হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া •
কক্সবাজারের উখিয়ায় কিশোর গ্যাং, সন্ত্রাস ও ইয়াবা মাদক প্রতিরোধে পাড়া মহল্লায় এমন কি প্রতি জুমাবারে মসজিদে দাঁড়িয়ে মুসল্লিদের আহবান জানাচ্ছেন উখিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ আহমেদ সন্জুর মোরশেদ।
তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং ও ইয়াবা মাদক রোধে প্রতি পরিবারের অভিভাবকদের শাসন ও শিক্ষা দিতে হবে। এবং সকল প্রকার অনৈতিক কাজ ও অপরাধ প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। সব জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের কথাও জানান।
সম্প্রতি উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় এক ছাত্রলীগ নেতার হাতে অন্য ছাত্রলীগ নেতা ছুরিকাঘাতে নিহতের ঘটনা ও কিশোর গ্যাং এবং উখিয়ার সার্বিক অবস্থা নিয়ে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।কক্সবাজারসহ উখিয়া-টেকনাফে বন বিভাগ ও সওজের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা আবাসিক ও অনাবাসিক ভবনে যেন অরক্ষিত অবস্থা বিরাজ করছে।
তাছাড়া গ্রামাঞ্চলের বাজারে চায়ের দোকানগুলোতে বিশেষ কায়দায় মাদকের আড্ডার মতো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। পানের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে নিরবে চলছে ইয়াবার বেচা-কেনা। দিবা রাত্রি বিশেষ করে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই উঠতি বয়সের কিশোর যুবদের বাইক নিয়ে পাড়া-মহল্লায় প্রবেশ করতে দেখা যায়।
স্থানীয় জাহাঙ্গির আলম বলেন, এলাকায় অপরিচিত কিশোর ও যুবদের বাইক নিয়ে ঘুরাঘুরি করতে দেখেছি। বহিরাগত অপরাধীরা ইয়াবাসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আমরা এলাকার ছেলে-মেয়েদের কথা বিবেচনা করে নিজেরাই নজরদারি বাড়িয়েছি।
তিনি আরো বলেন, এনজিওর চাকরির কথা বলে পাশের ভাড়া বাসায় থাকতো এক তরুণী। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি তরুণীটি পেশাদার কলগার্ল ছিল। প্রতি সন্ধ্যা বেলা সিএনজিতে করে সে কক্সবাজার আবাসিক হোটেলে চলে যেত। পরের দিন সকাল বেলা বাসায় ফিরতো। এহেন অবস্থা দেখে আমরা কয়েকজন তাকে কড়াভাবে শাসিয়ে দিয়ে কথা বললে সে ঝামেলা এড়াতে ভাড়া বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। আমাদের সন্তানদের অনৈতিক কাজ থেকে বাঁচাতে পরিবারিক ও সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নানান রকম মানুষ রোহিঙ্গার কারণে এনজিওতে কাজ করছে। তাদের মধ্যে অনেকেই স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ভাড়া বাসায় অনৈতিক কাজে লিপ্ত রয়েছে। উখিয়া থানা সংলগ্ন জনৈক ভাড়া বাসা থেকে গত বছর এ ধরনের দম্পতিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে মুছলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়।
এনজিওতে চাকরিরত অনেকেই ইয়াবায় আসক্ত। তারা স্থানীয়দের ম্যানেজ করে বিভিন্ন কৌশলে ইয়াবা নিয়ে কক্সবাজার আবাসিক হোটেলে আড্ডা জমায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনজিও কর্মী বলেন, ক্যাম্প থেকে কাজ শেষ করে বন্ধুদের সাথে কক্সবাজারে গিয়ে আড্ডায় মেতে উঠি। সেখানে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলের বয়দের মাধ্যমে ইয়াবা কিনে সেবন করা যায়। সে ক্ষেত্রে উখিয়ার চেয়ে একটু দাম বেশি দিয়ে ইয়াবা কিনতে হয়।
পরিকল্পিত উখিয়া চাই এর আহবায়ক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, কিছু অছাত্র ও অপ্রাপ্ত বয়স্করা রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং তৈরি করছে। যা অপ্রত্যাশিত। বরগুনার আলোচিত কিশোর গ্যাং, বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের পর সব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ডের অপরাধ জগৎ নিয়ে দেশ ব্যাপী ব্যাপক আলোচনা হয়। নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও দেশ জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অন্য বন্ডরা। যারা নামে-বেনামে কিশোর গ্যাং পরিচালিত করছিল।
মানবতার শহর কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে কিশোর গ্যাং যেন মাথা ছাড়া দিয়ে ওঠতে না পারে সে জন্য জাতির বিবেক সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে কিশোর গ্যাং বা উঠতি সন্ত্রাসীদের ধরতে পুলিশকে সহায়তা করা দরকার। শান্তিময় উখিয়ার ঐতিহ্য ধরে রাখতে সকলকে অভিভাবকের ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-