রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের সংখ্যালঘু ইস্যুতে আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরের নয়টি দেশ তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে বৃহস্পতিবার ( ৩১ ডিসেম্বর) রাতে প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। আর প্রস্তাবটির পক্ষে ১৩০টি ভোট পড়েছে।
আজ শনিবার (২ জানুয়ারি) নিউইয়র্কের কূটনৈতিক সূত্র, মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজ এবং আনান কমিশনের এক সদস্যের টুইট থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের কর্ম অধিবেশনে ক্যামেরুন, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, নামিবিয়া, কেনিয়া, লেসেথো, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, পালাউ ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জ—এ নয় দেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
অথচ ২০১৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুবিষয়ক প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো অবস্থান না নিয়ে ভোটদানে বিরত থেকেছিল এই ৯টি দেশ।
গত বৃহস্পতিবার ওই ভোটাভুটিতে প্রস্তাবের বিপক্ষে অর্থাৎ মিয়ানমারের পক্ষে ভোট দিয়েছে মিয়ানমার, চীন, রাশিয়া, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, লাওস, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও জিম্বাবুয়ে। আর ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও জাপানসহ ২৫টি দেশ প্রস্তাবের ভোটাভুটি থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে।
গত বছরের নভেম্বের জাতিসংঘের তৃতীয় কমিটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) প্রস্তাবটি আনে। ইইউ এবং ওআইসির প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) তদন্ত শুরুর প্রসঙ্গ এবং রোহিঙ্গা ও সংখ্যালঘু অন্য জনগোষ্ঠীদের মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে বঞ্চিত করার মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া, প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিসহ আরও কিছু বিষয়ে মিয়ানমারকে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
নিউইয়র্কের কূটনীতিক সূত্রগুলো আজ শনিবার জানিয়েছে, গত নভেম্বরে সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে আনা প্রস্তাবের ওপর এবার বছরের শেষ দিনের কর্ম অধিবেশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ও মিয়ানমার বিরোধিতা করে। জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ পরিষদের কর্ম অধিবেশনে প্রস্তাবটি নিয়ে সিদ্ধান্তের আগে মিয়ানমার এ নিয়ে ভোটাভুটির আহ্বান জানিয়েছিল। আর এবারের ভোটাভুটিতে তৃতীয় কমিটির চেয়ে কম ভোট পেয়েছে মিয়ানমার।
এদিকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তৃতীয় কমিটির নেয়া প্রস্তাব ৭৫তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪৮তম প্লেনারি অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রস্তাবটি নিয়ে প্লেনারি অধিবেশনের সিদ্ধান্তের আগে মিয়ানমার এ নিয়ে ভোটাভুটির আহ্বান জানিয়েছিল।
নিউইয়র্কের কূটনীতিক সূত্রগুলো শনিবার জানিয়েছে, মিয়ানমারে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য গঠিত কমিটি আইআইএমএমের জন্য তহবিলসহ আরও কিছু বিষয়ের কারণে ভোটাভুটি পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ৩১ ডিসেম্বর অর্থাৎ ২০২০ সালের শেষ দিনে জাতিসংঘের শেষ কর্ম অধিবেশেন রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের অন্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার প্রশ্নের প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে।
আনান কমিশন নামে পরিচিত রাখাইনবিষয়ক সাবেক পরামর্শক কমিশনের অন্যতম সদস্য ও ডাচ কূটনীতিক লেটেশিয়া ভ্যান্ডেন অ্যাসাম শুক্রবার টুইটে ভোটাভুটি বিশ্লেষণ করে বলছেন, ২০১৯ সালের প্রস্তাবের ভোটাভুটির সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় ৯টি দেশ তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এই ৯টি দেশ এবার প্রস্তাবের পক্ষে অর্থাৎ মিয়ানমারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-