এক শওকতকে বদলিতে থেমে গেলো ‘মানবিক পুলিশ ইউনিটে’র যাত্রা

সিভয়েস •

ওয়াজ মাহফিলের সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়ায় সিএমপির ‘মানবিক পুলিশ ইউনিট’থেকে বদলি করা হয় আলোচিত কনস্টেবল মো. শওকত হোসেকে। তার বদলির মাধ্যমে ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর চালু করা সিএমপির ‘মানবিক পুলিশ ইউনিটে’র কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর এ তথ্য জানিয়েছেন।

এরআগে গতকাল বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এক অফিস আদেশে শওকতকে বন্দর জোনে বদলি করা হয়। ‘জনস্বার্থে’এ বদলি আদেশ বলা হলেও তবে স্বয়ং সিএমপি কমিশনারই স্বীকার করেছেন, ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দেওয়ার কারণে এ বিষয়টি তাদের দৃষ্টি গোচর হয়। ফলে তাকে বাহিনীর শৃঙ্খলার রক্ষায় বদলি করা হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান সিএমপির সব পুলিশ সদস্যই যেহেতু মানবিক পুলিশিং করছে সেখানে আলাদা করে মানবিক পুলিশ ইউনিট থাকার প্রয়োজনও দেখছেন না নগর পুলিশের অভিভাবক।

 

১৭০ ‘চোখে’ ১৬ থানা মনিটরিংয়ে সিএমপি কমিশনার
২০০৫ সালে পুলিশে যোগ দেন আলোচিত কনস্টেবল শওকত। ২০০৫-২০০৯ পর্যন্ত তিনি ঢাকায় চাকরি করার পর রাঙ্গামাটিতে বদলি হন৷ সেখান থেকে চট্টগ্রাম পুলিশ হাসপাতালে পদায়ন হয় তার। তিন বছরের ডিপ্লোমা এবং দুই বছরের প্যারামেডিকেল কোর্স করেছিলেন তিনি। ২০১১ সাল থেকে নীরবে নগরে অসহায়, দুঃস্থ ও বেওয়ারিশ মানুষদের নিভৃতে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিলেন শওকত।

রাস্তায় স্বজনহীন কোনো মানুষ পড়ে থাকার খবর পেলেই ছুটে যেতেন এই ইউনিটের সদস্যরা। তাদের খাওয়া-দাওয়াসহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন। ইউনিট গঠনের আগে থেকেই রাস্তায় স্বজনহীন অসহায় কিংবা মানসিক রোগী যাদের হাসপাতালে স্থান পেত না সেসব রোগীদের নিজেদের টাকায় সেবা দিয়ে আসছিলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কিছু সদস্য। আর তাদের নেতৃত্বে ছিলেন কনস্টেবল শওকত।

দীর্ঘদিন নীরবে কাজ করার পর ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর নগর পুলিশের কল্যাণ সভায় কনস্টেবল শওকত রাস্তায় স্বজনহীন অসহায় মানসিক রোগীদের সেবার বিষয়টি সামনে আনেন। তার বক্তব্য শুনে তখনকার পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান ৫০ হাজার টাকার ফান্ড দিয়ে‘মানবিক পুলিশ ইউনিট’চালু করেন। পরে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর সিএমপির উপ-কমিশনারকে (সদর) প্রধান করে ১০ সদস্যের এই ইউনিট গঠন করা হয় আর মানবিক পুলিশের মাঠের টিম লিডার করা হয় শওকতকে।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ডবলমুরিং থানার পানওয়ালা পাড়ায় একটি মাহফিলে অতিথি হয়ে বক্তব্য রাখেন শওকত। সেখানে তিনি বলেন, ‘যখন শুনবেন ভালো বক্তারা আসছে, তখন দৌঁড়ে ওয়াজ শুনতে চলে আসবেন। আপনি ভণ্ড মুসল্লি। ইসলামের কথা যদি ওনারা আপনাদের মধ্যে ঢুকাতে পারত, তাহলে আমার মতো নগণ্য মানুষ এই চেয়ারে বসতে পারত না। লোকজন সব অলি হয়ে যেত। আপনাদের আশেপাশে অনেক মানুষ আছে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। অথচ আপনারা বড় বড় বক্তা এনে ওয়াজ করাচ্ছেন। মনের কষ্ট থেকে এসব কথা বলছি।’

ভাসমান মানুষদের সেবায় এগিয়ে না এসে ওয়াজ শুনতে আসা শ্রোতাদের নিয়েও সমালোচনা করে শওকত বলেন, ‘সারাদিন ওয়াজ শুনে লাভ নেই, সবাইকে মানবিক হতে হবে।’ সেখানে তিনি আরও কিছু বক্তব্য দেন যেগুলো নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক চলছে। এ নিয়ে ডবলমুরিং থানায় আলেমদের পক্ষ থেকে একটি জিডিও করা হয় বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর সিভয়েসকে বলেন, ‘‌আমদের সব পুলিশই মানবিক। আমি তাদের নির্দেশ দিয়েছি যাতে কেউ অমানবিক আচরণ না করে। তারা সকলেই মানবিক পুলিশিং করছেন। মূলত পুলিশের যে কাজ সেটাই করা আমাদের কাজ। এছাড়া ওই টিমে যারা তারাতো মেডিকেলেই কর্মরত। সো আমরা আলাদা করে মানবিক ইউনিট রাখছি না।’

শওকতের বদলি প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে থাকলে কথাবার্তায় কিছু বিধি-নিষেধ মেনে কথা বলতে হয়। পুলিশে কাজ করে মনে যা আসে তা বলা যাবে না। কথা বার্তায় আমদের সাবধান হতে হবে। তার বক্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।’

আরও খবর