হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া •
বিশ্বের সেরা পর্যটন নগরি কক্সবাজার। কক্সবাজারের উখিয়ায় নয়নাভিরাম পাথুরে গাথা ইনানী সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজার-ইনানী সমুদ্র সৈকতের মাঝপথে রেজুখাল। রেজুখাল ঘেষা পূর্বপাশে দৃষ্টিনন্দন গোয়ালিয়া। যা স্থানীয়দের কাছে মিনি বান্দরবান নামে পরিচিত।
পাহাড়, সমুদ্র, নদী-খাল, সারি সারি সুপারি বাগান গোয়ালিয়া গ্রামটি পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়েছে। ভূ-প্রাকৃতিক গঠনের কারণে এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা এক সময় বেশ নাজুক ছিল। পাহাড়বেষ্টিত গোয়ালিয়া ভৌগলিক গঠন ও অঞ্চলকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দিয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্প মিশ্রপ্রজাতি দ্রুত বর্ধনশীল বনায়নের আওতায় ২০১৯-২০২০ সালে ৫০ হেক্টর জায়গা জুড়ে ১.২৫.০০০ চারাগাছ রোপন করা হয়।
যারমধ্যে রয়েছে- ছাতিয়ান, আমলকি,বহেরা,কড়ই, অর্জুন,কদম,কাঠবাদাম, চিকরাশি, শিমুল, গামার, আকাশমনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতায় এটি অবস্থিত। প্রশাসনিক কার্যক্রমে অন্যতম বড় বাধা ছিল দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থা। এখানকার ইতিহাসের সাথে হাতির সম্পর্ক অভিন্ন। ওই সময়ে হাতির ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ভৌগলিক গঠনের কারণে পিছিয়ে পড়া এ জনপদে তিন দশক আগেও প্রত্যন্ত এলাকায় হাতির পিঠে চড়ে চলাচল করতেন অনেকেই। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে এখনো দেখা মিলে হাতি চলাচলের রাস্তা। উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশ কজন নারী ও শিশু বন্যহাতির আক্রমণে মারা যায়। গোয়ালিয়ায় দিন দিন বাড়ছে পর্যটকদের সংখ্যা।
পাহাড়ের মাঝে আকা-বাঁকা রাস্তা, বন-বিভাগের গোল ঘর ও নান্দনিক নির্মাণশৈলীর কারণে পর্যটকরা মুগ্ধ হচ্ছেন বলে জানালেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় গোরাইয়ারদ্বীপ এলাকার জাহাঙ্গির আলম বলেন, আমাদের গ্রামের পাশেই রয়েছে গোয়ালিয়া। এখানে শরতের আগমনে হাসে কাশফুল। স্বচ্ছ নীল আকাশে সাদা মেঘ, মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ ও সাদা কাশফুলে ভরপুর। গোয়ালিয়ার পাশাপাশি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে পাহাড়ের ঢালে ঢালে তাকালেই দেখা যাবে বাতাসে দোঁল খায় সাদা কাশবন। আর শীতের এই সময়ে বেড়াতে আসা লোকজন রেজুখালে নৌকা নিয়ে এপার থেকে ওপারে ঘুরে বেড়ায়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। প্রাণহীন ক্যাম্পাস ছেড়ে অনেক শিক্ষার্থী এখন প্রাণবন্ত করে মনের আনন্দে ছুটে এসেছেন কক্সবাজারের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে।
পার্বতীপুর এলাকার মোহাম্মদ মনোয়ারুল মোস্তফা সাগর বলেন, আমার বাবা গোলাম মোস্তফা উখিয়া উপজেলা প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালনের সময়ে আমার ছোটবেলা কেটেছে উখিয়ায়। আমি উখিয়া কেজি স্কুলের ছাত্র ছিলাম। নতুন বউকে নিয়ে তিন দিন আগে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছি। সেন্টমার্টিন ভ্রমণ শেষে উখিয়ার ইনানী সমুদ্র সৈকত থেকে কক্সবাজার হোটেলে যাওয়ার পথে গোয়ালিয়ায় নামলাম। এখানে এত সুন্দর জায়গা আছে তা আমি কল্পনায় করতে পারিনি।
ঢাকা থেকে আসা সাগরের স্ত্রী বৃষ্টি বলেন, গোয়ালিয়ার পাশাপাশি আমার খুব ভাল লেগেছে উখিয়ার সোনারপাড়ার সারি সারি সুপারি গাছ। এখানে ক্ষণে ক্ষণে প্রকৃতি তার রুপ বদলায়। গোয়ালিয়ায় পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে উঠতে পাহাড় আর সবুজের মিতালি আমাকে দারুণভাবে উদ্বেলিত করেছে।
ঢাকা মিরপুর থেকে পরিবার নিয়ে আসা লাফিস খাঁন বলেন, শুনেছি কক্সবাজারের বীচের পাশে নতুন একটা জায়গায় আসলাম। এখানে আমি আগে কখনো আসি নাই। বান্দরবানের মতো দেখতে পাহাড়ি এলাকা। এসে ভাল লাগছে। তবে সুযোগ সুবিধা কম। খাবারের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো। ঢাকা মিরপুরের তানভির সাজু বলেন, ঘুরে দেখার জন্যে আসলাম। এসে ভাল লাগছে। পরিবেশটা অনেক সুন্দর।
ঢাকা উত্তরা থেকে এসেছেন মামুন সর্দার থীীতি চৌধুরী তারা বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে কক্সবাজারে অনেকবার এসেছি। কিন্তু এখানে পাহাড় বেষ্টিত গোয়ালিয়ায় এসে বান্দরবানের সাজেকের কথাই মনে পড়ছে। চমৎকার এলাকা।
মিরপুরের তানজিলা মিথুন বলেন, আপনার মন, প্রাণ দেহ পুলকিত হবে এক বিশুদ্ধ চিন্তা এবং অনুভূতিতে। সূর্যোদয় ও অস্ত দেখার সুখানুভূতি সারা জীবন মনে থাকবে আমার।
গোয়ালিয়ার এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে অকবিও হয়ে ওঠেন কবি, অপ্রেমিকও হয়ে ওঠেন প্রেমিক, একজন সচেতনও অবচেতনে হয়ে ওঠেন উন্মাতাল। একজন বৃদ্ধও সবুজের সুরা পান করে হয়ে ওঠেন তেজোদীপ্ত তরুণ। নৈসর্গিক সৌন্দয্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর এবং জনপ্রিয় কক্সবাজারের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-