সাইফুল ইসলাম •
কক্সবাজার পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় সিন্ডিকেট করে আবারো গ্যাসের দাম বাড়তি দামে বিক্রি করছে ডিলারেরা। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরাও প্রতিটি গ্যাসের মূল্যে ১৫০ টাকা ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করছে। গত ১৫ দিন হতে ধাপে ধাপে এই গ্যাসের দাম বাড়তি দামে বিক্রি করেছে ডিলারেরা এমন অভিযোগ খুচরা ব্যবসায়ীদের। কিন্তু অনেকের অভিযোগ কক্সবাজারের গ্যাস ডিলারেরা সিন্ডিকেট করে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে।
জানা গেছে, কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে এলপি গ্যাসসহ বিভিন্ন গ্যাস সিলিন্ডারের দাম। কয়েকদিনে ব্যবধানে কয়েকটি কোম্পানি প্রতি সিলিন্ডারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দাম বাড়িয়েছে। দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। ৪/৫ দিন আগে সিলিন্ডার ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে ১ হাজার ৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। আবার কোনো দোকানে ১১শ টাকাও বিক্রি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকালের দিকে রান্নার সময় হঠাৎ গ্যাসের চুলা বন্ধ হয়ে যায় কক্সবাজার পৌর শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া এলাকার গৃহবধূ মর্জিনা আক্তারের। উপায় না দেখে গ্যাস সিলিন্ডার কেনার জন্য বের হন। দোকানে গিয়ে জানতে পারেন গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। বাড়তি দাম পরিশোধ করার মতো টাকা আনেননি তিনি। তাই না কিনেই তিনি বাড়ি ফেরেন।
মর্জিনা বলেন, রান্নার জন্য মাসে অন্তত একটি সিলিন্ডার কিনতে হয়। গত মাসে সিলিন্ডার কিনেছি ৮৫০ টাকায়। আর বৃহস্পতিবার একই কোম্পানির সিলিন্ডার ১ হাজার ৫০ টাকা করে চাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
পৌর শহরের বেশ কয়েকজন খুচরা গ্যাস ব্যবসায়ী বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির ডিলারদের কাছ থেকে চার পাঁচ দিনে ধরে বেশি দামে গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে। তারা সামান্য লাভে খুচরা বিক্রি করছেন। পাইকারিতে প্রতিটি কোম্পানির সিলিন্ডারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। তাই খুচরা বাজারে আগের চেয়ে ২শ’ টাকায় বেড়েছে।
স্কুলের শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বলেন, বাড়তি দামে গ্যাস কিনে রান্না চালিয়ে যাওয়া অনেক কষ্টকর। তাই গ্যাসের চুলার পরিবর্তে ইলেকট্রিক ম্যাজিক চুলা ব্যবহার শুরু করেছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কিছু ডিলার অধিক মুনাফার লোভে জোটবদ্ধভাবে এলপি গ্যাসসহ বিভিন্ন ধরণের গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এছাড়া সিলিন্ডারে ওজনের ক্ষেত্রেও রয়েছে তারতম্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুচরা দোকানে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছে ১ হাজার ৫০ টাকা, যমুনা গ্যাস ১ হাজার ৫০ টাকা, বেক্সিমকো গ্যাস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১১শ’ টাকা, ওমেরা গ্যাস ১ হাজার ৫০ টাকা, টোটাল গ্যাস ১ হাজার টাকা ও বসুন্ধরা গ্যাস বিক্রি করছে ১ হাজার ৫০ টাকা।
আমিন এন্টারপ্রাইজ স্বত্বাধিকারী মো. তোফায়েল বলেন, গত ১ জানুয়ারি থেকে এলপি গ্যাসসহ বিভিন্ন গ্যাসের দাম বেড়ে যায়। বাড়তি দামের সঙ্গে ডিলারদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সব কোম্পানিই গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। কোম্পানির বেঁধে দেয়া দরেই গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার গ্যাস ডিলার কমিটির সভাপতি সরওয়ার কামাল সিকদার বলেন, কয়েকদিন ধরে এলপি গ্যাসসহ বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাসের দাম বেড়েছে। এতে আমাদের কোন হাত নেই। সব কোম্পানিই গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে ফলে এলপি গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ওই গ্যাসের দামও বাড়িয়ে বিক্রি করছে চট্টগ্রামের বড় বড় ডিলারেরা। যার ফলে আমাদেরকে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ ইমরান হোসাইন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজার পৌর এলাকায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা আমি শুনেছি। আগামী রবিবার থেকে বাজার তদারকি করা হবে। যদিও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হয়ে থাকে তদন্তর্পূবক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাঃ শাজাহান আলী বলেন, এখন কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলেই তদন্তর্পূবক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-