টমটমে অচল কক্সবাজারে আরো পাঁচশ’ টমটমের অনুমতি

 

বিশেষ প্রতিবেদক •

ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক টমটমের জ্যামে অচল হয়ে পড়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। একদিকে ভাঙাচোরা সড়ক, অপরদিকে তীব্র যানজটে অতিষ্ঠ কক্সবাজার পৌরবাসী।

এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টরা বার বার যানজট নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। এবার প্রতিশ্রুতির উল্টো পথে হাঁটলো কক্সবাজার পৌর প্রশাসন। চলতি বছর শুরুতে নতুন করে আরও ৫শ’ টমটমের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌর প্রশাসন।

নতুন করে লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার পৌর প্রশাসনের কর্মকর্তা নুরুল হক বলেন, নতুনভাবে অনুমোদন দেওয়া কিছু লাইসেন্স এরমধ্যেই হস্তান্তর করা হয়েছে।

অথচ ৩৩ বর্গকিলোমিটারের আয়তনের কক্সবাজার শহরের ৮ কিলোমিটার সড়ক জুড়েই মানুষের চেয়ে যানবাহনের সংখ্যা বেশি বলে ধারণা করা হয়।

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, কক্সবাজার শহরে লাইসেন্সধারী টমটম রয়েছে আড়াই হাজার, আর রিক্সা সাড়ে ৩ হাজার। কিন্তুু সড়কে টমটম চলছে প্রায় ১০ হাজারের ও বেশি। আর রিক্সা সংখ্যা প্রায় ১১ হাজারের অধিক। সাথে অটোরিক্সা, সিএনজি, মাহিন্দ্রা, মিনিবাসসহ অন্যান্য যানবাহন মিলে ছোট একটি শহরে ৪০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করছে। এর বাইরে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে আরও ৫শ টমটম। এর ফলে কক্সবাজার শহরে যানজট আরও তীব্র আকারে ধারণ করবে।

এদিকে কক্সবাজার পৌরসভার নতুন করে টমটমের লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অনেকেই।

শহরের আলির জাহালের বাসিন্দা মো. ওয়াসিম বলেন, টমটমের দীর্ঘ জ্যামের কারণে মাত্র পাঁচ মিনিটের গন্তব্যে শহরের লালদিঘী কর্মস্থলে যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে। তার উপরে এখন প্রধান সড়কের কাজ চলছে এতে করে আরও ভোগান্তি বেড়েছে। এখন শুনতে পাচ্ছি পৌরসভা নতুন করে আরও টমটম রাম্তায় নামার জন্য লাইসেন্স দিয়েছে, যা বললেও বিপদ!

কক্সবাজার সিটি কলেজের ছাত্রী উর্মিলা বলেন, কলেজে গিয়ে নতুন বাহারছড়া বাসায় ফিরতে দুই ঘন্টা সময় লেগেছে। এমন যানজট কখনো দেখেননি জানিয়ে বলেন, প্রধান সড়কে এক স্থানে অন্তত ১ ঘণ্টা টমটমের উপর বসে থাকতে হয়েছে। টমটম চালক যানজট এড়িয়ে বিভিন্ন গলি দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পারেনি। সবখানেই জ্যাম লেগেই আছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকে দুপুর আবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের বাজারঘাটা, লালদিঘীর পাড়, ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প, বার্মিজ মার্কেট, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, হাসপাতাল সড়ক ও বড়বাজার এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। মাঝে মধ্যে কালুর দোকান ও পিটি স্কুল এলাকায়ও যানজটের কবলে পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। এতে করে যেমন করে মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, ঠিক তেমনি ব্যাঘাত ঘটছে মানুষের নিত্য নৈমত্তিক কর্মকাণ্ডে। শহরের কলাতলীতেও তীব্র যানজটে অতিষ্ঠ পর্যটকরা।।

কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগের টিআই আমিনুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে আমরা সবাই নতুন। ট্রাফিক বিভাগে থাকা একটি তালিকা থেকে দেখা যায় এক ব্যক্তির নামে একাধিক লাইসেন্স রয়েছে। যাদের বেশির ভাগের নিজস্ব টমটম নেই। এখন আরো ৫ শতাধিক নতুন লাইসেন্স অনুমোদন দেওয়ার কথাও শুনতে পাচ্ছি।

তিনি বলেন, একদিকে সড়কের বেহাল অবস্থা অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত টমটমের লাইসেন্স অনুমোদন দেওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। এ অবস্থায় যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, যখন অবৈধ টমটমের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয় তখন রাজনৈতিক নেতা কিংবা সাংবাদিকরা তা ছাড়িয়ে নিতে তদবির করেন।

টমটমের জ্যামে অচল কক্সবাজারে নতুন করে লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, রাস্তার কাজ শেষ হলে টমটমগুলো পর্যায়ক্রমে উঠিয়ে নেওয়া হবে।

কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী শাহবুদ্দিন আহমেদ বলেন, শহরের যানজট নিরসনে দিবারাত্রি কাজ করে যাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। অচিরেই সব সমস্যার সমাধান হবে।

আরও খবর