স্পোর্টস ডেস্ক •
যেখানে যাহাকে জড়ায়ে ধরেছি, সেই চলে গেছে ছাড়ি!’
বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের এখন এমন অনুভূতিও হওয়ার কথা। জড়ায়ে ধরেননি, একের পর এক ব্যাটসম্যানকে ভরসা মেনেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু যাঁকেই ভরসা মানা হচ্ছে, দলকে বিপদে রেখে তিনিই ফিরে যাচ্ছেন। ভরসার তালিকা থেকে মুছে যাচ্ছে একেকটি নাম। চা-বিরতির পরের নামগুলোই দেখুন। প্রথমে মুশফিক, তারপর মিঠুন…এখন ১৯ বলের মধ্যে অধিনায়ক মুমিনুল ও লিটন দাস। তাইজুল, নাঈমরাও ফিরলেন। মেহেদী হাসান মিরাজ লড়াইয়ের ছাপ দেখিয়েও পারেননি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরেছেন। জয় তখনো ১৮ রান দূরে।
১৭ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে দুই ম্যাচ সিরিজে ধবলধোলাই হলো স্বাগতিক দল।
চা-বিরতির আগে হঠাৎ ঝড়ে কিছুটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটি দারুণ শুরু এনে দেওয়ার পরও হঠাৎ ধসে পড়ে গেছে ৩ উইকেট। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের পর ফিরে যান তিনে নামা নাজমুল হোসেনও।
২৩১ রানের লক্ষ্যে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ কিছুটা নড়বড়ে ছিল। এরপর মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম ক্রিজে কিছুটা থিতু হওয়ায় আবার নড়েচড়ে বসেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। দুজনে মিলে বাংলাদেশের রান ১০০ পার করিয়ে নিয়ে গেছেন।
কিন্তু ১০০ পার হতেই আবার জোড়া ধাক্কা। ১৮ বলের মধ্যে আউট হয়ে গেছেন মুশফিক ও মোহাম্মদ মিঠুন। মুশফিক ১৪ রান করে আউট হয়ে গেছেন, নেমেই রাকিম কর্নওয়ালকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ডিপ স্কয়ার লেগে ছক্কা মেরে শুরু করা মিঠুন আউট হয়ে গেছেন ১০ রান করে।
এরপর আবার একই গল্প। লিটন ও মুমিনুল মিলে জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এবারও জোড়া ধাক্কা। ১৯ বলের মধ্যে আউট হয়ে গেলেন মুমিনুল ও লিটন। কর্নওয়ালের বলে ক্যাচ দিলেন লেগ স্লিপে। সেই কর্নওয়ালের বলেই কাট করতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দিলেন লিটন।
মুশফিক আউট হওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের আরেকটি ক্ষতি হয়েছে, একটা রিভিউও নষ্ট হয়েছে। জোমেল ওয়ারিকানের বলটা উইকেটকিপার জশুয়া দা সিলভার হাতে ধরা পড়তেই ক্যাচ আউটের আবেদন করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা। আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। কিন্তু মুশফিক সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন। বল যখন মুশফিকের ব্যাটকে অতিক্রম করছিল, প্রায় সেই মুহূর্তেই মুশফিকের ব্যাট মাটিতেও আঘাত করে। সে কারণেই হয়তো মুশফিক ভেবেছিলেন, বলে নয়, ব্যাট মাটিতে লেগেছে বলেই আওয়াজ হয়েছে।
কিন্তু রিভিউ মুশফিকের জন্য দুঃসংবাদই নিয়ে এল। তাঁর ব্যাট মাটিতে লাগার আগেই বল ব্যাট অতিক্রম করেছে, এবং অতিক্রম করার সময়ে ব্যাট ছুঁয়েও গেছে। চা-বিরতির পর প্রায় ৯ ওভার একসঙ্গে ক্রিজে কাটিয়েছেন মুশফিক-মুমিনুল। দুজনে দেখেশুনেই খেলছিলেন। কিন্তু হঠাৎ মুশফিক আউট হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের ওপর চাপ আবার বেড়ে যায়।
চাপের মাত্রা দ্বিগুণ করে গেল মিঠুনের উইকেট। চা-বিরতির আগে নাজমুল হোসেন যেভাবে আউট হয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই কর্নওয়ালের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিঠুন।
চা-বিরতির আগে বাংলাদেশ যে ২১.৩ ওভার খেলেছে, তার মধ্যে আনন্দ-হতাশার বিপরীত দুই অভিজ্ঞতার সঙ্গেই পরিচয় হয়ে গেছে মুমিনুলদের। তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার উদ্বোধনী জুটিতে এনে দেন ৫৯ রান এনে দেন—১৪ ইনিংসে এই প্রথম বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি পঞ্চাশ রান পার করতে পারল! কিন্তু ১৩তম ওভারে বোলিংয়ে বদল এনে ম্যাচের ভাগ্যই বদলে দেন ব্রাথওয়েইট। ওই ওভারের প্রথম বলে সৌম্য ফিরলেন, তার ২৫ বল পর ব্রাথওয়েইটের বলেই ফিরলেন তামিম।
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৪৪ বলে ৯ চারে ফিফটিতে পৌঁছানো তামিম তো রীতিমতো ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়েছেন সিলি মিড-অফে! ফেরার মিছিলে এরপর যোগ দেন নাজমুল। উইকেট থেকে বাড়তি বাউন্স আদায় করে নিচ্ছেন রাকিম কর্নওয়াল, এই বাড়তি বাউন্সেরই শিকার নাজমুল ও মিঠুন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-