নিজস্ব প্রতিবেদক : ইয়াবা কারবারি’ নিয়ে বহুলভাবে সমালোচিত কক্সবাজার-০৪ আসনের ( উখিয়া-টেকনাফ ) সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে পিতা দাবি করে টেকনাফের ২৭ বছর বয়সী এক যুবক আদালতে মামলা দায়ের করেছে।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ১৪ জানুয়ারী বিবাদীকে স্বশরীরে হাজির হয়ে জবানবন্দি দেয়ার আদেশ দিয়েছেন।
তবে এ নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর বদির কাছে জানতে চাইলে “সাংবাদিকদের প্রতি কাটাক্ষমূলক মনোভঙ্গি প্রকাশ করে” আদালতের নথিপত্র হাতে আসার পর বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করবেন জানিয়েছেন।
বাদীর আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সহ সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, রোববার দুপুরে টেকনাফের সহকারি জজ মো. জিয়াউল হকের আদালতে এ মামলাটি দায়ের হয়েছে। যার নম্বর-১৪৯।
এজাহারে বাদী মোহাম্মদ ইসহাক (২৭) ঠিকানা উল্লেখ করতে গিয়ে পিতার নাম লিখেছেন আব্দুর রহমান বদি। যাকে জাতীয় সংসদের কক্সবাজার-৪ আসনের ( উখিয়া-টেকনাফ ) সাবেক সংসদ সদস্যকে হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ঠিকানা লিখেছেন টেকনাফ পৌর এলাকার কায়ুকখালী পাড়া।
তবে তিনি বদিদের পারিবারিক এক সময়কার মিস্ত্রী মোহাম্মদ ইসলামের সংসারে লালিত-পালিত হয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয় এজাহারে। যার সঙ্গে বাদীর মা সুফিয়া খাতুনের দ্বিতীয় বার বিয়ে হয়।
বাদী বর্তমানে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বিসিক শিল্প এলাকা সংলগ্ন দক্ষিণ মুহুরী পাড়ায় বসবাস করেন।
বিবাদী আব্দুর রহমান বদি টেকনাফ পৌর এলাকার চৌধুরী পাড়ার মৃত এজাহার মিয়া ওরফে এজাহার কোম্পানীর ছেলে। তিনি উখিয়া-টেকনাফ আসনের ২ বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। একই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আকতার চৌধুরী তার স্ত্রী।
মামলায় দুই নম্বর মূল-বিবাদী করা হয়েছে বদির চাচা পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলামকে।
বাদীর আইনজীবী কফিল উদ্দিন বলেন, উখিয়া-টেকনাফ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে পিতা দাবি করে বাদী মোহাম্মদ ইসহাকের দায়ের মামলা আমলে নিয়ে বিবাদীর বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। মামলার মূল বিবাদীকে আগামী ১৪ জানুয়ারী স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে জবাববন্দি দিতে সমন জারি করেছেন।
এজাহারের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ” পিতৃত্ব প্রমাণের জন্য প্রয়োজনে বাদী-বিবাদী উভয়ের ডিএনএ পরীক্ষা করতে বাদী আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। “
বিবাদী যদি বাদীর দাবি অস্বীকার করেন তখনই উভয়ের ( বদি ও ইসহাক ) ডিএনএ পরীক্ষার প্রশ্ন আদালতের বিষয় হিসেবে দাঁড়াবে এমন মন্তব্য করেন বাদীর আইনজীবী কফিল।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির প্রথম স্ত্রী সুফিয়া খাতুন মামলার বাদী মোহাম্মদ ইসহাকের মা। গত ৩০ বছর আগে সুফিয়ার পিতা আবুল বশরের বাড়ী টেকনাফ পৌর এলাকার ইসলামাবাদ ধুমপাড়ায় ছিল। তখন আবুশ বশর সৌদি আরবে প্রবাসে থাকাকালীন সুফিয়ার মা খতিজা বেগম সন্তানদের নিয়ে বাড়ীতে থাকতেন। এমতাবস্থায় ওই সময়ে তার বাড়ীতে কয়েকবার ডাকাতি সংঘটিত হয়। এ ব্যাপারে বদির পিতা তখনকার টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান এজাহার কোম্পানীর কাছে সুফিয়ার পরিবার বিচার দেন।
” এ নিয়ে তখনকার ইউপি চেয়ারম্যান এজাহার কোম্পানীকে বতস ভিটা বিক্রয় করে অন্যত্রে বসবাসের পরামর্শ দেন। এমন কি বাড়ী-ভিটে বিক্রয় করতে না পারা পর্যন্ত এজাহার কোম্পানীর টেকনাফ পৌর এলাকার অলিয়াবাদস্থ নিজ বাড়ী কাচারী ঘরের সম্মুখের জায়গায়ও অস্থায়ীভাবে পরিবার নিয়ে আবুল বশর-খতিজা বেগম দম্পতিকে বসবাসের ব্যবস্থা করে দেন। এতে বিগত ১৯৯০ সালের প্রথম দিক থেকে তারা সেখানে বসবাস করতে শুরু করেন। “
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ” আব্দুর রহমান বদির পিতা এজাহার কোম্পানীর একাধিক স্ত্রী ছিলেন। তারা সন্তানদের নিয়ে আলাদা বাড়ীতে থাকতেন। বদি এজাহার কোম্পানীর প্রথম স্ত্রীর সন্তান। সন্তানরা সহ বদির মা তখন টেকনাফের অলিয়াবাদস্থ বাড়ীতে থাকতেন। তে বদির পরিবারের সঙ্গে সুফিয়া খাতুনের পরিবারের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠে। এই সুবাদে বদি ও সুফিয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সুফিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেন বদি। ওই সময় সুফিয়ার পিতা আবুল বশর সৌদি আরবে অবস্থান করার পাশাপাশি বদির পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় নিরাশ্রিতের আশংকায় গোপন বিয়েতে রাজী হন। “
” এতে বিগত ১৯৯২ সালের ৫ এপ্রিল এজাহার কোম্পানীর বাড়ীর দারোয়ান এখলাস মিয়া ও অন্য দুই জন অপরিচিত ব্যক্তির স্বাক্ষীর উপস্থিতে পরিবারের অন্য সদস্যদের অজ্ঞাতসারে বদি বিয়ে করেন সুফিয়া খাতুনকে। তাদের বিয়ে পড়ান বদির পিতার মালিকাধীন টেকনাফ পৌর এলাকাস্থ আবাসিক ‘হোটেল নিরিবিলির’ এবাদতখানার তখনকার ইমাম মৌলভী আব্দুস সালাম। কিন্তু পরবর্তীতে বদি বিয়ের কাবিননামা রেজিস্ট্রির প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পূরণ করেননি। তাদের মধ্যে গোপন বিয়ের বিষয়টি বদির সৎমাতা রহিমা খাতুন ও বড় বোন শামশুন্নাহার অবগত ছিলেন। বিয়ের পর থেকে বদি-সুফিয়া দম্পতি দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। এক পর্যায়ে সুফিয়া খাতুন সন্তান সম্ভাবা হন। “
এজাহারে বাদী ইসহাক দাবি করেছেন, সুফিয়া খাতুন সন্তান সম্ভাবা হওয়ার বিষয়টি জানার পর থেকে বিবাদী বদি পরিবারের অজ্ঞাতে গোপনে বিয়ে করায় গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এমন কি বাদীর মাকে প্রাণনাশেরও হুমকী দেয়া হয়। এরপর বাদীর নানী খতিজা বেগম বিষয়টি বদির পিতা এজাহার কোম্পানীকে অবহিত করেন। কিন্তু সুকৌশলী তখনকার ইউপি চেয়ারম্যান এজাহারও হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, সুফিয়াকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে হবে নতুবা তার ( এজাহার ) বাড়ীর মিস্ত্রী মোহাম্মদ ইসলামকে বিয়ে করতে হবে বলে হুমকী দেন। এতে কোন উপায়ান্তর না দেখে বাদীর নানী ও মা গর্ভের সন্তান রক্ষায় মোহাম্মদ ইসলামের সঙ্গে বিয়েতে রাজী হন।
” এজাহার কোম্পানীর হুমকীতে বিগত ১৯৯৪ সালের ৪ এপ্রিল মোহাম্মদ ইসলামের সঙ্গে সুফিয়া খাতুন দ্বিতীয় বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এজাহার কোম্পানীসহ অন্যান্য স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে ওই বিয়েও পড়ান মৌলভী আব্দুস সালাম। “
বাদী ইসহাক আরো বলেন, ” সুফিয়ার দ্বিতীয় স্বামী মোহাম্মদ ইসলামের সঙ্গে বিয়ের ৫ মাস পরেই গত ১৯৯৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বাদী ইসহাক জন্মগ্রহণ করেন। পরে সুফিয়া-ইসলাম দম্পতির সংসারেই ইসহাক লালিত-পালিত হন। “
সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি বদিকে পিতা দাবি করে ইসহাক বলেন, ” ইসহাক তার মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে জন্ম নিলেও বদির ঔরশজাত সন্তান। বাদীর চেহারা ও দৈহিক গড়ন বদির সঙ্গে ৯০ শতাংশ মিল রয়েছে। তাদের ( বদি ও ইসহাক ) উভয়ের শরীরের ডিএনএ পরীক্ষা করলে পিতৃত্বের বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবে। “
শুধুমাত্র পিতৃত্বের স্বীকৃতিটুকু পেতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন উল্লেখ করে মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ” আমি শুধুমাত্র পিতৃত্বের স্বীকৃতিটাই দাবি করছি। আমার পিতার ( বদি ) কোন ধরণের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের লোভ এবং তার সম্মানহানির করার কোন উদ্দ্যেশে আদালতের দ্বারস্ত হননি। “
এ ব্যাপারে কক্সবাজার-০৪ আসনের ( উখিয়া-টেকনাফ ) সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির সঙ্গে কথা বলতে সাংবাদিক পরিচয় দিতেই তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠার মত মনোভঙ্গি প্রকাশ করেন।
বদি বলেন, ” তাকে ( বদি ) পিতৃত্ব দাবি করে কেউ মামলা করেছে তা নিয়ে সাংবাদিকদের এতো মাতামাতি করার কি আছে? এতে সাংবাদিক কি অসুবিধা? দুনিয়ায় এতো খবর থাকতে সাংবাদিকদের কি তাকে ছাড়া আর কোন কাজ নেই? “
এসময় বদি সাংবাদিকদের মানুষের সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রচার করার পরামর্শ দেন।
সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, ” তার ( বদি ) বিরুদ্ধে পিতা দাবি কেউ মামলা করে থাকলে আগে আদালতের নথিপত্র পাওয়ার পর এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন। “
বদির কাছে মামলার বাদীর দাবি সত্যতা কিনা জানতে চাইলে বলেন, তিনি ( বদি ) মামলার বাদী মোহাম্মদ ইসহাককে সন্তান নয় এমনটিও অস্বীকার করে কোন ধরণের মন্তব্য করেননি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-