কেমন আছে উখিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রেজা’র পরিবার!

শাহী কামরান •

এখনো বাকরুদ্ধ শাহ রেজার মা। ৭মাসের শিশু তানজিম রেজা আপরিন এখনো বাবার পথ চেয়ে যেন বসে আছে। বিয়ের দুই বছরের মাথায় স্বামী হারা স্ত্রী তানিয়া পাগল প্রায়।

নিজের কঠোর পরিশ্রমের টাকা দিয়ে তৈরিকৃত বাড়ির কাজ এখনো সম্পন্ন করতে পারেনি রেজা। বাড়ি ঘিরে কত স্বপ্নই না বুনেছিল। সব স্বপ্ন ধূলিস্যাত করে দিয়েছে সড়ক দূর্ঘটনা। কেড়ে নিয়েছে একটি তাজা প্রাণ। ঘাতক ডাম্পারের বেপরোয়া গতির কাছে চুরমার হয়ে গেছে মায়ের একমাত্র সম্বল। পরিবারের হাল ধরার আর কেউই রইলনা বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে শাহ রেজার মা। এদিকে, সোস্যাল মিডিয়াই তীব্র প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে অবৈধ ডাম্পারে বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন ও সাংবাদিকরা।

গত ১০ই ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার প্রধান সড়কে ডাম্পার (মিনিট্রাক) মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মো: শাহ রেজা (৩০) ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। রত্না পালং ইউনিয়নের টেকপাড়া এলাকার মরহুম আব্দুর রাজ্জাক ভেলা’র একমাত্র পুত্র সন্তান সে। রাতে জানাজা সম্পন্ন করে কবরে শায়িত হয়েছে তার পিতার কবরের পাশেই।

নির্মাণাধীন বাড়ি

সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি, শাহ রেজা বাবাকে হারায় প্রায় ৮ বছর। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরে সে একাই। দীর্ঘ পড়ালেখার স্বপ্ন থাকলেও বেশীদূর এগুতে পারেনি। উখিয়ার রাজপথে,জীবন বাচাঁতে,সংসার সাজাঁতে,পরিবারের চাহিদা মেটাতে কম্পিউটারের বাটনটাই সঙ্গি করে নিয়েছিল সে। কর্মরত ছিল উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের কম্পিউটার অপারেটর পদে। শখের বশে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। ব্যাডমিন্টন খেলায় পার্দর্শীতার কারনে রয়রছে অনেক সুনাম ও সম্মাননা। চলাফেরায় অসম্ভব অমায়িক ও ভদ্র ছিল বলেন জানান দেই তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের ফেসবুক পোস্ট গুলো।

২ বোনের একমাত্র ভাই শাহ রেজা। ২বোনের বিয়ে দিয়ে দায়িত্ব গুছিয়ে নিজে বিয়ের পিড়িতে বসে ২০১৯ সনে। তার সংসারে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের আগমনও ঘটে তার সংসারে।

নিহত শাহ রেজার মা, স্ত্রী ও সন্তান

ঘটনাস্থল পরিদর্শন পরবর্তী প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ কালু ও আজাদ নামের দুই ব্যক্তি জানান, ঘাতক অবৈধ ডাম্পার খুব দ্রতগতির ছিল। শাহ রেজা বাইক নিয়ে উখিয়া হতে কোটাবাজার ফিরছিলেন। দূর্ঘটনার ঠিক আগ মুহূর্তে তার বাইকের সামনে দ্রুতগতির ডাম্পার দেখে সে রাস্তার পাশে হাটা চলাচলের যায়গায় বাইক নামিয়ে দিয়ে ধীর গতিতেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু ঘাতক দ্রুত গতির ডাম্পার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রং সাইডে গিয়ে শাহ রেজার বাইকে সজোরে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়ে শাহ রেজা। প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসলে তার ঠিক একটু পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রেজা।

ঘটনাস্থলে উখিয়া হাইওয়ে পুলিশ উপস্থিত হয়েছিল। মরহুম শাহ রেজার চুরমার বাইকটি উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিলেও আটক করেনি ঘাতক ডাম্পার ও চালককে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে গাড়ির মালিক রাজাপালং ইউনিয়নের তুতুরবিল গ্রামের সালাহউদ্দীন নামের এক যুবক।

কক্সবাজার বিআরটিএ এর তথ্যমতে, কক্সবাজার জেলায় ৫ হাজারের অধিক ডাম্পার(মিনিট্রাক) চলমান। তারমধ্যে ১২৫টির রয়েছে রেজিষ্ট্রেশন মাত্র! তৎমধ্যে রিনিউ করেছে মাত্র ২৫টি ডাম্পার। কিন্তু এত অবৈধ ডাম্পার সড়কে বীরদর্পে কীভাবে চলমান তা খতিয়ে দেখলে মিলবে টোকেন বাণিজ্য। এনিয়ে সোস্যাল মিডিয়াই চলছে সরগরম প্রতিবাদ।

শাহ রেজার সড়ক দূর্ঘটনায় শোকাহত তার পরিবার পরিজন। উখিয়া উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার আকষ্মিক মৃত্যুর ঘটনাটি অনেকেই মেনে নিতে পারছেনা। সকলেই ঘাতক ডাম্পার ও চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। তার মাতা আসমা বেগম সকলের প্রতি তার সন্তানের জন্য আন্তরিকভাবে দোয়ার আর্জি করেছেন।

আরও খবর