে পুরোপুরি লকডাউনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেটি সম্ভব না হলে আংশিক অর্থাৎ জোনভিত্তিক লকডাউনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরে ট্যুরিজম স্পটগুলো পুরোপুরি বন্ধ রাখা, বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিলসহ যে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন না করলে ভালো হয়। আর এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও তা যেন সামাজিক দূরত্ব ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে করা হয়। এ ছাড়া মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। মাস্ক না পরলে জরিমানাসহ দণ্ড পেতে হবে।

দ্রুততম সময়ে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রস্তাব করার কথা উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, সামনে রমজান আসছে। এরপর কেনাকাটা ও ঈদের ছুটি হবে। তখন জনসমাগম হবে। এতে করে করোনা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সুতরাং সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে দ্রুততম সময়ে তা কার্যকর করা প্রয়োজন এবং প্রস্তাবনায় তা উল্লেখ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আরও খবর