কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রীড়ায় নৈপুণ্যতা অর্জন উখিয়ার জয়নালের!

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী জয়নাল আবেদীন। পড়াশোনার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাধুলায় তার অর্জন তাক লাগানোর মতো৷ ক্রিকেট, হকি, ফুটবল, ম্যারাথন সব খেলাতেই তিনি সবার থেকে এগিয়ে।

জয়নালের খেলাধুলার শুরু, অর্জন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন এমসিজে নিউজের প্রতিনিধি ফাতেমা রহিম রিন্স।

সাক্ষাতকারটি কক্সবাজার জার্নালে পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো….

খেলাধুলার শুরুটা কিভাবে?

ছোটবেলাতেই বাড়ির পাশে মাঠে বড় ভাইদের সাথে খেলাধুলার হাতেখড়ি হয়। প্রাইমারি স্কুলে পড়াকালীন ফুটবল ভালো খেলতাম। তাই বড় ভাইয়েরা সুযোগ দিতো। তবে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন স্কুলের মাঠে বড় একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়। বয়সের দিক দিয়ে সবচেয়ে সবার ছোট ছিলাম আমি।

তবে সৌভাগ্য ঐ টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলাম। সেই থেকে খেলাধুলার নেশা পেয়ে বসে। তবে খেলাধুলার পাশাপাশি প্রচুর পড়াশোনা করতাম। সপ্তম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত সবসময় রোল চার ছিল । শিক্ষক থেকে শুরু করে সবার কাছে পরিচিত ও ভালোবাসা পেয়েছি খেলাধুলার মাধ্যমে।

ইচ্ছা কী ছিল?

খেলাধুলায় ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন থাকলেও বাড়ি কক্সবাজারে হওয়ায় সেই পরিমান সুযোগ-সু্বিধা পাওয়া যেত না। তাই পড়াশোনায় ভরসা ছিল। সবসময় ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করে ভালো কিছু করবো।

সমাজের মানুষের সামান্য হলেও উপকারে আসতে পারবো। এখনো সেই চেষ্টায় করে যাচ্ছি। ৯ম শ্রেণীতে পড়ার সময় স্বপ্ন বুনেছিলাম সেনাবাহিনী বা সাংবাদিক হবো। দুর্ভাগ্যক্রমে হলেও সত্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সাংবাদিকতা পড়ার হাতেখড়ি হয় এবং গণমাধ্যমের সাথে যুক্তও হয়েছি।

আপনি তো ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ম্যারাথন সব খেলাতেই পারদর্শী। এটা কিভাবে সম্ভব হলো?

যেটা করি না কেন ভালোভাবে করার চেষ্টা করি, তবে মনের মতো হলে। হকি আর ম্যাারাথন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শেখা।

শারীরিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক মনিরুল আলম স্যারের হাতে হকি শেখা ও এই হকি দিয়ে চট্টগ্রাম হকি লীগ খেলা এবং ঢাকা হকি লীগেও ডাক পেয়েছিলাম। তবে মা নিষেধ করায় আর যাওয়া হয়নি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর যে অবসর সময়টা পেতাম তা খেলাধুলার দিকে দিতাম। আসলে কোন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে খেলাধুলার দিকে পারদর্শী হওয়া না, যখন যেটা সামনে এসেছে সেটাই ভালোভাবে করার চেষ্টা করেছি মাত্র।

কোন খেলা বেশি পছন্দ?

সচরাচর যেগুলো গ্রামে বেশি প্রচলিত সব খেলায় ভালো লাগে। যদি নির্দিষ্ট করে বলতে হয়, তাহলে ফুটবলই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। ফুটবল দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও নিজ উপজেলায় পরিচিতি পেয়েছি।

পছন্দের খেলোয়াড়?

ছোটবেলা থেকে মেসির খেলা ভালো লাগে। বলতে গেলে তাকে সবসময় অনুসরণ করার চেষ্টা করি। আর ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার ডি ভিলিয়ার্স।

কুবির দ্রুততম মানব জয়নাল
বিশ্ববিদ্যালয় হকি দলের সাথে জয়নাল আবেদীন
বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে, নিজের বিভাগের হয়ে অনেক অর্জন আছে আপনার। কেমন লাগে এসব অর্জনে?

অর্জনের কথা মনে আসলে আমার বিভাগকে ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন করতে তেমন ভূমিকা পালন করতে পারিনি, সেটা খারাপ লাগে। যদিও তৃতীয় হয়েছিলাম আমরা। তবে পরের বছর ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আক্ষেপটা ঘোচানো হয়। নিজের অর্জনের চেয়ে বিভাগের বা দলীয় অর্জনগুলো ভাবতে খু্বই ভালো লাগে।

কী কী ব্যক্তিগত অর্জন?

তিনবার জাতীয় আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় হকি প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পদক অর্জনে করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, সে তিনবারই দলের ফরওয়ার্ড ছিলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যারাথনে দুইবার প্রথম স্থান অর্জন, ‘আন্তঃবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতা-২০১৮’ এ ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্ট ও আন্তঃব্যাচ ফুটবল প্রতিযোগিতায় সেরা খেলোয়াড়।

কুবির দ্রুততম মানব জয়নাল
জয়নাল আবেদীনের অর্জিত সব পদক ও ক্রেস্ট
বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০১৬ এ ১০০ ও ২০০ মিটারে দৌঁড়ে প্রথম ও দীর্ঘলাফে দ্বিতীয়। আমি এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্রুততম মানব।

২০১৯ সালে ৬০০ মিটার দৌঁড়ে দ্বিতীয়। ‘আন্তঃবিভাগ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা-২০১৮’ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয় সেই দলের সদস্য। স্কুল পর্যায়ে অর্জনের মধ্যে রয়েছে ১৯ টি পদক যার ১৭টি প্রথম,একটি দ্বিতীয় ও একটি তৃতীয় পুরস্কার ছিল।

আপনি তো গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ছেন, সাংবাদিকতাও করছেন। কোনটা ভালো লাগে? সাংবাদিকতা নাকি খেলার জগত?

দুটোই ভালো লাগে। তবে পেশাদারিত্বের জায়গায় সাংবাদিকতা খুবই উপভোগ করি। বিনোদন আর শরীরের ফিটনেসের জন্য খেলাধুলাই ভরসা।

কী করতে চান?

পাঁচ ভাই, দুইবোন আর মা-বাবাসহ আমাদের সংসার। ভাইয়েরা যার যার মতো সবাই ভালো অবস্থানে আছে। পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা চিন্তা করে সরকারি চাকরি করতে চাই। মানুষের উপকারে আসতে চাই। তবে খেলাধুলা নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেলে সেটাও বড় পাওয়া হবে।

উল্লেখ্য, জয়নাল আবেদীনের বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়ার রুমখাঁ বাজার এলাকায়।

আরও খবর