যে কারণে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ

ডেস্ক রিপোর্ট •


কোভিড-১৯ মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক সমাপনী পর্বে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষা এখনো শুরু হয়নি। ফলে এসব শিক্ষার্থী পিএসসি ঘোষিত ৪৩তম বিসিএস এ আবেদনের যোগ্যতা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে আন্দোলনও করছেন শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে এসব শিক্ষার্থীর বিসিএস’র আবেদনের যোগ্যতা পূরণে স্নাতক সমাপনী পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা শুরুর সম্ভাব্য তারিখও ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনসহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৪৩তম বিসিএস’র আবেদনের সময় বৃদ্ধির জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)’র সঙ্গে যোগাযোগও করছেন।

এ বিষয়ে নিজেদের করণীয় ঠিক করতে এক ভার্চ্যুয়াল সভা করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুম অ্যাপে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে ফেডারেশনভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শুরুর আগে ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, আমরা চাচ্ছি স্নাতক সমাপনী পর্বে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়ে নিতে। তাহলে তারা বিসিএস এ আবেদন করতে পারবেন। এজন্য আমরা শিক্ষকরা বসছি। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো কিভাবে স্নাতক সমাপনী পর্বে অধ্যয়নরত যাদের কোর্স শেষ হয়েছে তাদের পরীক্ষা নেয়া যায়। আমরা চাই পরীক্ষা নিয়ে নিতে। কারণ পরীক্ষা না নিলে এসব শিক্ষার্থীরা একটি বিসিএস থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে এই বিষয়ে কথা বলেছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে। সবাই পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে পজেটিভ। আমাদের শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভায় শিক্ষকরা মতামত দেবেন। তারপর সে সিদ্ধান্ত হয় সেটি নিয়ে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এরপর প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের সুবিধা মতো পরীক্ষা নেবে।
অধ্যাপক ভূঁইয়া আরো বলেন, আমরা এ বিষয়ে ইতিমধ্যে পিএসসি’র সঙ্গেও কথা বলেছি যেন এসব শিক্ষার্থীরা আবেদন থেকে বঞ্চিত না হয়। তারাও ইতিবাচক। তাই আমরা চাই দ্রুত চূড়ান্ত পরীক্ষাটি নিয়ে নিতে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, চলমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে তারা একটি বিসিএস থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন। তাই তারা চান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অন্তত স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্ন্নাতক শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা যেন নিয়ে নেয়। অন্যদিকে পিএসসি’রও সার্বিক দিক বিবেচনা করে আবেদনের সময়সীমা বাড়ানো উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-২০১৭ সেশনের শিক্ষার্থী স্নিগ্ধা দেবনাথ বলেন, চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা যাদের হয়ে গেছে, তারা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে। আমাদের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, করোনার কারণে একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করতে পারিনি। যার কারণে আমরা ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষাটি ধরতে পারছি না। এটি নিয়ে আমরা খুবই হতাশায় ভুগছি, প্রশাসন যদি আমাদের এই বিষয়টি মানবিকভাবে দেখে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নেয় এবং সরকারও যদি বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের সময়সীমা বৃদ্ধি করে, তাহলে হতাশার জায়গাটি কাটিয়ে উঠতে পারবো।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফোরকানুল আলম বলেন, অসমাপ্ত পরীক্ষাসমূহ নেয়ার দাবিতে টানা তিন মাস আন্দোলনের পর প্রশাসন পরীক্ষার অনুমতি দিলেও এখনো কোনো ডিপার্টমেন্ট পরীক্ষার নোটিশ দেয়নি। এর মধ্যে ডিসেম্বরে ৪৩তম বিসিএস এবং জানুয়ারিতে ১৪তম জুডিশিয়ারির সার্কুলার আসছে। শিক্ষকদের অবহেলার কারণে আমাদের পরীক্ষাগুলো সমাপ্ত না হলে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় চলতি মাসের ২৬ তারিখ থেকে স্নাতক সমাপনী ও মাস্টার্সের পরীক্ষা শুরু হবে। এরপর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় কোভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসনকল্পে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ/ইনস্টিটিউট নিজ নিজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও উপস্থিতি নিশ্চিত করে বিভিন্ন পরীক্ষা গ্রহণ করবে; শিক্ষার্থীদের ইনকোর্স/মিডটার্ম/টিউটোরিয়াল পরীক্ষা অনলাইনে অ্যাসাইনমেন্ট/মৌখিক/টেকহোম পদ্ধতিতে নেয়া হবে; অগ্রাধিকারভিত্তিতে অনার্স শেষবর্ষ ও মাস্টার্স-এর পরীক্ষাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আগামী ২৬শে ডিসেম্বর ২০২০ তারিখ থেকে অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিভাগ/ইনস্টিটিউট থেকে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার সময়সূচি জানতে পারবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে প্রয়োজনে পরীক্ষাসমূহ তুলনামূলক কম বিরতিতে বা একইদিনে দু’টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার সময়কাল হবে বিদ্যমান নির্ধারিত সময়ের অর্ধেক। একইভাবে ল্যাব-কেন্দ্রিক ব্যবহারিক পরীক্ষাসমূহ নেয়া হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২০শে ডিসেম্বর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) স্নাতক ৪র্থ বর্ষের ২য় সেমিস্টার ও স্নাতকোত্তর ২য় সেমিস্টারের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গত সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে ‘ডিনস কমিটি’র এক সভায় পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও স্নাতক শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে এ বিষয়ে নির্দেশনাও দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সালামত উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ৪৩তম বিসিএস’র ফরম পূরণের শেষ সময়ের আগেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ/ইনস্টিটিউটের স্নাতক শেষ বর্ষের পরীক্ষাগুলো নিয়ে নিতে। এছাড়াও শিগগিরই একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকে স্নাতক শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান বলেন, স্নাতক শেষ বর্ষের পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হবে। একাডেমিক কাউন্সিলেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। স্নাতক শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষার বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। শিগগিরই তারা এ বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা করে নিজেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিরা।

আরও খবর