উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে অন্তত ৪ হাজার রোহিঙ্গাকে আগামী এক মাসের মধ্যে ভাসানচরে স্থানান্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
মূলত স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক এমন রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রথম দফার এ তালিকা তৈরী করা হয়েছে। তবে প্রথম দফায় ভাসানচর যেতে ইচ্ছা পোষণকারি রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
এ নিয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে নানা প্রস্তুতিও সম্পন হয়েছে বলে মঙ্গলবার বিকালে কক্সবাজারস্থ শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যবাসন কমিশনার কার্যালয়ের বিশ্বস্ত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
স্বেচ্ছায় যেতে সম্মতি প্রকাশকারি রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যবাসন কমিশনার কার্যালয়ের সূত্রটি জানিয়েছেন, আগামী এক মাসের মধ্যে প্রথম দফায় অন্তত ৪ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে নানা প্রস্তুতি চলছে।
স্বেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের উদ্ধৃতি দিয়ে সূত্রটি বলেছেন, রোহিঙ্গারা মনে করছে ক্যাম্পের ঘিঞ্জি ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশের চেয়ে ভাসানচর অনেকটা উন্নত আর নিরাপদ হবে। তাছাড়া গত কয়েক মাস ধরে সক্রিয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের জেরে ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করা সাধারণ রোহিঙ্গাদের জন্য অনিরাপদ হয়েছে উঠেছে। এতে ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা নিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গারা শংকিত ও আতংকিত। এ কারণে অনেক রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ে ভাসানচরকে নিরাপদ মনে করছে।
কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় সূত্রটি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে নোয়াখালীর ভাসানচরে আরআরআরসি এর একটি সাব-অফিস স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া কয়েকটি এনজিও’র অফিস স্থাপনের কাজও চলমান রয়েছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত ২৩ টি এনজিও’র একটি প্রতিনিধি দল ভাসানচর পরিদর্শন করে এসেছে।
ভাসানচর ঘুরে আসা এসব এনজিও’র প্রতিনিধি দলের সদস্যরা মনে করছেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে অবকাঠামো তৈরী করা হয়েছে তা মানুষের বসবাসের জন্য উপযোগী, বেশ উন্নত, টেকসই ও মনোমুগ্ধকর। সেখানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে বসবাস করার মত নিরাপদ ও উপযুক্ত পরিবেশ বিরাজমান রয়েছে।
সম্প্রতি ভাসানচর ঘুরে আসা এনজিও প্রতিনিধি দলের সদস্য ও গ্লোবাল উন্নয়ন সেবা সংস্থার পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম ব্যক্তিগত মতামত দিয়ে বলেন, ভাসানচরে নৌ-বাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের জন্য যে অবকাঠামো তৈরী হয়েছে তা বেশ উন্নত, স্বাস্থ্য সম্মত ও টেকসই। এসব স্থাপনা যে প্রাকৃতিক দুযোর্গ মোকাবিলা করতে সক্ষম। সেখানে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ রয়েছে যা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘিঞ্জি পরিবেশের চেয়ে উন্নত। সেখানে মানুষের বসবাসের নিরাপদ ও উপযোগী পরিবেশ রয়েছে।
একই ধরণের মন্তব্য করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এফডিএনএম প্রকল্পের পরিচালক নাসিমা ইয়াসমিন বলেন, ভাসাানচর আয়তনের দিক দিয়ে টেকনাফের সেন্টমার্টিনের চেয়ে অনেক বড়। দ্বীপটির চারপাশে নিরাপত্তার জন্য যে বাঁধ তৈরী করা হয়ে তা যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকবিলা করতে সক্ষম। এছাড়া সেখানে নির্মিত অবকাঠামোগুলো উন্নত প্রযুক্তির ও টেকসই হওয়ায় মানুষের বসবাসের জন্য নিরাপদ।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অল্প জায়গায় অনেক মানুষ যেভাবে গাদাগাদি করে থাকে ভাসানচরে তার চেয়ে উন্নত পরিবেশ থাকার তথ্য জানিয়ে ভাসানচর ঘুরে আসা এ এনজিও নারী কর্মকর্তা বলেন, ভাসানচরে অনায়াসে এক লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করতে পারবে। এছাড়া সেখানে স্থানান্তর হওয়া রোহিঙ্গারাও স্বাস্থ্য সম্মত ও নিরাপদ পরিবেশে অবস্থান করতে পারবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-