রোহিঙ্গাদের নিয়ে সৌদির সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগ

অনলাইন ডেস্ক •

প্রায় ৫৫ হাজার সৌদিপ্রবাসী রোহিঙ্গার বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বেশ কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে গেছে। তাদের অনেকের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আবার অনেকের সন্তান-সন্ততিও আছে। তারা বাংলাদেশের পাসপোর্টের জন্য দূতাবাস বা কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ধরনা দিচ্ছে। অন্যদিকে সৌদি সরকারও পাসপোর্ট বা বৈধ ডকুমেন্ট নেই এমন কাউকে তাদের দেশে রাখতে রাজি নয়। যেহেতু ওই ৫৫ হাজার রোহিঙ্গার সঙ্গে বাংলাদেশের পাসপোর্টসংক্রান্ত যোগসূত্র আছে, তাই সৌদি সরকার বাংলাদেশকে তাদের ফিরিয়ে আনতে বা পাসপোর্ট দিতে আহ্বান জানাচ্ছে।

সরকারের উচ্চপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ৫৫ হাজার রোহিঙ্গার বিষয়ে গত সপ্তাহে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী বছরের শুরুর দিকে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সউদের সম্ভাব্য ঢাকা সফরের সময় এ বিষয়ে সমঝোতা হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ৫৫ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে যাদের কাছে বাংলাদেশি যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) ছিল এবং মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে, তাদের এমআরপি নবায়ন বা নতুন করে দেওয়া হবে। সম্ভাব্য সমঝোতার আওতায় সৌদি সরকার তাদের পাসপোর্টের উৎস দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না। তবে যাদের কাছে হাতে লেখা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছিল, তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে পর্যায়ক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

ঢাকা ও রিয়াদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকলেই যে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে এ কথা সৌদি সরকার বলছে না। তারা বলছে, রোহিঙ্গাদের প্রতি তারা আন্তরিক। সৌদি আরবে বৈধ ডকুমেন্ট ছাড়া থাকতে পারবে না। এ ছাড়া সৌদি সরকারের নীতি অনুযায়ী, বিদেশিদের সৌদি আরবে নাগরিক হওয়ার সুযোগ নেই। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেলে ওই রোহিঙ্গারা সৌদি আরবে থাকার সুযোগ পাবে।

রোহিঙ্গারা প্রতারণার মাধ্যমে পরিচয় গোপন করে অতীতে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার এ বিষয়ে কঠোর হয়েছে। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান আগেই বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে পাকিস্তানি পাসপোর্ট দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাদের পাসপোর্টে সুনির্দিষ্টভাবে লেখা ছিল যে তারা পাকিস্তানের নাগরিক নয়।

মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সৌদি আরব আন্তরিক। তবে অপরাধীদের ব্যাপারে সৌদি আরবের কঠোর অবস্থান রয়েছে। অন্য দেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে অবস্থানকালে কোনো রোহিঙ্গা যদি গুরুতর অপরাধ করে ধরা পড়ে সে ক্ষেত্রে পাসপোর্ট প্রদানকারী দেশে তাকে ফেরত পাঠানো হবে কি না সে ঝুঁকিও থাকে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্ভাব্য সমঝোতার প্রেক্ষাপটটি বিশেষ একটি পরিস্থিতি।

এদিকে গত সপ্তাহে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোওগলুও ঢাকা সফরের পর সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহানের সম্ভাব্য ঢাকা সফর নিয়েও তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আগামী ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি ওই সফর হওয়ার কথা ছিল। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের পর সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্ভাব্য ঢাকা সফর এগিয়ে আনার চিন্তাভাবনা চলছে। তুরস্ক ও সৌদি আরবের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিযোগিতা রয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহানের ঢাকা সফর হবে দ্বিপক্ষীয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তাঁর এটিই হবে প্রথম ঢাকা সফর। দ্বিপক্ষীয় এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও খবর