এম.এ আজিজ রাসেল •
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব—উল আলম হানিফ বলেছেন, “সম্প্রীতি বিনষ্টকারীরা দেশ ও ধর্মের শত্রু। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দেশে একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। যেখানে সকলেই মিলেমিশে সুখে ও শান্তিতে বসবাস করবে এবং প্রত্যেকে নির্বিঘ্নে নিজ নিজ ধর্ম প্রতিপালন করবে।
জাতির পিতার আদর্শ ও চেতনাকে নষ্ট করে মানুষের মাঝে দ্বন্দ্ব—বিবাদ সৃষ্টি করতে ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে একটি সুবিধাবাদী দল। তারা ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে সকল ধর্মের মানুষের সাথে খেলা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশ থেকে সরকার প্রধানেরা আসছেন। তাদের আগমণকে কেন্দ্র করে ৭১ এর পরাজিত শক্তি ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা পাকিস্তানিদের পেতাত্মা।
মাহবুব—উল আলম হানিফ আরও বলেন, যখনই সুযোগ পায় তখনই তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৭১ এর পরাজিত শক্তিকে দমন করা হয়েছে। আজ সবাইকে শপথ নিতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।
রোববার (২১ মার্চ) সন্ধ্যায় শহরের ঐতিহ্যবাহি পাবলিক লাইব্রেরীর শহীদ দৌলত ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে ‘মুক্তিযুদ্ধের ঐক্য’ কক্সবাজার জেলা শাখা আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মাহবুব—উল আলম হানিফ আরও বলেন, ইতিহাস বিকৃতকারী মহল কূটকৌশল করে ৭ই মার্চ পালন করছে। যে বিএনপি ৭ই মার্চকে নিষিদ্ধ করেছিল, আজ সেই বিএনপি রাজনৈতিক কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে। বিএনপি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে, এটি তাঁদের রাজনৈতিক কৌশল। বাংলাদেশের সব অপশক্তিকে পরাজিত করে সোনার বাংলা গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশ—ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক এখন অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।
মাহবুব—উল আলম হানিফ বলেন, আজকে দেশের বিরুদ্ধে যে চক্রান্ত চলছে, এ চক্রান্ত বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করতে হবে, পরাজিত করতে হবে, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবসে এটাই হোক আমাদের শপথ।
কোরআন তেলাওয়াত, জাতীয় সংগীত ও উদ্বোধনী সংগীতের মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের ঐক্যের কেন্দ্রিয় আহবায়ক মেজর (অব:) এএসএম শামসুল আরেফিন।
উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিয়েছেন। তার স্বপ্ন ছিল এদেশের দারিদ্র পীড়িত মানুষকে মুক্ত করবেন। এমন করে দেশকে গড়ে তুলবেন যাতে বিশ্বের বুকে বাঙালি মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে। ক্ষুধা দারিদ্র দুর করতে তিনি সেইভাবে কর্মসূচি দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা দিতে গিয়ে তিনি দিনের পর দিন জেল খেটেছেন। বঙ্গবন্ধু কখনো মাথানত করেননি, আর্দশচ্যুত হননি। দুর্ভাগ্য তিনি যে দেশের স্বাধীনতা দিয়েছেন সেই স্বাধীন দেশেই তাকে হত্যা করা হয়। এটা কেউ কল্পনাও করেনি, বিশ্বাস করতেও পারেনি। কারণ তিনি এদেশের মানুষকে অত্যান্ত ভালোবাসতেন। তিনি এদেশের জন্য রক্ত দিয়ে গেছেন। কৃষক শ্রমিকের মুখে হাসি ফোটানোর মধ্য দিয়ে তার রক্ত ঋণ শোধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এদেশে আর মুক্তিযুদ্ধের লড়াই আর হবে না। এখন হবে স্বাধীনতা রক্ষা করার লড়াই। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের ঐক্যের কক্সবাজার জেলা শাখার আহবায়ক পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহবায়ক পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল করের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে কেন্দ্রিয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মনিরুজ্জামান মনির, মুক্তিযুদ্ধের ঐক্য কক্সবাজার জেলা শাখার উপদেষ্টা আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, যুগ্ম আহবায়ক কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, যুগ্ম আহবায়ক, শামসুল আলম মন্ডল ও সদস্য সচিব সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল করিম মাদু।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাংসদ অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জয়ন্ত আচার্য্য, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর হায়দার চৌধুরী রোটন, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযুদ্ধা নুরুল আবছার, ইঞ্জিনিয়ার বদিউল ও রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজলসহ পৌর আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধ ঐক্য কক্সবাজার জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।
আলোচনা সভা শেষে আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মুক্তিযুদ্ধের নাটক মঞ্চায়ন করা হয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের ঐক্য কক্সবাজার জেলা শাখার ঘোষিত ৩ টি স্থানের কর্মসূচির মধ্যে ২১ মার্চ রোববার শহীদ দৌলত ময়দানে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা কর্মসূচির উদ্বোধন হয়। এছাড়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ২৩ মার্চ ঈদগাঁও স্টেশন এবং ৩০ মার্চ রামু চৌমুহনী স্টেশনে একই অনুষ্ঠান মালা থাকছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-