নিজস্ব প্রতিবেদক •
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে স্বেচ্ছায় তৃতীয় দফায় (দ্বিতীয় অংশ) ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে রোহিঙ্গাদের বহনকারী ৩০টি বাস। শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টা এবং বিকাল ৩টায় উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে চট্টগ্রামের পথে তাদের নিয়ে রওনা দিয়েছে বাসগুলো। এসব বাসে প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গা রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দৌজা জানান, ‘তৃতীয় দফায় (প্রথম অংশের) এক হাজার ৭৭৮ জন রোহিঙ্গা আজ শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছেন। এছাড়া একই দিন ৩০টি বাসে করে আরও দেড় হাজার রোহিঙ্গা উখিয়া থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রামে রওনা দিয়েছেন। তারা রাতে চট্টগ্রামে থাকবেন। শনিবার সকালে জাহাজে করে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হবেন তারা।’
জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত রাত থেকেই রোহিঙ্গারা সপরিবারে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আসতে থাকেন। সকালের মধ্যে সেখানে হাজার খানেক রোহিঙ্গাকে দেখা গেছে। তারা শুক্রবার সকালে বাসে করে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, তাদের নাম নিবন্ধন চলছে। যাদের নিবন্ধন সম্পন্ন হচ্ছে তাদের মালপত্র ট্রাকে আর পরিবারের সদস্যদের বাসে উঠানো হচ্ছে। আজ প্রথমে ১৮টি এবং পরে ১২টি বাস তাদের নিয়ে রওনা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে, আজ সন্ধ্যা বা রাতের মধ্যে বাসে ওঠা নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামের বিএএফ শাহীন কলেজের ট্রানজিট ক্যাম্পে পৌঁছাবেন। সেখানে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষে নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আগামীকাল শনিবার তাদের জাহাজে তোলা হবে। ৩০ জানুয়ারি তারা ভাসানচরে পৌঁছাবেন। এছাড়া শুক্রবার দুপুরে তৃতীয় ধাপের একটি অংশ (১৭৭৮ জন) রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছেছেন। তাদের সেখানকার প্রক্রিয়া শেষে তাদের সেন্টার ঘরে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ভাসানচর প্রকল্পের (আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩) উপ-প্রকল্প পরিচালক কমান্ডার এম আনোয়ারুল কবির জানান, তৃতীয় ধাপে ১৭শ’র বেশি রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছেছেন। শনিবার সকালে আরেক দল রোহিঙ্গাকে নিয়ে আসা হবে। এসব রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়া থেকে চট্টগ্রামে রওনা দিয়েছেন।
গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা হাসিমুখে ভাসানচরে পৌঁছায়। দ্বিতীয় ধাপে গত ২৯ ডিসেম্বর এক হাজার ৮০৪ জনকে ভাসানচরে নেওয়া হয়। সর্বশেষ আজ (২৯ জানুয়ারি) সকালে এক হাজার ৭৭৮ রোহিঙ্গা নতুন করে ভাসানচরে পৌঁছান। এছাড়া অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে গত মে মাসে ভাসানচরে নিয়ে যায় সরকার। তারাও সেখানে রয়েছেন।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেওয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে বসবাস করছেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-