জেলে ঢুকলেই নাম যাবে ডাটাবেজে, পালাতে পারবে না জামিনের আসামি

বাংলা ট্রিবিউন •

কারাবন্দিদের নিয়ে তৈরি ডাটাবেজের কাজ শেষ হচ্ছে খুব শিগগিরই। শুধু দাগি অপরাধী কিংবা দীর্ঘদিন কারাবন্দি নয়, একদিনের জন্য কারাগারে গেছে, এমন ব্যক্তির তথ্যও থাকবে। ক্লিকের ব্যবধানেই জানা যাবে কোন বন্দি কোন কারাগারে আছে, তার অপরাধের ধরন, কী কারণে কারাগারে যেতে হলো, মামলার সংখ্যা, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, আদালতে হাজিরার তারিখসহ যাবতীয় তথ্য। ওই বন্দি কতদিন ও কতবার জেল খেটেছে, থাকবে সেই তথ্যও।

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) তত্ত্বাবধানে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব এই ডাটাবেজের কাজ করছে।

ডাটাবেজ তৈরির পর জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার, বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সঙ্গে যুক্ত করা হবে ডাটাবেজটি। এতে জামিনে বেরিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পথও বন্ধ হবে।

ডাটাবেজের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে কারাবন্দি মানেই কিন্তু অপরাধী নয়। আদালতের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে অপরাধী বলা যায় না। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের ডাটাবেজ আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একবার যাকে গ্রেফতার বা আটক করবে, তার তথ্য ডাটাবেজে চলে যাবে।

ডাটাবেজে বন্দির ছবি, বায়োমেট্রিক ছাপ, চোখের মনির স্ক্যান ও আগের অপরাধের রেকর্ডসহ সব তথ্য রাখা হবে। এতে বন্দির নিরাপদ আটকের বিষয়েও স্বচ্ছতা আসবে। জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যারা কারাগারে গেছে, তাদের নজরদারিতে রাখাও সহজ হবে। এ ছাড়া, কোন কারাগার থেকে কতজন বন্দিকে আদালতে হাজিরা দিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সঠিকভাবে তাদের কারাগারে ফেরত নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে কিনা, তাও জানা যাবে।

প্রত্যেক কারাবন্দির আলাদা প্রোফাইল তৈরি হবে এতে। এতে কোন বন্দির জন্য কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন, সেটাও সহজে জানানো যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। নিয়মিত বন্দির সংখ্যা এখন ৮০ থেকে ৯০ হাজারের মধ্যে ওঠানামা করে।

কারা অধিদফতর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালের জুন থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এবং গাজীপুর জেলা কারাগারে পাইলট ভিত্তিতে কারাবন্দিদের ডাটাবেজের কাজ শুরু হয়।

ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমের (ইউএনওডিসি) আর্থিক সহযোগিতায় বায়োমেট্রিক তথ্য সম্বলিত এ ডাটাবেজের কাজ শুরু হয়। ওই বছরের (২০১৯) ১৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এবং গাজীপুর জেলা কারাগারে পাইলট প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার এবং জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পোও উপস্থিত ছিলেন।

এর কিছুদিন পর ডাটাবেজ তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাবকে। যার তত্ত্বাবধানে রয়েছে এনটিএমসি। অবশ্য র‌্যাব ২০১৬ সালেই নিজস্ব উদ্যোগে অপরাধীদের ডাটাবেজ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ‘র‌্যাব-প্রিজন ইনমেট ডাটাবেজ’ নামে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল। তখন এটা নিয়ে র‌্যাব অনেক দূর এগোলেও পরে নানা জটিলতায় স্তিমিত হয়ে পড়েছিল ডাটাবেজটি।

কারাবন্দিদের নিয়ে চলমান ডাটাবেজ প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন্স) কর্নেল মো. আবরার হোসেন বলেন, এটি তৈরির দায়িত্ব এখন পালন করছে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। তারা এটা র‌্যাবের মাধ্যমে করবে। মাঝে খানিকটা থেমে ছিল। পরে আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইউএনওডিসি আমাদের সঙ্গে চুক্তিতে আসে। ইতোমধ্যে ৪০ থেকে ৪৫টি কারাগারে কারা কাজ শেষ করেছে। বাকিগুলোর কাজও দ্রুত শেষ হবে।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিএমসি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান বলেন, ডাটাবেজের কাজ চলছে দ্রুত। আশা করছি তিন মাসের মধ্যে শেষ হবে।

তিনি আরও বলেন, মানুষ জেলে গেলেই অপরাধী হয়ে যায় না। যতক্ষণ পর্যন্ত বিচারের মাধ্যমে কেউ অপরাধী হিসেবে স্বীকৃত না হবে, ততক্ষণ কিন্তু সে অপরাধী নয়। তাই এ ডাটাবেজে নাম থাকা মানেই ওই ব্যক্তি অপরাধী নয়। অনেক দেশেই প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেসব মানুষকে আটক বা গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়, তাদের ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা হয়। তাছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রসহ দেশের অন্যান্য যত ডাটাবেজ আছে, সবগুলোর সঙ্গেই আমাদের সংযোগ আছে। সেগুলোর সঙ্গে এই ডাটাবেজেরও সংযোগ থাকবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব অধিদফতরকেই ডিজিটালাইজড করার কাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে কারাবন্দিদের এই ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে। আশা করি এটি ভালো ফল বয়ে আনবে।

আরও খবর