এইচএম এরশাদ •
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা তাদের গোষ্টীয় রোহিঙ্গা ডাক্তারদের কাছ থেকে ভুল চিকিৎসা নিচ্ছে। আশ্রয় শিবিরে সরকার ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা পরিচালিত উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্টান ও হাসপাতাল বিদ্যমান থাকা সত্বেও রোহিঙ্গারা অনভিজ্ঞ আনাড়ি রোহিঙ্গা চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সূত্র জানায়, উখিয়া টেকনাফের প্রতিটি আশ্রয় ক্যাম্পে সার্টিফিকেটধারী শত শত ডাক্তার থাকা সত্বেও রোহিঙ্গা পল্লী ডাক্তারের কাছে যেতে বেশী অভ্যস্ত রোহিঙ্গারা। তারা সরকারী বেসরকারী চিকিৎসা সেবা না নিয়ে অনভিজ্ঞ ওইসব রোহিঙ্গা ডাক্তারের শরনাপন্ন হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে।
মিয়ানমারে স্কুলে (রাখাইন ভাষা) কয়েক ক্লাশ পাস করে বাংলাদেশে এসে ক্যাম্পে ডাক্তার সেজেছে এমন রোহিঙ্গা ভূয়া ডাক্তারের সংখ্যা অনেক। সরকারী ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থায় নিয়োজিত অভিজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে না গিয়ে রোহিঙ্গা নারী-শিশুরা ওইসব ভুঁইফোড় ডাক্তারের জন্য ঘন্টার ঘন্টা অপেক্ষায় থাকে বলে জানা গেছে। রাখাইন রাজ্যে বসবাসকালীন রোহিঙ্গারা দেশটির সরকারী হাসপাতালে ভর্তি বা চিকিৎসা সেবা নেয়া থেকে বিরত থাকত। যদিওবা বাধ্য হয়ে ভর্তি হলেও রোহিঙ্গা পল্লী চিকিৎসককে সহযোগী হিসেবে পাশে রাখত বলে জানা গেছে। রাখাইন (মগ) ডাক্তারগণ সহসা মরে যাবার ওষুধ খাইয়ে দিয়ে রোহিঙ্গা জাতি কমিয়ে আনতে পারে, এক সময় রোহিঙ্গা নেতারা রাখাইন রাজ্যে এমন অপবাদ ছড়িয়েছিল। তখন থেকে রোহিঙ্গা নারী পুরুষ তাদের স্বজাতি (রোহিঙ্গা) ডাক্তারদের উপর আস্থা বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে উন্নত চিকিৎসা সেবা পাওয়া সত্বেও রোহিঙ্গারা আশ্রয় ক্যাম্পে তাদের পল্লী ডাক্তারের অপেক্ষায় বসে থাকে।
উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত আশ্রয় শিবিরগুলোতে ক্যাম্প প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ক্যাম্পে অবৈধ ঔষধের দোকান ও এক শ্রেণীর রোহিঙ্গা রাখাইন স্কুলে পড়ালেখা করে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে নিজেরা ডাক্তার সেজে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। এসব ওষুধের দোকানগুলোতে ডাক্তারি পেশা চালিয়ে যাচ্ছে মগভাষায় শিক্ষিত এক শ্রেণীর রোহিঙ্গা। উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে উঠা ওইসব ফার্মেসীর আড়ালে ইয়াবা কারবারও চলছে বলে তথ্য মিলছে। উখিয়া জামতলি রোহিঙ্গা ক্যাম্প বাজার কেন্দ্রিক ওষুধের দোকান খুলে রোগী দেখছে ভূয়া চিকিৎসক রোহিঙ্গা। অনেকেই ক্যম্পের ভিতরে তাদের কক্ষে অবৈধ ভাবে ডাক্তারী ও ঔষধ বিক্রি করলেও ক্যাম্প প্রশাসন এ পর্যন্তও অভিযান পরিচালনা করেনি। এ সুযোগে অপচিকিৎসা ও ইয়াবা কারবার চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা ডাক্তাররা।
বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসির ড্রাগ লাইসেন্সের ফটোকপি দিয়ে অবৈধ ভাবে দোকান করে নগদ টাকা কামাই করছে রোহিঙ্গারা।
থাইংখালী, বালুখালী, পালংখালী, ময়নারঘোনা, কুতুপালং, মধুরছড়া, জামতলি রোহিঙ্গা বাজারের অলিতে গলিতে অবৈধ ভাবে ওষুধের ফার্মেসী খুলে রোহিঙ্গারা নিজেদের ডাক্তার সেঁজে চিকিৎসার নামে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা বাণিজ্য।
স্থানীয় জামতলির ডাক্তার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার মো: ইউছুফ বলেন, রোহিঙ্গা আসার কারনে আমরা ক্ষেত-খামার, জমিজমাসহ সবকিছু হারিয়েছি। বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের দাম দ্বিগুণ। এখন স্থানীয়দের ব্যবসা কমে গেছে। রোহিঙ্গাদের দোকানে ব্যবসা জমজমাট। রোহিঙ্গারা রোহিঙ্গার দোকান ব্যতীত অন্য কোন দোকান থেকে ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ ক্রয় করেনা।
জামতলির ইলিয়াস নামে এক রোহিঙ্গা ডাক্তার টেকনাফের হ্নীলা থেকে এলএমএফ সার্টিফিকেট বানিছে। গঙ্গাচর ফার্মেসি পরিচালক রোহিঙ্গা ডাক্তার মো: জিকরিয়ার বির“দ্ধে ইয়াাবা সম্পৃক্ততা ও মানবপাচারের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় দালালের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ডাক্তাররা কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নামে বেনামে ট্রেড লাইসেন্স ও নাগরিক সনদ নিয়ে এবং অন্যজনের নামে থাকা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের ডিপোমা সনদ এলএমএএফ, ডিএমএডি, এমএফ, আরএমপি সনদ এবং ভূঁয়া সনদ বানিয়ে এই মহা মানবসেবা মূলক পেশাকে কলঙ্কিত করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক যেসব অশিক্ষিত ভূঁয়া রোহিঙ্গা ডাক্তার ও আনাড়ি চিকিৎসক যত্রতত্র দোকান খুলে চিকিৎসার নামে ভূল চিকিৎসা করে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
জামতলি রোহিঙ্গা বাজারে যেসব ভূঁয়া রোহিঙ্গা ডাক্তারের হদিস পাওয়া গেছে, তারা হচ্ছে- জামতলি শফিক মার্কেটে মো: জিকরিয়া, মো: তাহের, মো:ইরফান, ইব্রাহিম মার্কেটে মো: ইলিয়াছ, নুর সেলিম মো: ইদ্রিস, মো: শমশু, আনসার উলাহ কেসিং প্রকাশ সচিং সহ অনেকে ফার্মেসী বসিয়ে ওষুধ ব্যবসা ও ডাক্তারি পেশা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অজ্ঞ ডাক্তাররা চিকিৎসার নামে রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দিচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত নিম্নমানের ইত্যাদি ওষুধ। ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যম্পে কথিত ভূঁইফোড় ডাক্তারসহ অন্তত ১০ হাজারের অধিক ওষুধের দোকান রয়েছে রোহিঙ্গাদের। বিভিন্ন কোম্পানি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওষুধ সরবরাহ দেয়ার জন্য অসংখ্য প্রতিনিধি নিয়োজিত রেখেছে। তারা বাকীতে ওষুধ দিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের দোকানে। সপ্তাহ পরপর এসে টাকা আদায় করছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, কুতুপালং বাজারসহ ক্যাম্পের ভিতরে বাইরে ওষুধের দোকান খুলে যারা নিজেদের ডাক্তার দাবীকরে ভূঁয়া কাগজপত্র নিয়ে ওষুধ বিক্রি করছে, তাদের ফার্মেসী এবং কথিত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে একাধিক বার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অর্থ ও জেল উভয় দন্ডে দন্ডিত করেছি। আর ফার্মেসী খুলে অনেকেই একটা ইনজেকশনের সিরিজ ২-৩ বার ব্যবহার করছে এমন অভিযোগ আমার কাছে আছে। #
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-