হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া •
বিশ্বময় পরিচিত রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়ায় ফাঁদ পেতে আছে প্রতারক চক্র। বছরের পর বছর ধরে প্রতারক চক্র অসহায় মহিলাদের স্বর্ণের বারের লোভের ফাঁদে ফেলে প্রতারিত করছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা এখানকার সহযোগীদের নিয়ে এসব সংঘবদ্ধ চক্র কয়েক বছর ধরে উখিয়ায় তৎপরতা চালাচ্ছে।
প্রতারক চক্র স্বর্ণের বার দেখিয়ে কম দামে বিক্রি করার নানান অজুহাতে প্রতারণা করছে। কয়েক বছর ধরে সিএনজিতে যাত্রী বেশে ওঠে মহিলাদের একাকিত্বের সুযোগ নিয়ে টাকার প্রয়োজনের কথা বলে কম দামে স্বর্ণের বার দিয়ে মোটা অংকের টাকা ও মহিলাদের গায়ে থাকা স্বর্ণ কৌশলে খুলে নিয়ে ফাঁদে ফেলে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে। সম্প্রতি হুমাইরা আক্তার নামে এক এনজিও কর্মী মরিচ্যা বাজার এলাকায় ব্যাংক থেকে সতেরো হাজার পাঁচশত টাকা উত্তোলন করে।
সে উখিয়া রাজাপালং এলাকায় তার ভাড়া বাসায় আসার জন্যে সিএনজিতে ওঠে। সাথে সাথে একজন পুরুষ তার সাথে পিছনের সিটে গিয়ে বসেন। অন্যজন সামনের সিটে বসতেই সিএনজি চালক গাড়ি চালিয়ে এগুতে থাকেন। কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ সামনের যাত্রী কিছু একটা পরে গেছে ভান করে সিএনজি থামায়। পরে তার কাছে বেশ কয়েকটা স্বর্ণের বার দেখিয়ে তা কম দামে বিক্রির কথা বলে দেখাতে থাকে। অমনি পেছনে বসা পুরুষ যাত্রীটি একটি স্বর্ণের বার পঁচিশ হাজার টাকায় দর-দাম করতে থাকে।
ইত্যবশরে এনজিও কর্মী হুমাইরাকে স্বর্ণের বার দেখিয়ে বিক্রি করতে অসুবিধার কথা জানিয়ে তা নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। তার এত টাকা নেই বললে, কত আছে জানতে চায়। সে সরল বিশ্বাসে সতেরো হাজার পাঁচশত টাকা আছে বলে। এই টাকাটা নিয়ে কৌশলে দুজন যাত্রী মিলে তার গলাই থাকা স্বর্ণের চেইনটা ভাগিয়ে নিয়ে স্বর্ণের বার দিয়ে ছিটকে পড়েন। শুরু হয় সিএনজি চালকের সাথে কথাবার্তা। সিএনজি চালক স্বর্ণের বারটি কোটবাজারে স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করলে অনেক টাকা পাবে বলে ওই মহিলাকে আশ্বস্থ করেন। কোটবাজারে তাকে নামিয়ে দিয়ে সিএনজি চালক দ্রুত বেগে চলে যায়। অগত্যা হুমাইরা স্বর্ণের দোকানে গিয়ে স্বর্ণের বারটি দেখালে দোকানদার এটা আসল নয়, নকল বলে জানান।
স্বর্ণাকারের কথা শুনে হুমাইরা প্রতারকের খপ্পরে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এবং এই প্রতিবেদককে গতকাল বিস্তারিত খুলে বলেন। এভাবে প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সব কিছু হারাচ্ছেন। তাই তিনি জনসচেতনতায় নিউজ করার জন্যে আহবান জানান। আমি এই ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি এখনো করেন নি বলে জানান।
বছর দেড়েক আগেও হলদিয়া পালং এলাকার এক প্রবাসীর স্ত্রী একই কায়দায় প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। থানায় অভিযোগ না করায় প্রতারক চক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। প্রতারণায় যুক্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ও স্থানীয় অপরাধী ও সিএনজি চালকরা রয়েছেন। এসব অপরাধী প্রতারক চক্র বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বা হোটেলে অবস্থান করে থাকতে পারেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেন। এ সুযোগে দেশি-বিদেশি এনজিওকর্মীরা এখানে অবস্থান করছেন। ফলে নানান দেশের নানান মানুষ বিভিন্ন কাজে অভিনব পন্থায় নানান অপরাধ কাজে লিপ্ত রয়েছেন।
এ ব্যাপারে সু-শাসনের জন্যে নাগরিক সুজনের সভাপতি সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। লোভ করা ভালো না, প্রতারণার ফাঁদে পড়োনা। কেউ থানায় অভিযোগ না করলেও বিষয়টি এড়িয়ে দেওয়া যায় না। সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার আহবান জানান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-