অনলাইন ডেস্ক •
চলতি মার্চ মাসের প্রথম দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৫৮৫ জন। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল আটজনের।
মাত্র চার সপ্তাহের ব্যবধানে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আজ (২৮ মার্চ) করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯০৮ জনে। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের বৃদ্ধি পেয়েছে চারগুণেরও বেশি ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। একই সময়ে মৃতের সংখ্যাও চারগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
চার সপ্তাহ আগের ও পরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে খুব সহজেই অনুধাবন করা যায়, দেশে করোনা পরিস্থিতি দিনে দিনে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী ও মৃত্যু উভয়ই অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেলেও তোয়াক্কা করছেন না সাধারণ মানুষ। রাস্তায় মানুষের চলাচল কিংবা গণপরিবহনে চলাচলের সময়ও করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না।
বিয়ে, মুসলমানি থেকে শুরু করে অবাধে সামাজিক অনুষ্ঠানে মানুষের ব্যাপক সমাগম হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিছিল ও সমাবেশ চলছে। বড় বড় শপিং মল থেকে শুরু করে সর্বত্র মাস্কবিহীন অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষ। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই বললেই চলে। মানুষের বেপরোয়া মনোভাব বন্ধ করে এখনই লাগাম টেনে ধরতে না পারলে পরিস্থিতি আরও চরম ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা।
একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, অব্যাহতভাবে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি ও মৃত্যুরোধে করোনার সংক্রমণরোধে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটি সরকারের কাছে বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করণীয় সে ব্যাপারে কিছু পরামর্শ দিয়েছে।
তাদের পরামর্শগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল জোরদার করার মাধ্যমে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া; সামাজিক অনুষ্ঠান আপাতত বন্ধ করে দেয়া; যেসব জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি সেসব জেলায় অভ্যন্তরীণ যানবাহন চলাচল সীমিত করা; গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে বাধ্য করার জন্য নজরদারি বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, যেভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তাতে আমরা পুরো ঝুঁকির দিকে চলে যাচ্ছি। এটাকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখনই যদি এর লাগাম টেনে না ধরা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে আমরা আরও ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাব।
তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর সকল দেশের হাসপাতালেরই একটা ধারণক্ষমতা থাকে। যদি অবস্থা ধারণক্ষমতার বাইরে চলে যায় তখন হাসপাতালগুলো আর কুলিয়ে উঠতে পারবে না। এখন না হয় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ছাড়াও অন্যান্য হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে কিন্তু সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে।
তিনি আরও বলেন, করোনা পরীক্ষা করার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়ে গেছে। অনেকের ঠান্ডা, জ্বর ও কাশিসহ করোনার উপসর্গ থাকলেও তারা বলছে, প্রতিবছরই আমার একটু ঠান্ডা-কাশি লেগেই থাকে। তারা করোনা পরীক্ষা না করে ঘরে বসেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছেন, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অবাধে মানুষের সাথে মেলামেশা করছেন। এহেন অবহেলার কারণেও সংক্রমণ বাড়ছে। নিজের জীবনকেও অনেকে ঝুঁকিতে ফেলছেন।
ড. আলমগীর বলেন, সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে দেশে এখন ২২৪টি ল্যাবরেটরি রয়েছে। মোট ল্যাবরেটরির মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৫২টি আরটি-পিসিআর, ২৯টি জিন এক্সপার্ট ও ৭৩টি এন্টিজেন টেস্ট ল্যাবরেটরি রয়েছে। অপরদিকে বেসরকারি পর্যায়ে ৬৮টি আরটি-পিসিআর ও ২টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাবরেটরি রয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে নমুনা পরীক্ষার খরচ কম হলে সরকারিভাবে মাত্র ১০০ টাকায় করোনার টেস্ট করা যাচ্ছে। মাত্র ১৫/২০মিনিটের মধ্যে এন্টিজেন টেস্টের ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। অতএব করোনার উপসর্গ থাকলে ঘরে বসে না থেকে করোনা করোনা পরীক্ষা করা, পজিটিভ হলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শে করোনা চিকিৎসা শুরু করা সবার উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-