এজাহারের আসামি টেকনাফের কালাম: আবার জিম্মাদার!

পূর্বকোণ •


তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তে আসামির নাম ঠিকানা সঠিক না পাওয়ায় ইয়াবা মামলার চার্জশিট থেকে এক আসামির অব্যাহতি সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। অথচ অব্যাহতির সুপারিশপ্রাপ্ত একই ব্যক্তি মামলায় জব্দ হওয়া কাভার্ডভ্যানের জিম্মাদার হলেন।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের একটি আদালতে হাজির হয়ে কক্সবাজার টেকনাফ থানার আবুল কালাম (৪৮) মামলায় জব্দ কাভার্ডভ্যানটি জিম্মার অনুমতি চান। নাম ঠিকানা যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে মালিকানা সঠিক প্রমাণ হলে কাভার্ডভ্যানটি আবুল কালামের জিম্মায় দিতে নির্দেশ দেন আদালত।

ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় ২০১৭ সালে দায়ের কোতোয়ালীর থানার মামলায় আবুল কালামসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরের বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি তদন্তকর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা বিভাগের (উত্তর) তৎকালীন এসআই মো. লিয়াকত আলী দুইজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়ে অন্য দুইজনকে অব্যাহতির আবেদন করেন। আবুল কালাম ও ছলিম উল্লাহ নামের এজাহারভুক্ত দুইজনের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের আপাতত অব্যাহতির সুপারিশ করেন।

চার্জশিটে বলা হয়, “আবুল কালাম ও ছলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হইলেও তাহাদের সঠিক নাম ঠিকানা না পাওয়ায় তাহাদেরকে আপাতত মামলার দায় হইতে অব্যাহতি দান এবং পরবর্তীতে উক্ত আসামিদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ কিংবা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হইলে বিজ্ঞ আদালতে তাহাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হইবে।” তদন্তে পূর্ণ ঠিকানা পাওয়া না গেলেও খোদ মামলার সেই অভিযুক্ত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে কাভার্ডভ্যানের জিম্মার আবেদন করেন। আদালত মালিকানার ব্যাপারে বিআরটিএ’র প্রতিবেদন পাওয়ার পর শুনানিশেষে ১০ মার্চ ১৫ লাখ টাকার বন্ডে আবেদন মঞ্জুর করে কোতোয়ালী থানাকে মালিকানার কাগজপত্র যাচাই সাপেক্ষে আবেদনকারীর জিম্মায় কাভার্ডভ্যানটি কালামের জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ দেন। ১৪ মার্চ আবুল কালাম আদালতে বন্ড দাখিল করেন। আবুল কালাম কক্সবাজার টেকনাফ সাবরং লেজিরপাড়ার মৃত মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে।

জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, আদালত থেকে জিম্মার অনুমতি পাওয়া ব্যক্তি থানায় কাগজপত্র সাবমিট করেছেন। কিন্তু গাড়িটি মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের হেফাজতে রয়েছে। গাড়িটি আমাদের হেফাজতে না থাকার বিষয়টি আমরা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে জানাবো।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত মহানগর পিপি এডভোকেট এমএ ফয়েজ বলেন, আবুল কালাম মামলাটির পলাতক আসামি। তিনি মামলার আলামত তথা কাভার্ডভ্যানটির জিম্মা চাইলে আমি ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে দরখাস্ত দাখিল করেছি। দরখাস্তে ওই আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করতে আইওকে নির্দেশের জন্য আদালতে প্রার্থনা করেছি।

এদিকে, কাভার্ডভ্যানের মালিকের ঠিকানা সঠিক না পাওয়ার ব্যাপারে বিষয়ে জানতে চেয়ে নগর ডিবির (উত্তর) তৎকালীন এসআই লিয়াকত আলীর মোবাইল ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

জানা যায়, লিয়াকত আলী গত বছর ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ রোডে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া মেজর (অবঃ) রাশেদ খান সিনহা মামলায় অভিযুক্ত। তিনি পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে নগর গোয়েন্দা বিভাগ থেকে বদলি হয়ে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের শ্যামলগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেব কর্মরত ছিলেন। সিনহা হত্যা মামলায় তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে কালামের আইনজীবী মোকাররম হোসাইন বলেন, কালাম আজ পর্যন্ত এ মামলার আসামি নন। আসামি হতে হলে তাঁকে অবশ্যই চার্জশিটভুক্ত হতে হবে। তিনি মালিক হিসেবে আদালতে কাভার্ডভ্যানের জিম্মা চেয়েছেন। আদালত বিআরটিএ থেকে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন তলব করে মালিকানার কাগজপত্র সঠিক পাওয়ার পর তাঁকে গাড়িটি জিম্মার অনুমতি দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে ভুল বুঝিয়ে (মিসলিড) তার বিরুদ্ধে আপত্তি দিয়েছেন।

জানতে চাইলে এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, এজাহারের একই আসামি যদি গাড়ির জিম্মাদার হন তাহলে জিম্মানামা বাতিল করে তাকে গ্রেপ্তার করা উচিত। এছাড়া তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া উচিত।

প্রসঙ্গতঃ ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর রাত ৩ টায় নগরীর টাইগার পাস এলাকায় একটি কাভার্ডভ্যানকে (চট্টমেট্রো- ট-১১-৭২৪৬) থামার জন্য সঙ্কেত দেয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম। কাভার্ডভ্যানটি সঙ্কেত অগ্রাহ্য করে স্টেশনরোডের দিকে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় গোয়েন্দা পুলিশ গাড়িটির পিছু নিয়ে নগরীর কদমতলী ফোরস্টার সিএনজি স্টেশনের সামনে আটক করে। এসময় ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ চালক অনিল চন্দ্র শীল ও সহকারী মোবারক হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। এ ব্যাপারে কোতোয়ালী থানায় ৪ জনের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

আরও খবর