কক্সবাজারে আইনজীবী পরিচয়ে দীর্ঘদিন ওকালতি, অবশেষে ধরা খেয়ে জেলে

 

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী •

গাউন। কালো একটি জামা’র নাম। শুধুমাত্র বিজ্ঞ বিচারক ও বার কাউন্সিল থেকে সনদপ্রাপ্ত আইনজীবীরা বিচারালয়ে কর্মরত থাকাবস্থায় সেটি গায়ের উপরিভাগে পড়তে পারেন। এই গাউন পড়লেই বুঝা যায়, যিনি পড়েছেন তিনি বার কাউন্সিল থেকে একজন সনদপ্রাপ্ত আইনজীবী অর্থাৎ ‘এডভোকেট’।

বার কাউন্সিল থেকে এডভোকেটশীপ অর্জন নাকরে এই গাউন পরেই ২০১৮ সাল থেকে নিয়মিত পুরোদমে আইনপেশায় জড়িত রয়েছেন এমন একজনকে পাকড়াও করেছেন, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির ভিজিলেন্স টিম অর্থাৎ টাউট বাটপার নির্মুল কমিটি। রোববার ২০ ডিসেম্বর সকালে কক্সবাজার আদালতপাড়ায় ওকালতি কাজে ব্যস্ত থাকার সময় এই ভূঁয়া আইনজীবীকে আটক করা হয়।

ধৃত ব্যক্তির নাম ইসা রুহুল্লাহ। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মৌলভীবাজারের মাহমুদুল হাসানের পুত্র। এডভোকেট না হয়েও ভূঁয়া পরিচয়ে প্রায় তিন বছর ধরে কক্সবাজার আদালত অঙ্গন চষে বেড়িয়েছেন। এই ইসা রুহুল্লাহ কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ রুমালিয়ার ছরার এবিসি ঘোনায় এডভোকেট হিসাবে সাইনবোর্ড দিয়ে ‘এডভোকেট ইসা মঞ্জিল’ নামে খাস জমিতে বাড়ি করেছেন। এডভোকেট নাম দিয়ে রয়েছে তার ভিজিটিং কার্ড, সীল, প্যাড সহ আরো অনেক কিছু। অবৈধ ভাবে ব্যবহার করা এসব কিছুও এডভোকেট পরিচয়ধারী ইসা রুহুল্লাহ’র কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আটক এই ইসা রুহুল্লাহ কখনো ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য, কখনো কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য পরিচয় দিতো। পরে তার দেওয়া বার কাউন্সিল এর আইডি নম্বর চেক করে দেখা গেছে, সেই আইডি নম্বরটা ফারুক হোসেন নামক একজন বিচার বিভাগীয় উর্ধবতন কর্মকর্তার আইডি।

ভূঁয়া আইনজীবী উক্ত ইসা রুহুল্লাহ-কে আটক করার পর এ বিষয়ে কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) এডভোকেট মোহাম্মদ সাইফুদ্দীন বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করে টাউট ইসা রুহুল্লাহ-কে থানায় হস্তান্তর করা হয়। টাউট ইসা রুহুল্লাহ জেলা আইনজীবী সমিতিকে দিয়েছে মুছলেকা।

টাউট ইসা রুহুল্লাহ-কে আটকের বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আ.জ.ম মঈন উদ্দিন বলেন, আইনজীবী পরিচয়দানকারী আটকৃত লোক আইনজীবীও নন, আইনজীবী সহকারীও নন। সে একজন মূলত প্রতারক। আদালত পাড়ায় এসে কেউ যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য আদালত অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন রাখতেই টাউট বাটপার নির্মুলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান সমিতির সভাপতি এডভোকেট আ.জ.ম মঈন উদ্দিন।

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ বলেন, সমিতির ভিজিলেন্স টিম কক্সবাজার আদালত অঙ্গন থেকে টাউট বাটপার নির্মুল করে পরিচ্ছন্ন আইনাঙ্গন উপহার দিতে বদ্ধ পরিকর। বিচারপ্রার্থীরা যাতে প্রতারণার শিকার নাহয়, সেজন্য ভবিষ্যতেও টাউট বাটপার নির্মুলে কাজ অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

এবিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক নির্বাহী সদস্য এডভোকেট আবু মুসা বলেন, টাউট বাটপারদের কারণে গ্রামগঞ্জ থাকা আসা সাধারণ বিচারপার্থীরা চরম হয়রানী শিকার হন। সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ায় জেলা আইনজীবী সমিতির ভিজিলেন্স টিমকে তিনি সাধুবাদ জানান।

আরও খবর