এ কে এম ইকবাল ফারুক,চকরিয়া •
দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে কক্সবাজারের চকরিয়ায় থানার তিনশত গজ অদুরে কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি দিদারুল হক সিকদারের বাড়ীতে চলছে ধর্ষণের বিচার।
গত ৩দিন ধরে কিশোরীকে আটক রেখে ইউপি চেয়ারম্যান এ বিচারকার্য চলছে বলে অভিযোগ করেছেন ধর্ষনের শিকার কিশোরীর পিতা সাহাব উদ্দীন। এমনকি ধর্ষনের শিকার কিশোরীর বাবাকে উল্টো ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ঘোষণা করে আগামী সোমবারের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ দেন ওই চেয়ারম্যান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে সমগ্র কক্সবাজার জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। তারপরও অভিযুক্ত ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে আগ্রহ দেখায়নি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পিতা সাহাব উদ্দিন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, কোনাখালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শহর আলী পাড়াস্থ বাড়ি থেকে এক সপ্তাহ পূর্বে তার মেয়ে রামপুরস্থ খালার বাসায় বেড়াতে আসে। প্রতিমধ্যে সাহারবিল ইউনিয়নের বাজারের দক্ষিণ পাশের বাসিন্দা লালু নামে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক যুবক তার মেয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। খবর নিয়ে জানতে পারেন, চকরিয়া পৌর শহরের চিরিংগা ষ্টেশনে একটি বাসায় ৪ দিন ধরে আটকে রেখে ইচ্ছার বিরুদ্ধে শাররীক সম্পর্কে (ধর্ষণ) জড়িয়ে পড়েন। সাহাব উদ্দিন আরো জানান, মেয়ে অপহরণ ও ধর্ষণের বিষয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় থানায় একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগের কিছুক্ষণের মধ্যে কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হকের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার কিশোরী ও ধর্ষককে থানায় হাজির করা হয়। পরে তার (চেয়ারম্যান দিদার) জিম্মায় থানা এরিয়াস্থ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গত ৩দিন ধরে আটক রেখে ধর্ষনের বিচার করে। তিনি বলেন, এলাকার চেয়ারম্যান আমার মেয়ে ও আমাকে তিন দিন ধরে আটকে রেখে বিচারের আশ্বাস দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দেয়ার চাপ প্রয়োগসহ উল্টো ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ঘোষণা করেন। স্থানীয় সচেতন মহল জানিয়েছেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চেয়ারম্যানের বাড়ি যেন নিজস্ব আদালত।
এ বিষয়ে কোনাখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শামশুল আলম বলেন, দিদার চেয়ারম্যান জোর করে ছেলে-মেয়ে দুইজনকে ধরে এনে চকরিয়া থানার উত্তর পাশের্বর বাড়ীতে আটকে রেখে ধর্ষণের শালিস বিচার বসিয়েছে। এমনকি আইনীভাবে কোন সহায়তাও পেতে দিচ্ছেনা বলে অভিভাবকের কাছ থেকে শুনেছেন। অভিযুক্ত কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল হককে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে আটক রেখে স্থানীয় চেয়ারম্যান দিদারুল হকের বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, তিনি আমার থানায় ভিকটিম সহ অভিযুক্ত ছেলেকে এনেছিল। পরে স্থানীয় ভাবে মিমাংসার কথা বলে থানা থেকে নিয়ে যায়। ধর্ষণের বিচার চেয়ারম্যান করতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিচার তিনি করতে পারেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা (নিষেধ) থাকার পরও কিভাবে ধর্ষনের বিচার করেন সে ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-