কক্সবাজার জার্নাল •
করোনাকালীন স্থবিরতা কাটিয়ে ঘর গোছাতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। তৃণমূলকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে সংগঠনকে চাঙা করে তুলতে চাইছেন নেতারা। প্রতিটি ইউনিটকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হবে। সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হবে কমিটি। এ জন্য আট বিভাগের জন্য পৃথক টিমও গঠন করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এখন জেলা-উপজেলায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। বিশেষ বর্ধিত সভা, কর্মিসভা ও উপজেলা-জেলা সম্মেলনে যোগদান করছেন। আগামী মার্চের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ সব জেলা-উপজেলার সম্মেলন করা হবে।
গত বছর যেসব জেলায় সম্মেলন করা হয়েছে, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ জোরদার করা হচ্ছে। দলীয় সূত্রমতে, সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি এখন পৌরসভার ভোট নিয়েও ব্যস্ত সময় পার করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ জন্য চলছে প্রার্থী বাছাই। দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়া চলছে। পাশাপাশি তিন ধাপের পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
সমাজে বিতর্কিত নন, গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এমন প্রার্থীদের খুঁজে বের করে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। আবার যেসব পৌরসভায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছে, সেখানে চলছে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণাও। গতকাল পঞ্চগড় পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী জাকিয়া খাতুনের পক্ষে নির্বাচনী পথসভা করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সফিক।
দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, করোনাকালীন স্থবিরতা কাটিয়ে ঘর গোছাতে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের একটি গাইডলাইন দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী নেতারা এখন তৃণমূলে ছুটে বেড়াচ্ছেন। ইতিমধ্যে অনেক জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা, কর্মিসভা হচ্ছে। নতুন বছরের শুরু থেকে আরও জোরালোভাবে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। তারা বলছেন, কোনো নেতা ঘরে বসে থাকতে পারবেন না। যাকে যে এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাকে ওই এলাকায় যেতে হবে। ভবিষ্যতে তৃণমূল থেকে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করা হবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘সাংগঠনিক কর্মসূচি ও ভোটের ব্যবস্থা দিয়েই আমরা বছর শুরু করেছিলাম। মাঝখানে করোনার কারণে দলীয় কর্মসূচি সীমিত করা হলেও করোনা, বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে ছিলাম। এটাও সাংগঠনিক কাজের অংশ বলে মনে করি। শুধু জেলা-উপজেলার সম্মেলনই সাংগঠনিক কাজ নয়। তিনি বলেন, ‘করোনার মাঝে সীমিত আকারে দলীয় কর্মসূচি পালন, কয়েকটি উপনির্বাচন এবং বছর শেষে পৌর ভোট ও জেলা-উপজেলার সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। মোটকথা, ঘর গোছানোর কাজ নিয়ে সময় পার করছি।’
বছরের শুরুতেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী আতিকুল ইসলাম এবং ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী করতে রাজধানীতে সক্রিয় ছিল দলটির শীর্ষ নেতারা। গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ভোটে দুই প্রার্থীই জয়লাভ করেন। এরপর সাংগঠনিক ভিত মজবুত করতে তৎপরতা বাড়ায় দলটি। এর অংশ হিসেবে নেওয়া হয় বেশ কিছু কর্মসূচি।
এ সময় সম্মেলন সম্পন্ন হওয়া ইউনিটগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তাগিদ দেওয়া হয়। পাশাপাশি জেলাগুলোর অসমাপ্ত সম্মেলন শেষ করা, সাংগঠনিক সফর, সদস্য সংগ্রহ অভিযান, প্রতি জেলার কমপক্ষে দুজন প্রবীণ নেতাকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সংবর্ধনা দেওয়া, জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা, প্রতিনিধি ও কর্মিসভা সম্পন্ন করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিনটি জেলা ও কমপক্ষে ১০টি উপজেলার সম্মেলন শেষ করা হয়।
৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব দেখা দিলে স্থগিত করা হয় সাংগঠনিক কার্যক্রম। মুজিববর্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও কাটছাঁট করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীর বছরে আড়ম্বরপূর্ণ ও জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি সে পরিকল্পনায় বাদ সাধে। তাই সীমিত পরিসরে গত ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে দলটি।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলীয় সভানেত্রীর বক্তব্য, জুমের মাধ্যমে বৈঠক, সামাজিক দূরত্ব মেনে সীমিত পরিসরে জাতির পিতার মাজার ও প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়। করোনার মধ্যে ১৫ এপ্রিল ধানমন্ডির কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশনা দেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ বিরতির পর ১৬ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘প্রেসিডিয়াম’র বৈঠক করা হয়।
৩ অক্টোবর সীমিত আকারে গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে দলে গতি আনতে আট বিভাগের জন্য আটটি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। এরপর জয়পুরহাট জেলা, বগুড়ার আদমদিঘী, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া, মাদারীপুরের শিবচর, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সম্মেলন শেষ করা হয়। অক্টোবর মাসে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হয়। এই সংগঠনের সম্মেলন হয়েছিল গত বছরের নভেম্বর মাসে। একই সঙ্গে অনুমোদন করা হয় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
দুই মহানগরের সম্মেলনও কেন্দ্রীয় ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগে গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর রাজশাহী মহানগর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর জেলাসহ বেশ কয়েকটি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের অনুমোদন করা হয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদের বিপরীতে উপ-কমিটিগুলোও সম্পূর্ণ করা হয়েছে। অনেকগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে কঠোর অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
১৯ নভেম্বর নরসিংদী এবং ২২ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। গত বছর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলেও কয়েকটি পদ খালি ছিল। সে পদগুলো পর্যায়ক্রমে এ বছর পূরণ করা হচ্ছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মনোনীত করা হয় পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে।
গত ২৫ নভেম্বর কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফাকে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এবং ৭ ডিসেম্বর দুজন কার্যনির্বাহী সদস্য পদে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ আজাদ ডন ও ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীমকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে ব্যস্ত সময় শুরু হয় নভেম্বর মাস থেকে। ২৮ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৫টি পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এবার বিদ্রোহীদের মনোনয়ন না দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন পৌর নির্বাচন এবং জেলা-উপজেলা সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে দলকে সুসংগঠিত করতে কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে রয়েছেন।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-