জসিম উদ্দীন, কক্সবাজার •
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা বসতির পাশাপাশি ক্যাম্পের ভিতরে বসবাসরত স্থানীয়দের প্রায় তিনশতাধিক বাড়ি ও দেড় হাজার দোকান পুড়ে গেছে। এছাড়াও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আরো কয়েকশ’ স্থানীয় পরিবার।
যদিও অগ্নিকাণ্ডের পর সোমবার রাত থেকে আশ্রয়হীন হয়ে পড়া ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে ইউএনএইচসিআর, আইওএম, ওয়ার্ল্ড ভিশন, কোস্ট ট্রাস্টসহ ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও সংস্থাগুলোকে।
তারা রোহিঙ্গাদের মাঝে পানি, শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ও নগদ অর্থ বিতরণ করেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে রোহিঙ্গাদের বসতি নির্মাণ কার্যক্রম। কিন্তু মানবিকতার দিক থেকে স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় এগিয়ে এলেও তাদের খবর নেয়নি কেউ! এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, এ ঘটনায় অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা ও দুই হাজার স্থানীয় বাসিন্দা গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এখনো তারা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
অগ্নিকাণ্ডের গৃহহীন হয়ে পড়া স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি কিং এনজিও সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে তারা এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের সহায়তা পায়নি। তাদের সামনে রোহিঙ্গাদের নানাভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিন্তুু একটু পানিও তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে না। এতে করে ক্ষুধার যন্ত্রণায় শিশুদের কান্নায় আকাশ ভারি হয়ে উঠছে।
ক্ষতিগ্রস্ত মো. মনু নামের এক বৃদ্ধ বলেন, তিন মেয়ে ও দুই ছেলে ও নাতি-নাতনিসহ আমরা ১০ জনের পরিবার। ঘরবাড়ি পুড়ে সবকিছু হারিয়ে কি করব কোথায় যাব কি খাব বুঝে উঠতে পারছি না। রোহিঙ্গারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এনজিও সহযোগিতা করে, কিন্তুু আমাদের কেউ পানিও খেতে দেয়নি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দীন চৌধুরীর বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৩ শতাধিক ঘর ও দেড় হাজার দোকানপাট পুড়ে গেছে। এতে করে প্রায় এক হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এতে অন্ততপক্ষে ৫শ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এনজিও সংস্থাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের প্রতিযোগিতা করে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। কিন্তুু স্থানীয়দের জন্য খবর এ পর্যন্ত কেউ নেয়নি।
তিনি বলেন, সরকারিভাবেও এখন পর্যন্ত সহযোগিতা পায়নি স্থানীয়রা। ব্যক্তিগতভাবে আমি কিছু শুকনো খবার সরবরাহ করেছি। যা পর্যাপ্ত ছিলনা। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের রোহিঙ্গারদের সমপরিমাণ সহযোগিতা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়রা সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন উখিয়া উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, বিষয়টি আমি ইউএনও মহোদয়কে অবগত করেছিলাম। এখন তিনি কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন জেনে বলতে হবে।
তার অভিযোগ এনজিও সংস্থাগুলো শুধু রোহিঙ্গাদের সেবায় ব্যস্ত। রোহিঙ্গাদের কারণে যেসব স্থানীয় গৃহহীন হয়ে পড়েছে তাদের নিয়ে এনজিওগুলোর মাথাব্যথা নেই।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের সময়মত সহযোগিতা করা না হলে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন বাসিন্দারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন,স্থানীয় চেয়ারম্যান গফুর উদ্দীন চৌধুরীকে বিস্কিটসহ শুকনো খাবার ব্যবস্থা করে দিতে বলা হয়েছে। তিনি তা করে দিয়েছেন। অগ্নিকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী তাদের সহযোগিতা করা হবে।
পুনর্বাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের মতো বসতি গড়ে দেওয়া হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মহসীন স্যার বলেছে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-