গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল •
প্রাকৃতিক দৃর্শ্যে ঘেরা সৌন্দোর্য্যের লীলাভুমি নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে সেচ্ছায় বসতি স্থাপন করতে উখিয়া-টেকনাফ থেকে দ্বিতীয় দফায় আরো ১৭৭৪ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে।
২৮ ডিসেম্বর (সোমবার) টেকনাফ এবং উখিয়া থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। সেখান থেকে আজ মঙ্গলবার নৌবাহিনীর জাহাজে করে তাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। ভাসানচরে এটি রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দল।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১৬৪৫ জন রোহিঙ্গা নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছান।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে উখিয়া গিয়ে দেখা যায়,
উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে বসতি করতে আগ্রহী এমন রোহিঙ্গা পরিবারগুলো উখিয়া কলেজ মাঠে জড়ো করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই তারা সেখান থেকে সকাল সাড়ে এগারোটায় ৩৩টি বাস ও ট্রাকে করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া হয়। এসময় ভাসানচরগামী রোহিঙ্গারা বাস থেকে হাঁসিমুখে হাতনেড়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা জানান।
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ ইদ্রিস জানিয়েছেন প্রথম দফায় যারা ভাসানচর গেছেন তারা সবাই সেখানকার পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। সেখানে তারা এখন আরাম আয়েশে জীবন যাপন করছেন, এ খবর এখন ক্যাম্পের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের ভালো থাকার খবর শুনে ক্যাম্পের অন্য রোহিঙ্গারাও ভাসানচর থেকে আগ্রহী হয়ে ওঠছে।
তিনি আরো বলেন, প্রথম দফায় ভাসানচর যাওয়া রোহিঙ্গারা শুরুতে কিছুটা ভয় এবং উৎকণ্ঠায় ছিলেন। কিন্তু এবারের ভাসানচর যাওয়া রোহিঙ্গা গুলোর মাঝে একটা খুশির আমেজ বিরাজ করছে। তারা স্বেচ্ছায় ক্যাম্পের ঠাসাঠাসি বসবাস ছেড়ে ভাসানচরে যাচ্ছে।
শামলাপুর ২৩ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের হেড মাঝি আবুল হাশেম বলেন, সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে এসব রোহিঙ্গা ভাসান চরে নতুন করে বসতি করার জন্য স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তাদের অনেকে নির্ধারিত সময়ে ট্রানজিট পয়েন্টে চলে গিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনার বাস ধরছে।
ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া উখিয়া ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মো.রহমত উল্লাহ জানান, পরিবারের ৬ সদস্যকে নিয়ে ভাসানচরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে ভাসানচরে যাওয়া আমাদের স্বজনরা জানিয়েছেন,
উখিয়া টেকনাফের ঝুপড়ি বস্তিতে থাকার চেয়ে ভাসানচর অনেক বেশি নিরাপদ। সেখানকার ঘরবাড়ি, খাওয়া দাওয়া সবকিছু এখানকার চেয়ে উন্নত। তাই তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে ভাসানচর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নারী জুহুরা বেগম জানান,স্বামী স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি- শরণার্থী জীবনের বাকি সময়টুকু ভাসানচরে কাটাবো। এখানকার ঠাঁসাঠাসি বসবাস আর ভালো লাগছেনা। প্রথম দিকে ভাসানচর যাওয়ার কথা বললে অনেকে ভয় দেখাতো, কিন্তু আমাদের আগে যারা সেখানে গেছে তাদের কথা শুনে সে ভয় কেটে গেছে। যাওয়ার সময় ক্যাম্পর স্বজনদের অনুরোধ করেছি তারাও যেন ভাসানচরে চলে আসে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের অাগাস্ট মাসে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়ন থেকে প্রানে বাঁচার জন্য প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। পালিয়ে আসা এই সমস্ত রোহিঙ্গাদের ঠাঁই দেয়া হয় উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড় গুলোতে। নতুন ও পুরাতন মিলে ৩৪ টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১২ লাখেরও বেশি।
এদিকে উখিয়া-টেকনাফে গড়ে উঠা শরনার্থী শিবির গুলো থেকে রোহিঙ্গাদের চাপ কমানোর জন্য ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে এক লক্ষ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। আশ্রয়ণ-৩ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে।
কিন্তু ২০১৮ সালে যখন প্রথম তাদের স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়, কিন্তু রোহিঙ্গাদের আপত্তির কারণে তখন তাদের ভাসানচরে পাঠানো সম্ভব হয়নি।
ভাসানচর সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে এতদিন তারা ভাসানচর যেতে আপত্তি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু সরকারে তরফ থেকে নেয়া বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপের পর ভাসানচর সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হতে শুরু করে।####
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-