শত বাধার পরও ভোটার হচ্ছে রোহিঙ্গারা

মাহবুবুর রহমান •

প্রশাসনের শতচেস্টা নানান ধরনের কাগজপত্র প্রদর্শন সহ হরেক রকমের প্রকৃয়ার পরও ভোটার আইডি কার্ড পাচ্ছে রোহিঙ্গারা। মূলত আগে এসে স্থায়ী হওয়া রোহিঙ্গারা তাদের নাম পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধি এবং নির্বাচন অফিসের কতিপয় কর্মচারীদের ম্যানেজ করে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করছে রোহিঙ্গারা।

এছাড়া রোহিঙ্গা ছেলেমেয়েদের হাতে বাংলাদেশী স্কুল কলেজ মাদ্রাসার সরকারি সার্টিফিকেট থাকায় সহজেই তারা ভোটার হতে পারছে বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে ভোটার হওয়া সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে সুবিধা নিয়ে সীমাহিন কষ্ট ভোগ করছে স্থানীয়রা।

তাই রোহিঙ্গা ছেলেমেয়েদের স্কুল সার্টিফিকেটে রোহিঙ্গা লেখা থাকা সহ ভোটার হওয়া ঠেকাতে আরো তৎপর হওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোরদাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার এবিসিঘোনার আমজাদ হোসেন ও তার স্ত্রী রাশেদা বেগম দুজনেই রোহিঙ্গা। এলাকাবাসীর মতে তারা প্রায় ১৫ বছর আগে বার্মা থেকে বাংলাদেশে এসেছে তবে বর্তমানে তাদের ছেলে ইউনুচ সহ সবাই আইডি কার্ডধারী অনেকে পাসপোর্টধারী। একই ভাবে এবিসিঘোনা সংলগ্ন আশুঘোনার আমির হোসেন প্রকৃত বার্মার নাগরিক তার ছেলে মোঃ সেলিম আইডি কার্ডে পিতার নাম ছৈয়দ হোসন মাতা গোলতাজ বেগম সহ সবাই এখন বাংলাদেশী ভোটার, একই এলাকার রুপবান,লাইট হাউজ পাড়ার রেহেনা বেগম সহ অনেক প্রকৃত রোহিঙ্গার হাতে এখন বাংলাদেশী আইডি কার্ড আছে।

শহরের পাহাড়তলী এলাকায় আগে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্যতম সাইফুল খলিফা (হালিমাপাড়া) কামাল ফকিরের ছেলে আবদুল্লাহ এবং তার পুরু পরিবার,রহমত উল্লাহ (টমটম চালক) তার এক ছেলে বর্তমানে চট্টগ্রামের বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্ত্রী মহেশখালী থেকে ভোটার হয়েছে.আবদুল মালেক(হালিমাপাড়া) এনায়েত উল্লাহ,(হালিমাপাড়া)ফয়েজ উল্লাহ (রোহিঙ্গা হয়েও ভোটার আইডি করায় জেল খেটেছে )মৌলবী নুরুল হোসাইন,মৌলবী আহমদ কবির (এনজিও কর্মকর্তা),আবুল হোসেন পেটান,তার ভাই হাসান,নুর বাহার স্বামী আসাদ উল্লাহ(মালয়েশিয়া প্রবাসী)সত্তরঘোনা,জাহেদ হোসেন নতুন বাজার,পাহাড়তলী,শওকত মিস্ত্রি,সত্তরঘোনা,হাফেজ আহামদ (জেল ফেরত)সত্তরঘোনা,এছাড়া রোহিঙ্গা হয়েও পরিচয় গোপন রেখে বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ে এবং এনজিও কর্মকর্তা আজিজ,বাহাদুর মিয়া,হালিমাপাড়া,শাহআলম। এসব রোহিঙ্গারা আবার রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ভাবে ভুয়া সনদ এবং ভিন্নজেলা থেকে কাগজ পত্র সংগ্রহ করে ঢাকা চট্টগ্রামে পড়ার সুযোগ করে দেয় আবার তাদের মুল পৃষ্টপোষক হচ্ছে রোহিঙ্গা ইব্রাহিম যে রোহিঙ্গা পরিচয় গোপন করে ইতি মধ্যে চট্টগ্রাম ইসলামিক বিশ^বিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে পড়েছে।এছাড়া মৌলবী নুর মোহাম্মদ,অজি উল্লাহ,ছৈয়দ আমিন,হাসিম উল্লাহ রোহিঙ্গা হয়েও পাহাড়তলী এলাকায় দাপটের সাথে বিচরণ করে এবং নানান অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।

এছাড়া বৃহত্তর পাহাড়তলী এলাকার সূপরিচিত রোহিঙ্গা জহির হাজী,বশির মাঝি (বর্তমানে কয়েকটি দোকানের মালিক)পাহাড়তলী ইসুলুঘোনার মৃত হাবিব উল্লাহর ছেলে আরিফ উল্লাহ,ইয়াবা ব্যবসায়ি নুর মোহাম্মদ,হাফেজ আহামদের স্ত্রী সনজিদা (বর্তমানে গোলদিঘির পাড়এলাকা থেকে ভোটার হয়েছে)আবদুল মতলব প্রকাশ আমির সাব (বায়তুশ শরফ হোস্টেলের বাবুর্চী,সিরাজুল হক মাঝি (ইসুলুঘোনা)তার ছেলে ইয়াবা ব্যবসায়ি মনজুর আলম,মোহাম্মদ আরিফ (বেশ কয়েকটি ইয়াবা মামলার আসামী)আবদুল হাকিম মাঝির ছেলে মোঃ শফি,বশির প্রকাশ শুটকী বশির,রোহিঙ্গা বর্তমানে সৌদি প্রবাসী নুরুল ইসলাম পিতা ইয়াকুব আলী,মাতা মাহমুদা খাতুন,সে ঈদগাঁও ইসলামপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ভোটার হিসাবে পাসপোর্ট করেছে যার পাসপোর্ট নাম্বার বি কিউ ০০৭১৮৪৬১।

বর্তমানে মালয়েশিয়া প্রবাসী পাহাড়তলী সত্তরঘোনার বাসিন্দা জমির হোসাইন পিতা আলী হোসাইন মাতা মোস্তফা খাতুন স্ত্রী ছমুদা খাতুন, যার পাসপোর্ট নাম্বার এ ই ০১৮৯৪০২। একই এলাকায় থাকা রোহিঙ্গা হলেও পাসপোর্ট পেয়েছে মোহাম্মদ ইউচুপ পিতা আবদু শুক্কর মাতা জামরুপ বেগম,স্ত্রী রাজিয়া বেগম পাসপোর্ট নাম্বার এ ই্ ৬১৮৮২৬৩। এদিকে শহরের উত্তর রুমালিয়ারছড়ার গুদারপাড়া এলাকার স্বীকৃত রোহিঙ্গা গোলাম হেসেনের ছেলে আসাদ উল্লাহ সহ কয়েক ভাই রয়েছে যাদের অনেকের আইডি কার্ড করতে না পারায় দীর্ঘদিন বিপুল টাকা নিয়ে ঘুরেছিল। বর্তমানে মায়ামনার থেকে আসার তাদের পুরাতন আত্বীয় স্বজন প্রায় সময় তাদের বাড়িতে আসে বলে জানান এলাকাবাসী। এছাড়া তাদের ছেলেমেয়েরা অনেকে বর্তমানে এনজিওতে চাকরী করে।

পৌর এলাকার ৯ নং ওয়ার্ডের বাদশাঘোনা এলাকার সিরাজুল ইসলাম,নুরুল ইসলাম, আমিন,নজির আহামদের পুরু পরিবার,হাফেজ মনির,ছৈয়দুল আমিন,শফিক মিস্ত্রি,নেছারু সহ অসংখ্য রোহিঙ্গা আসে এসে এখানে বসাবাস করছে তারা এখন নানান ভাবে সমাজ পতি সহ নানান পদ দখল করে বসে আছে।

বৈদ্যঘোনা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নতুন অনেকে এসেছে তবে আগে এসে বর্তমানে স্থানীয় হিসাবে প্রতিষ্টিত হওয়া রোহিঙ্গার মধ্যে অন্যতম আশরাফ আলী খলিফা, নুর মোহাম্মদ মিস্ত্রি,জাহেদের বাপ হুন্ডি ব্যবসায়ি মালয়েশিয়ার দালাল ছিল, শফি খাজা মঞ্জিল এরা বেশ কয়েক ভাই আছে যারা প্রত্যেকে এখন স্থানীয় হিসাবে দাপটে বেড়ায়। জকরিয়া সওদাগর, নজির আহামদ লেবার। খুরুশকুল হামজার ডেইল এলাকা খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আগে আসা রোহিঙ্গা যারা এখন স্থানীয় হিসাবে প্রতিষ্টিত হয়ে গেছে মোঃ কালু,ইউচুপ,আবদুল হাকিম,ইউচুপ আলী,কালাবদা,সোনামিয়া, মোঃ দিলু,আনোয়ার হোসেন,আবদস ছবি,ছলিম উল্লাহ,মোঃ ছৈয়দ, নুর হোসেন,আবুল হোসেন,জাহেদ (লামাঝি পাড়া)হাফেজ আহামদ,আবুল হোসেন,নজির হোসেন,সলিম (লামাঝিপাড়া) জুবায়ের কুনারপাড়ার। এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলার সালাউদ্দিন সেতু বলেন,রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে মূল সমস্যা হচ্ছে তাদের স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসার সার্টিফিকেট এসব সার্টিফিকেট থাকার কারনে তারা সরকারি সুবিধাগুলো আদায় করছে অনেক সময় ভোটার হয়ে যাচ্ছে আমি মনে করি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর সময় রোহিঙ্গা শিশুদের আলাদা পরিচিতি এবং তাদের নামের পাশে এবং সার্টিফিকেটে মায়ানমারের নাগরিক শব্দটি লেখা থাকা জরুরী। এতে তারা লেখাপড়া করতে পারলেও বাংলাদেশের সুযোগ সুবিধা নিতে পারবে না।

একই মত দেন কাউন্সিলার ইয়াছমিন আক্তার তিনি বলেন,জমির খতিয়ান থেকে শুরু করে স্কুল কলেজের সার্টিফিকেট বাবা চাচার আইডি কার্ড দেখালে অনেক সময় রোহিঙ্গারা ভোটার হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তাই এখনো সময় আছে গোড়ায় কাজ করতে হবে তারা যেন স্কুল কলেজের সার্টিফিকেট না পায় সে জন্য সরকারকে কাজ করতে হবে।

এ ব্যপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন জেলা সভাপতি প্রফেসর এম এ বারী বলেন,বর্তমানে কক্সবাজারের মানুষ নাগরিক সুবিধা নিতে যে হয়রানী এবং ভুগান্তির সম্মুখিন হচ্ছে তা খুবই লজ্জাজনক। অথচ এতকিছুর পরও রোহিঙ্গারা ঠিকই ভোটার হচ্ছে বিশেষ করে রোহিঙ্গার ছেলেমেয়েরা ভোটার হওয়ার প্রবণতা বেশি এ জন্য জনপ্রতিনিধিরা কখনো দ্বায় এড়াতে পারেনা। তারা অনেক সময় রোহিঙ্গা পরিচয় জেনেও প্রভাবশালীদের তদবিরএবং নিজেদের ভোটার বাড়ানোর জন্য রোহিঙ্গাদের ভোটার করছে।

এ ব্যপারে জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ এস.এম শাহাদাত হোসেন বলেন,রোহিঙ্গা ভোটার ঠেকাতে সরকার সব রকমের উদ্দোগ নিয়েছে। আগে কোন রোহিঙ্গা ভোটার হয়ে থাকলে সেটা কেউ আমাদের জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব

আরও খবর