চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আকাশের স্ত্রী তানজিলা হক মিতুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। ২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথম ধার্য তারিখে হাজিরা দেন। এরপর থেকে পলাতক থাকায় আজ বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদলতের বিচারক শফিউদ্দিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
বাদিপক্ষের আইনজীবী ওয়াহিদুল ইসলাম চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়ার পর নিয়ম অনুসারে নিম্ন আদালতের ধার্য তারিখে হাজির থাকার কথা। কিন্তু জামিনের পর একটা তারিখে উপস্থিত হওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তাই আদালত আজ বৃহস্পতিবার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি ভোরে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার নিজ বাসায় শরীরে বিষাক্ত ইঞ্জেকশন ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করেন আকাশ। ওই রাতেই তানজিলা হক মিতুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে ছয়জনকে আসামি করে চান্দগাঁও থানায় মিতুসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন আকাশের মা জোবেদা খানম। মামলাটিতে ২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন মিতু। জামিন নেয়ার পর থেকে ধার্য তারিখে একবারও হাজির হননি। আদালতে হাজির না হওয়ায় ২০২০ সালের ৪ মার্চ মিতুকে শোকজ করা হয়। কিন্তু শোকজের জবাব দেননি মিতু। এছাড়াও গত ৩১ আগস্ট আসামিপক্ষের আইনজীবী মিতুর মামলা পরিচালনা করবেন না বলে আদালতে লিখিতভাবে অবহিত করেন।
আকাশ (৩২) মৃত্যুর আগে চমেক হাসপাতালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তিনি ‘থ্রি ডক্টরস’ নামে মেডিকেল ভর্তির একটি কোচিং সেন্টার চালাতেন। অভিযোগ উঠে, স্ত্রীর সঙ্গে বিবাদের জের ধরে আকাশ আত্মহত্যা করেছেন।
আকাশের পরিবার পূর্বকোণকে জানায়, মিতু কুমিল্লা মেডিকেলে এমবিবিএস শেষ করে। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেলে ইন্টার্ন করার সময় আকাশের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২০১৬ সালে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পরপরই উচ্চশিক্ষার জন্য মিতু যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখান থেকে ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসেন।
আকাশ আত্মহত্যার আগে মৃত্যুর জন্য স্ত্রীকে অভিযুক্ত করে একটি চিরকুট লিখে যান। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আকাশ স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক’ ও ‘প্রতারণার’ অভিযোগ আনেন।
মামলাটির তদন্তশেষে ২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। চার্জশিটভুক্তরা হলেন- চিকিৎসক আকাশের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু, তার (মিতুর) মা শামীমা শেলী, বাবা আনিসুল হক চৌধুরী, ছোটবোন সানজিলা হক চৌধুরী আলিশা এবং মিতুর কথিত বন্ধু ডা. মাহবুবুল আলম। বাদির আইনজীবী জানান, মিতু ছাড়া অন্যদের বিরুদ্ধে আদালতের ক্রোকি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
এ মামলায় মিতুর অপর বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভারতীয় নাগরিক উত্তম প্যাটেলকে চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-