নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কাল (১০ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার কক্সবাজার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন পর্যটন গলফ মাঠে পর্দা উঠছে ২০২০-২০২১ সালের শিল্প ও বাণিজ্য মেলার।
এরমধ্যে মেলার আয়োজকরা যাবতীয় সকল প্রস্তুুতি সম্পন্ন করেছে । এখন শুধু মেলা উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেলার আয়োজন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল ও চিকিৎসক সমাজ।
তবে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য বিধি মানার শর্তেই মেলার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছারের আবেদনের প্রেক্ষিতে মেলার অনুমতি দেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা’র গত ৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত স্বারক নং-০৫-২০.২২০০.১১০.০১.০০১.২০.১৩০৮ এ অনুমতি পত্র দেন। নুরুল আবচারের পক্ষে মেলার আয়োজন করছেন অন্যরা। আগামি ১০ডিসেম্বর ২০২০ থেকে আগামী বছরের ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৫ দিন মেলা চলবে।
এদিকে মেলা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারী উদ্দ্যোক্তারাও।
তারা বলেন, করোনার সংক্রমণ ছড়াতে পারে আশংঙ্কা করে সাম্প্রতিক কক্সবাজারের নারী উদ্দ্যোক্তাদের এবার মেলার আয়োজনের অনুমোদন দেয়নি জেলা প্রশাসক। অথচ নারী মেলায় লোক সমাগম হয় কম। অপরদিকে শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় এক সাথে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হওয়ার আশংঙ্কা রয়েছে । জেলা প্রশাসন সেটি আমলে না নিয়ে মেলার অনুমতি দিয়ে স্ববিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। তারা প্রশ্ন তুলেন, কার স্বার্থে করোনা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা?
করোনায় দ্বিতীয় ঢেউ মাথায় নিয়ে মেলার আয়োজনে নিয়ে স্বয়ং জেলা প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
যদিও আয়োজকরা বলছে, মেলায় মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। প্রবেশ গেইটে বসানো হবে ২টি জীবাণুমুক্তকরণ মেশিন। মেলা ঘিরে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। ৩২টি সিসি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে সবকিছু।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজারের কয়েকজন চিকিৎসক নেতা বলেন, শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে বিশ্বময় বাড়তে শুরু করেছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। উন্নত দেশগুলোতে ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে মৃত্যুর হারও। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আতংক বিরাজ করছে বাংলাদেশেও। এ অবস্থায় শিল্প ও বাণিজ্য মেলা করোনার প্রকোপ দেখা দিতে পারে। তাই বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, করোনা প্রতিরোধ করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। স্বাস্থ্যবিধি না মানা লোকজনকে আনা হচ্ছে সাজা ও জরিমানার আওতায়। এমনই পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে দেড় মাস ব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলার অনুমতি আমাদের অবাক করেছে। এতে প্রশাসনের অনেকে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়া নিয়ে চরম আতংক রয়েছে।
সচেতন মহলের মতে, কক্সবাজার সৈকতের খোলামেলা এলাকার চেয়ে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বন্দি লোকজনের মাঝে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি। মেলা এমনই একটি আয়োজন। বাচ্চাদের মেলায় আনা হবে চরম বিপদ। অথচ শিশু কিশোররা বেশি বায়না ধরবে মেলায় আসতে।
‘আমরা কক্সবাজারবাসি’ সংগঠনের সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন জানান, করোনা মোকাবেলায় সরকার নানাবিধ ব্যবস্থা নিয়েছে। শীতকালিন সময়ে করোনা বৃদ্ধির আশঙ্কায় সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন সরকার। এ অবস্থায় মেলার আয়োজন সব সফলতাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। তাই কক্সবাজারকে করোনামুক্ত করতে মেলা বন্ধ রাখা প্রয়োজন মনে করছি।
কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল বলেন, শীতকাল শুরু হওযার আগেই করোনা বৃদ্ধির আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আমরাও সে মতে কাজ করছি। মেলার বিষয়টি জানার পর কোভিড-১৯ রোগী বাড়ার আশঙ্কায় আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়েকে মেলা বন্ধ রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ জানিয়েছি। এরপরও যদি মেলা চলমান থাকে, যদি করোনা রোগী বৃদ্ধি পায় তবে সব দায়ভার জেলা প্রশাসনকে নিতে হবে।
মেলার অনুমতি প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, প্রতিদিন সৈকতে হাজার হাজার লোক সমাগম হচ্ছে। সেই হিসেবে আমাদের করোনা সংক্রমণ কম। তাছাড়া লকডাউন না থাকায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয় মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের শর্তে মেলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার পরও যদি করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ে তখন মেলা বন্ধ করে দেয়া হবে।
কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্য মেলা পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান সাহেদ কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্য মেলা পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান সাহেদ আলী সাহেদ জানান, করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলায় প্রবেশ করতে অবশ্যই মাস্ক থাকতে হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-